বিবাহের আশীর্বাদ হয় চলতি বছরের পহেলা মে। তার ঠিক ৪ দিন পর অন্ত কুন্ডুর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে পরিবারটিতে চলছে শোকের মাতম। ঝিনাইদহ পৌর এলাকার স্টেডিয়াম পাড়ার বাসিন্দা দিপন কুমার কুন্ডু অন্ত (২৭)।
সংসারে মাকে নিয়ে তিনি বসবাস করতেন। তার বড় ভাই দ্বীপক কুমার কুন্ডু শহরের কলাবাগান পাড়ায় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করেন। তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে শহরের নতুন হাটখোলায়। সেখানে তারা দুই ভাই তাদের নিজ নিজ দোকানে ব্যবসা করেন। বাবার রেখে যাওয়া প্রতিষ্ঠানটিতে দুই ভাই মিলে ভালই চলছিল তাদের ব্যবসা।
গত প্রায় ৭ বছর আগে পিতার মৃত্যুর পর অন্ত গড়ে তোলেন ঝিনাইদহ কামনা পাখি ঘর। তীলে তীলে করে জমানো টাকা দিয়ে শহরের টার্মিনাল এলাকায় কিনেছিলেন ৪ শতাংশ জমি। তার মধ্যে ভালোবাসার প্রিয় তমার নামে অর্ধেক এবং বাকি অর্ধেক অন্ত এর নামে কিনেছিলেন। বানিয়ে দিয়েছিলেন হবু বউকে তিন ভরি সোনার গহনা। চলতি মাসের ২৩ মে বিবাহের পিঁড়িতে বসার কথা ছিল তাদের। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস একটি ভুলে সবকিছু তছনছ হয়ে যায়। ভুল ছিল শুধু তার প্রিয় তমাকে বিশ্বাস করা। পারিবারিকভাবে বিবাহের মাধ্যমে নববধুকে নিয়ে তিনি তার ঘরে উঠানোর সকল প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।
দিপন কুমার কুন্ডু অন্ত’র দাদা দ্বীপক কুমার কুন্ডু জানান, আমার ছোট ভাই সাড়ে তিন বছর ধরে ঝিনাইদহ শহরের মহিলা কলেজ পাড়ার মনি কুমার কুন্ডুর কন্যা চৈত্রী কুন্ডুর সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়। বিষয়টি জানাজানি হলে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ের কথা ফাইনাল করা হয়। চলতি বছরের পহেলা মে তাদের আশীর্বাদ সম্পন্ন করা হয়। একই মাসের ২৩ তারিখ বিবাহের দিন ধার্য করা হয়। হঠাৎ জানতে পারি আমার ভাই অন্ত মারা গেছে। তার লাশ ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে রয়েছে। বাবা মারা যাওয়ার ৫ বছর পর শহরের কলাবাগান বাসা থেকে ছোট ভাই অন্ত ও মা কামনা রানী কুন্ডু শহরের স্টেডিয়াম পাড়ায় ভাড়া বাসায় থাকতো। সেখানে থেকে অন্ত এই মেয়ে ও তার পরিবারের মাঝে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয় করেন। এমনকি চৈত্রীর বাবার যে বাড়ি তার দুই তলা সবই করে অন্ত এর টাকায়। কথা ছিল ২য় তলার মালিক হবে তারা নতুন দম্পত্তি। শহরের কসমেটিক ব্যবসায়ী রাজুর দোকানে লক্ষাধিক টাকার মালামাল কিনেছে চৈত্রী। সম্পর্র্কের এ যাবৎ কাল তিনি অসংখ্য টাকা ব্যয় করেছে চৈত্রী ও তার পরিবারের পেছনে। শহরের টার্মিনাল এলাকায় ৪ শতক জমি কিনে অন্ত। তারমধ্যে চৈত্রীর নামে ২ শতক জমি কিনে দিয়েছেন অন্ত।
তিনি আরও জানান, বিয়ের দিন ধার্য করা হলে তারা শুধু সময় ক্ষেপন করে থাকে। এ নিয়ে অন্ত এবং চৈত্রীর পরিবারের সাথে নানা রকম ঝামেলার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও মৃত্যু নিয়ে রয়েছে নানা ধোঁয়াসা। কারণ মৃত্যুর সময় চৈত্রীর ভাই মুক্ত কুন্ডু সাথে ছিল। তাদের সাথে থাকার সময় অন্ত অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমরা কিছুই জানি না। তারা হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে পালিয়ে যায়। আজ পর্যন্ত অন্ত’র ব্যবহৃত মোবাইল ও আশীর্বাদ অনুন্ঠানে দেওয়া সোনার চেইন ও সাথে থাকা টাকাসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আমারা কিছুই পায়নি। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার চাই।
অন্তুর মা কামনা রানী জানান, আমি বাসায় এসে দেখি আমার ছেলে দিপন কুমার কুন্ডু অন্ত ও চৈত্রীর ভাই মুক্ত কুন্ডু ঘরের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। তাদেরকে বলি আমি তোর খালা বাড়ি যাব। তোরা দোকানে যা। একথা বলে ঘরে তালা দিয়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি। পরে চৈত্রীর বাবা ফোন কল করে জানায় যে আপনি আপনার বাসার সামনে আসেন। তখন আমি বাসার সামনে আসলে আমাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে যেতে বলে। অন্তুর মা আরও জানান, হাসপাতালে গেলে তার কিছুক্ষন পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক অন্ত’র মৃত বলে ঘোষনা করেন।
বিষয়টি নিয়ে চৈত্রীর পিতা মনি কুমার কুন্ডুকে খোঁজ করা হলে তারা সকলে আত্মগোপনে থাকায় তাদের কোন সাক্ষাৎকার নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ সদর থানার এস আই সাত্তার জানান, এ ঘটনায় আইনানুগভাবে সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে বিস্তারিত জানা যাবে।
বার্তা বাজার/এইচএসএস