আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দলকে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত প্রস্তুত করার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু এরই মধ্যে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় দলটিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, সংঘাত ও হানাহানি বেড়ে চলেছে।

সরজমিনে দেখা যায়, ২০০০ সালের ১৮ই আগস্ট কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ৯০ দিনের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয় জেলা আওয়ামী লীগ। দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছিল আহ্বায়ক কমিটি। আর আহ্বায়ক পদটি আগলে রেখেছিলেন এ এফ এম ওবায়দুল্লাহ। কিন্তু তাঁর হাত ধরে নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা পায়নি। বরং আওয়ামী লীগ একাধিক ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। কোন্দলের কারণে অর্ধশতাধিকবার সংঘর্ষ হয়। লাঞ্ছিত হন দলের অসংখ্য নেতা। দুবার সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়েও করা যায়নি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নূর মোহাম্মদ কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়া) আসন থেকে নৌকার টিকিটে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে রাজনীতিতে যুক্ত হন পুলিশের সাবেক আইজিপি, তাঁর বাড়ি কটিয়াদী। অন্যদিকে সোহরাব উদ্দিন পাকুন্দিয়ার বাসিন্দা। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি এ আসনের এমপি ছিলেন। তবে নূর মোহাম্মদ রাজনীতিতে আসার পর তাঁর দলীয় মনোনয়ন ও স্থানীয় রাজনীতি চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে। কেন্দ্র ও জেলা নেতাদের উপেক্ষা করে নূর মোহাম্মদ ২০২০ সালের মে মাসে পাকুন্দিয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগের একাধিক ইউনিয়ন কমিটি করলে প্রতিরোধে নামেন সোহরাব। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে কেন্দ্র থেকে এক ঘোষণায় নূর মোহাম্মদের করা সব কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। শেষে এ এফ এম ওবায়দুল্লাহ ব্যর্থতার দায় জেলা নেতাদের ঘাড়ে চাপিয়ে ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর পদ থেকে সরে যান।

দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর পর সেই আহ্বায়ক কমিটি নতুন পুর্ণাঙ্গ কমিটি উপহার দিতে না পারায় এবং আহ্বায়ক পদত্যাগ করার পর কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ বিলুপ্ত ঘোষণা করে পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটি।

বিলুপ্তির ১০ মাস পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তৃণমূল সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করার লক্ষে গত ২০২১ সালের ২২ জুলাই (বৃহস্পতিবার) বিকেলে কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির এক সভায় সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিনকে আহবায়ক করে এক সদস্যের পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়।

সোহরাব উদ্দিনকে পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মনোনীত করার প্রতিবাদে পরের দিন ২৩ জুলাই ( শুক্রবার) বেলা ১২টার দিকে কঠোর লকডাউন উপেক্ষা করে উপজেলা সদর বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশ। পরবর্তীতে ৯ সেপ্টেম্বর ৬৭ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটির অনুমোদন দেয় জেলা কমিটি। আর এই আহ্বায়ক কমিটিকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে বিক্ষোভ মিছিল করে উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশ। ওই কমিটি হওয়ার পর দুই পক্ষের নেতাকর্মীরা প্রতিটি দলীয় ও জাতীয় কর্মসূচি আলাদা পালন করে আসছেন।

কর্মসূচি পালনে কমপক্ষে ২০ বার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। এসব সংঘর্ষে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র ব্যবহারে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ জুয়েল, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ উদ্দিনসহ কয়েকশ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। মামলা হয়েছে কয়েক শত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে।

পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের জেরে ২০২১ সালের ১৫ ই আগষ্ট বিকেলে পাটুয়াভাঙ্গা শোক দিবস অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে বীর পাকুন্দিয়ায় পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড কমিশনার ও উপজেলা যুবলীগের সদস্য শফিকুল ইসলাম আরিফ ও পৌর যুবলীগ নেতা রবিউল ইসলাম ওরফে সানিকে মেরে হাত ভেঙ্গে ফেলা হয়। তারা দুই জন সাবেক সাংসদ এডভোকেট সোহরাব উদ্দিনের সমর্থক। এই হামলার মধ্য দিয়ে নূর মোহাম্মদ ও সোহরাবের অনুসারীদের দ্বন্দ্ব সহিংস রূপ নেয়। ২০২১ সালের ২৫ জুলাই সংসদ নূর মোহাম্মদের নামে বিষোদ্‌গার ও তাঁর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ এনে থানায় মামলা করেন উপজেলার এগারসিন্ধুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদেক হোসেন। মামলার ২২ আসামির সবাই ঘোষিত কমিটির আহ্বায়ক ও সাবেক সাংসদ মোঃ সোহরাব উদ্দিনের সমর্থক এবং বেশির ভাগ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের পদধারী নেতা।

পরের দিন ২০২১ সালের ২৬ শে জুলাই বিকেলে সাবরেজিস্ট্রি অফিসের সামনে চরফরাদি ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মোঃ আবদুল্লাহকে মেরে জখম করা হয়। মোঃ আবদুল্লাহ সাবেক এমপি সোহরাবের অনুসারী। এরই ধারাবাহিকতায় ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ ( বৃহস্পতিবার) বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেয়াকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিনের সমর্থকদের দু-গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে ইট-পাটকেলের আঘাতে উভয় পক্ষের অন্তত দশজন আহত হয়। এ সময় উভয় পক্ষের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরে পুলিশ টিয়ার গ্যাস সেল ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। দুপুর ১২টার দিকে পাকুন্দিয়া-মির্জাপুর সড়কে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। তবে এর আগেই বাসটি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। এ দিন আরেকবার আগ্নেয়াস্ত্রের মহড়া দেখেন পাকুন্দিয়াবাসী। একই দিনে উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক একরাম হোসেন টিপুর পাকুন্দিয়া বাজারের ঔষধের দোকান ভাংচুর করে দুর্বৃত্তরা। একরাম হোসেন টিপু সোহরাব উদ্দিনের অনুসারী।

এরপর ২০২২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি (সোমবার) সকালে আন্তর্জা‌তিক মাতৃভাষা দিবসে শহীদ মিনা‌রে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের ম‌ধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘ‌র্ষ হয়। এতে দুপক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছিলেন।
একই দিনে দুপুরে পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণের বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল চত্বরে সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট মোঃ সোহরাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে দলবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করে কমিটি থেকে ১০ প্রভাবশালী নেতা পদত্যাগ করেন।

পদত্যাগকারীরা হলেন, পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র যুগ্মআহ্বায়ক মোঃ রফিকুল ইসলাম রেনু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট হুমায়ুন কবির, জেলা শ্রমিক লীগের উপদেষ্টা আতাউল্লাহ সিদ্দিক মাসুদ, পাকুন্দিয়া পৌরসভার মেয়র মোঃ নজরুল ইসলাম আকন্দ, পাটুয়াভাঙ্গা ইউপির সদ্স্য সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ সাহাব উদ্দিন, চন্ডিপাশা ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শামছু উদ্দিন, জেলা পরিষদের সদস্য মোঃ শফিকুল ইসলাম, স্কুল শিক্ষক মোঃ শাহাব উদ্দিন, নারান্দী ইউপির নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মোঃ মুছলেহ উদ্দিন ও মোঃ শাহাব উদ্দীন।

এ আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পদ থেকে ১০ নেতা পদত্যাগ করলে তাদের স্থলে কো-অপ্ট করে ১০ জনকে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটিতে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৬ মে পাকুন্দিয়ায় আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলন নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায় দু’পক্ষ। পরে ১৯ মে আহ্বায়ক কমিটি বাতিল দাবিতে দু’পক্ষ পাল্টাপাল্টি সমাবেশও করে।

২০২২ সালের ২৩ জুন (বৃহস্পতিবার) বিকেলে উপজেলা আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন করতে গিয়ে বর্তমান এমপির অনুসারীদের সাথে উপজেলার পুলেরঘাট বাজার এলাকায় সংঘর্ষে জড়ায়আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষ। প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও মারধরের ঘটনায় সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছিল।

কিছুদিন শান্ত থাকার পর ২০২২ সালের ৫ অক্টোবর প্রায় এক যুগ পর ২০২২ সালের ৫ অক্টোবর বুধবার রাতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফয়েজ ওমান খান স্বাক্ষরিত ১৯ সদস্যবিশিষ্ট পাকুন্দিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে সাবেক সাংসদ সোহরাব উদ্দিনের অনুসারী নাজমুল আলমকে সভাপতি ও মোঃ তোফায়েল আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।

পরের দিন বৃহস্পতিবার রাতেই নবগঠিত কমিটিতে কাঙ্ক্ষিত পদ না পেয়ে দুধ দিয়ে গোসল করে রাজনীতি থেকে ইতি টানেন কমিটির ১ নম্বর সহসভাপতি ছাত্রলীগ নেতা মোঃ আরমিন। কমিটি ঘোষণার পর এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় উপজেলা ছাত্রলীগের একাংশ। নবগঠিত ছাত্র লীগের কমিটি বাতিলের দাবিতে পৌর সদর বাজারে ঝাড়ুমিছিল, আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধসহ সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রলীগের একাংশ।

দুধ দিয়ে গোসল করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল ছাত্রলীগ নেতা আরমিন আহমেদকে ২৬ নভেম্বর (শনিবার) সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার থানার ঘাট থেকে ফেরার পথে মির্জাপুর বাইপাস সড়কে কুপিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পরে পদ বঞ্চিত ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মী সাবেক সাংসদ এডভোকেট সোহরাব উদ্দিনের পক্ষ ত্যাগ করে যোগদান করে বর্তমান সাংসদ নূর মোহাম্মদের গ্রুপে।

১৩ ই নভেম্বর ২০২২(রোববার) দুপুরে পাকুন্দিয়া অগ্রণী ব্যাংকের সামনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আলহাজ্ব মকবুল হোসেন ও সুখিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা মাহবুবুর রহমান কে মারধর করে গুরুতর আহত করে ১৫ লাখ টাকা লুটের ঘটনা অভিযোগ উঠে।

২০২৩ সালের ২২ জানুয়ারি (রোববার) সন্ধ্যায় পাকুন্দিয়া বাজারে পদবঞ্চিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক ভিপি ফরিদ উদ্দিন (৪৮) আহত হয়।

২৮ এপ্রিল (শুক্রবার) দুপুরে উপজেলার হোসেন্দী বাজারের পশ্চিম পাশে নির্মাণাধীন দ্বীন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশনের সামনে পৌর যুবলীগ নেতা রবিউল ইসলাম ওরফে সানি, ছাত্রলীগ নেতা মো. জহিরুল ইসলাম ওরফে ওয়ালিদ ও রায়হান উদ্দীন ওরফে সিজানদের উপর হামলা করে দুর্বৃত্তরা। ২২ মে (সোমবার) বিকেলে পাকুন্দিয়া বাজারের মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয় এলাকায় উপজেলার পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলামের ওপর হামলা চালিয়ে তার পা ভেঙ্গে দেয় দুর্বৃত্তরা। এ সময় আলফাজ নামের আরও একজন আহত হয়েছিল।

গত ৯ জুন (শুক্রবার) রাত ৮টার দিকে পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের ভূইয়া বাজার এলাকায় হোসেন্দী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন (রফিকুল মেম্বার) ও বুরুদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন সরকার পাটুয়াভাঙ্গার দরগাহ বাজারে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিনের বাসা থেকে ফেরার পথে পাটুয়াভাঙ্গা ভূইয়া বাজার সংলগ্ন তাদের সিএনজিচালিত অটোরিকশার পথ রোধ করে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করা হয়।

শুক্রবার (২৩ জুন) দুপুর ১ টার দিকে পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ জুয়েল কে উপজেলার পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের সাঠিয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে একটি চায়ের দোকানে বসে থাকা অবস্থায় কয়েকজন সশস্ত্র দুর্বত্ত এসে তার ওপর চড়াও হয়। এ সময় সন্ত্রাসীরা উপর্যুপরি কুপিয়ে জুয়েলকে গুরুতর আহত করে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তি‌নি এম‌পি নূর মোহাম্ম‌দের সমর্থক।

এসব ঘটনায় থানায় ও কোর্টে প্রায় দেড় ডজন মামলায় আওয়ামী লীগপন্থী একাধিক জনপ্রতিনিধি সহ কয়েকশ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী আসামি। প্রায় দীর্ঘ সাড়ে ১৪ বছর ক্ষমতা থাকা অবস্থায় পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন যখন নিজের মধ্যে হামলা, মামলা ও কোন্দলে জর্জরিত তখন অন্যদিকে কেন্দ্রীয় বিএনপির হস্তক্ষেপে পাকুন্দিয়া উপজেলা বিএনপির নিজেদের কোন্দল মিটিয়ে সহযোগী সংগঠনকে নিয়ে সুসংগঠিত হচ্ছে সরকার পতনের আন্দোলনের জন্য। আর রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন এটি আওয়ামী লীগের জন্য অশিন সংকেত।

এ বিষয়ে সাবেক সাংসদ এডভোকেট সোহরাব উদ্দিনের অনুসারী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ উদ্দিন বলেন, এ পর্যন্ত হামলায় শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে, কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছে, এক ডজন মামলায় শত শত নেতাকর্মী আসামি হয়ে বাড়ি ছাড়া। দল ক্ষমতা থাকা অবস্থায় শঙ্কায় থাকি যে কোন কে সময় আক্রান্ত হই। বাড়িতে পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপন করতে পারবো না।

এ বিষয়ে বর্তমান সাংসদ নূর মোহাম্মদ এর অনুসারী জেলা পরিষদের সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন পর জেলা থেকে একটা আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হয়েছে যা স্হানীয় সাংসদের সাথে সমন্বয় করা হয়নি এবং সিনিয়র ত্যাগী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাদ দেওয়ার কারণে এই অস্থিরতা। আর যেহেতু ৯০ দিনের আহ্বায়ক কমিটি এখন দুই বছর হয়ে গেছে এখনো পুর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। জেলা ও কেন্দ্রের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এম এ আফজাল হোসেন বলেন, রাজনীতি করলে মাঠে পক্ষ প্রতিপক্ষ থাকবে, নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগীতা থাকবে যা অন্যান্য উপজেলায় আছে কিন্তু কটিয়াদিতে একটা খুন হয়েছে, অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত পাকুন্দিয়া আওয়ামী লীগে বাড়ছে হানাহানি, একাধিক বার দুই পক্ষ কে বলার পরেও শুনেনি। বিষয় টি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ কে অবগত করা হয়েছে।

বার্তাবাজার/রাহা