লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে স্ত্রী মাসু বেগমকে (২৫) শ্বাসরোধে হত্যার দায়ে স্বামী কামাল হোসেনের (৩০) যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তার ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বুধবার (২১ জুন) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোঃ রহিবুল ইসলাম এ রায় দিয়েছেন।

একই মামলায় আরও তিনজনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। তারা হলেন কামাল হোসেনের বোন নাজমা বেগম (৩৩), মা আয়েশা বেগম (৬৩), ও ভাই মোঃ বাবুল (৩৮)।

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কামাল হোসেন রামগতি পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চরসেকান্দর গ্রামের মৃত আবদুল মালেক মাঝির ছেলে। রায়ের সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। ঘটনার পর থেকেই তিনি পলাতক।

মামলার এজাহার, বাদী ও আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের দিকে জেলার কমলনগর উপজেলার চরলরেঞ্চ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত আবুল কালামের মেয়ে মাসু বেগমের সঙ্গে রামগতি উপজেলার চরসেকান্দর গ্রামের মৃত আবদুল মালেক মাঝির ছেলে কামাল হোসেনের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে দুই ছেলের জন্ম হয়। কামাল হোসেন মাসু বেগমকে বিয়ের পর আরও দুটি বিয়ে করেন।

এ নিয়ে প্রথম স্ত্রী মাসুর সঙ্গে দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। এর জেরে কামাল ও তার পরিবারের লোকজন মাসুকে প্রায় সময় নির্যাতন করতেন। এ বিষয়ে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার সালিশ বৈঠক হয়েছে। ২০২০ সালের ১২ আগস্ট বিকেলে মাসু শ্বশুরবাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন মর্মে প্রচার করে তার স্বামী ও পরিবারের লোকজন। খবর পেয়ে রামগতি থানা পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

ময়নাতদন্তে মাথায় আঘাত ও শ্বাসরোধে মৃত্যু হয়েছে মর্মে প্রতিবেদন আসে। পরে ওই বছরের ২৩ অক্টোবর মাসুর মা বিবি ছায়েরা (৫৮) বাদী হয়ে রামগতি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে মাসু বেগমের স্বামী কামাল হোসেনকে প্রধান করে শাশুড়ি আয়েশা বেগম, ননদ নাজমা বেগম, ফাতেমা বেগম, ভাশুর মোঃ বাবুল ও জামাল এবং জামালের স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে আসামি করে আরও দুই থেকে তিনজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।

হত্যা মামলাটি তদন্ত করেন রামগতি থানার সেই সময়ের উপপরিদর্শক (এসআই) মজিবুর রহমান তপাদার। তিনি ২০২১ সালের ১২ এপ্রিল আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দেন। এতে কামাল হোসেন, নাজমা বেগম, আয়েশা বেগম ও মোঃ বাবুলকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করে এবং মোঃ জামাল, ফাতেমা বেগম ও ফাতেমা বেগমকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করেন।

জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আদালতে ভিকটিম মাসু বেগমের স্বামী কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় হয়েছে। অপর তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় বেকসুর খালাস পেয়েছেন।

বার্তাবাজার/রাহা