ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর এবং সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত আহ্ববায়ক রাশেদ খানকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২০ জুন) সন্ধ্যায় এক বৈঠকে গণঅধিকার পরিষদ তাদেরকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেয়।

গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া তাদের বহিষ্কারাদেশে স্বাক্ষর করেছেন।

গণঅধিকার পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, নুরুল হক নুরের সঙ্গে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে যোগাযোগ, আর্থিক কেলেঙ্কারিসহ নানা কারণে বিরক্ত সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা। সর্বশেষ মোসাদের সঙ্গে নুরুল হক নুরের টাকা লেনদেনের বিষয়টি সামনে দলের অভ্যন্তরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। তবে বিষয়টি নিয়ে নুরের স্পষ্ট কোনো বক্তব্য না থাকায় ভালোভাবে নেননি দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।

মঙ্গলবার দিনভর দফায় দফায় বৈঠক করেন গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতারা। সভায় সংগঠনটির বেশিরভাগ যুগ্ম আহ্বায়ক, যুগ্ম সদস্য সচিব এবং কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশ নেন বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাওয়া ড. রেজা কিবরিয়া।

বৈঠকে উপস্থিত গণঅধিকার পরিষদের এক নেতা জানান, বৈঠকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া প্রায় সবাই উপস্থিত ছিলেন; যারা নুরের একনায়কতান্ত্রিক মনোভাবের কারণে বিরক্ত। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন, জেলও খেটেছেন কিন্তু দলে মূল্যায়িত হননি এমন নেতারাও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

ওই নেতা জানান, বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে নুরুল হক নুরকে বহিষ্কার করা হয়। নুরকে বহিষ্কারের পর সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহ্ববায়কের দায়িত্ব পালন করা হাসান আল মামুনকে। হাসান আল মামুন গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্বও পালন করেছেন।

উল্লেখ্য, গত রোববার সন্ধ্যায় গুলশান ২ নম্বর সেক্টরের ৫৫ নম্বর রোডের ২০ নম্বর বাড়িতে দলের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়ার বাসার ছাদে গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সংসদের বৈঠক বসে। সন্ধ্যা ৭টা থেকে শুরু হয়ে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত আড়াই ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠকে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়।

দলের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর বৈঠকে আসেন সাড়ে ৮টার দিকে। এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রেজা কিবরিয়া। তিনি বলেন, ৭টার বৈঠকে কেন সদস্য সচিব সাড়ে ৮টায় উপস্থিত হবেন? এর পর থেকেই উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় চলতে থাকে। যার রেশ থাকে শেষ পর্যন্ত। রাত ৯টা নাগাদ এক পর্যায়ে রাগ করে উঠে বাসায় চলে যান রেজা কিবরিয়া।

পরবর্তীতে এ ঘটনা সোমবার (১৯ জুন) রাতে পাল্টাপালি বিবৃতি দেন ড. রেজা কিবরিয়া এবং নুরুল হক নুর।

সোমবার রাতে গণঅধিকার পরিষদের প্যাডে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ড. রেজা কিবরিয়া জানান, রোববার (১৮ জুন) তার সভাপতিত্বে জরুরি সভায় দলীয় শৃঙ্খলার স্বার্থে সদস্য সচিবের কাছে প্রবাসী অধিকার পরিষদের কমিটি পুনর্গঠন, এরই মধ্যে সংগৃহীত অর্থের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি, রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে বৈঠক, ইসরায়েলের বিতর্কিত মোসাদ সদস্য মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে গোপন বৈঠক, দলীয় নেতাদের নিয়ে অসত্য সংবাদ প্রচারের জন্য ভিপি নুরকে দায়ী করে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। এতে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির উদ্ভব হলে তিনি (রেজা) সভাস্থল ত্যাগ করেন।

রেজা কিবরিয়ার এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তির পর নিজের ফেসবুক পেজে ভিপি নুর পাল্টা অভিযোগ তুলে বিবৃতি দেন।

পাল্টা বিবৃতিতে নুরুল হক নুর লেখেন, বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট পরিচয়ে বাংলাদেশের রেজার অভিযোগ, রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন গোয়েন্দা গোয়েন্দা সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতায় জনৈক মাসুদ সংস্থার সঙ্গে নুর বৈঠক করেছেন। আর্থিক বিষয়ে বা এনায়েত করিমের বিএনপিকে ভাঙা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উকিল আবদুস সাত্তার মডেলে আগামী নির্বাচনে নিতে চান রেজা কিবরিয়া। এ জন্য সরকারবিরোধী অনুষ্ঠানের নামে ব্যাংকক, কাঠমান্ডুতে একাধিকবার বৈঠকে অংশ নিয়েছেন এবং দেশে এসে মনোনয়ন বিক্রি ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা শওকত মাহমুদের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ এবং সর্বশেষ ইনসাফের অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এসব বিষয়ে রোববারের বৈঠকে জবাবদিহিতা চাওয়া হলে সদুত্তর না দিয়ে স্থান ত্যাগ করে রেজা কিবরিয়া বাসায় ঢুকে আর ফেরেননি।

ভিপি নুর আরও লিখেছেন, রেজা কিবরিয়া আহ্বায়ক হয়েও দলের মিটিং-মিছিল, কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলেন না। টাকার লোভে তিনি সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার ফাঁদে পড়ে বিএনপি ভেঙে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দুঃস্বপ্নে বিভোর।

 

 

বার্তাবাজার/এম আই