ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় বিরল রোগে আক্রান্ত আবির হুসাইন নাঈম ও নূর হোসেনের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী সিরাজুল ইসলাম।

শনিবার (১৭ জুন) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ওই দুই সহোদরকে দেখতে তাদের বাড়িতে গিয়ে এ চিকিৎসার দায়িত্বভার গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি। এসময় বিরল রোগে আক্রান্ত দুই সহোদরকে দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন সাবেক সাংসদ কাজী সিরাজ। আগামী মঙ্গলবার বিরল রোগে আক্রান্ত দুই সহোদরকে প্রথমে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হবে। এরপর সেখানে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী তাদের চিকিৎসা শুরু করা হবে। ঢাকাতে যাতায়াতের জন্য দুই সহোদরের বাবা-মায়ের হাতে প্রাথমিকভাবে ২০ হাজার টাকা তুলে দেন তিনি। প্রয়োজনে নিজ দায়িত্বে তাদের বিদেশে উন্নত চিকিৎসার নিশ্চিত করবেন বলেও জানান সাবেক সাংসদ কাজী সিরাজুল ইসলাম।

এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, আলফাডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র মো. আলী আকসাদ ঝন্টু, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য আরিফ হোসেন, উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের আহবায়ক হাসমত হোসেন তালুকদার তপন, আলফাডাঙ্গা ইউপি মহিলা সদস্য মর্জিনা বেগম, আলফাডাঙ্গা গ্রাজুয়েট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন, আলফাডাঙ্গা ক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মোহাম্মদ হানিফ ও উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য সাজ্জাদ হোসেন পিকুল প্রমুখ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আবির হুসাইন নাঈম (১৪) ও নূর হোসেন (৪) আলফাডাঙ্গা উপজেলার সদর ইউনিয়নের শুকুরহাটা গ্রামের চা দোকানি হাবিবুর রহমান ও রাবেয়া বেগম দম্পতির সন্তান। জন্মের পর থেকে তাদের দুই ভাইয়ের চোখ, নখসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফেটে গিয়ে রক্তাক্ত হয়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। কিছুতেই গরম সহ্য করতে পারে না তারা। ৩-৪ মিনিট পর পর শরীরে পানি ঢালতে হয় তাদের। রক্ত বের হতে থাকলে দেখা দেয় প্রবল শ্বাসকষ্ট। অনেক সময় হাত-পা কুঁকড়ে যায়।

বিরল রোগে আক্রান্ত দুই সহোদরের পিতা হাবিবুর রহমান জানান, ১৮ বছর আগে স্ত্রী রাবেয়া বেগমের সঙ্গে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের প্রথম সন্তান সুরাইয়া এ রোগে আক্রান্ত হয়ে জন্মের ১০ মাস পর মারা যায়। এরপর আল্লাহ তাদের সংসারে দুইটি ছেলে ও একটি মেয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলে আবির হুসাইন নাঈম ও চার বছরের শিশু নূর হোসেনও এ রোগে আক্রান্ত হয়। বড় ছেলে ইচাপাশা হাফেজিয়া নুরানি মাদরাসায় ১৩ পারা হাফেজি শেষ করেছে। মেঝো মেয়ে সাদিয়া আক্তার সামিয়ার বয়স ৯ বছর। সেও ওই মাদরাসায় নুরানি বিভাগে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ালেখা করে। ২০১৮ সালে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ভেলোর সিএমসি হাসপাতালে দুই ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন। করোনার পর ওই হাসপাতালে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বর্তমানে চা বিক্রি করে কোনোমতে সংসার চলছে। অর্থাভাবে বাচ্চা দু’টির চিকিৎসা বন্ধ ছিলো।

জানতে চাইলে সাবেক সাংসদ আলহাজ্ব কাজী সিরাজুল ইসলাম বার্তা বাজার’কে জানান, ‘দুই সহোদরের শরীরে বিরল পচন রোগ বাসা বেঁধেছে। নিষ্পাপ শিশু দু’জন যন্ত্রণার সাথে দিন কাটাচ্ছে, আর এদিকে চিকিৎসা করাতে অসামর্থ্য বাবা-মা বাচ্চার অসহায়ত্ব দেখে নিরবে চোখের পানি ফেলছে। বিষয়টির খবর পেয়ে তাদের বাড়িতে ছুটে যাই। বিরল রোগে আক্রান্ত দুই সহোদরের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। প্রয়োজনে এই রোগের চিকিৎসা দেশে সম্ভব না হলে, নিজ দায়িত্বে তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার নিশ্চিত করা হবে।’

বার্তাবাজার/এম আই