রাস্তা পারাপারে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম।
‘ফুটওভার ব্রিজ বানিয়ে দিলাম কিন্তু জনগণ রাস্তা পারাপারে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করবে না এটা হতে পারে না। দুর্ঘটনা রোধে যত্রতত্র এলোমেলোভাবে দৌড় দিয়ে রাস্তা পারাপার হওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। শুধু ফুটওভার ব্রিজ বানালেই হবে না। আমাদের সবাইকে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে হবে। অভিভাবকদের ও শিক্ষকদের অনুরোধ করছি আপনারা ছেলেমেয়েদেরকে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করার কথা বলবেন। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকগণ সচেতন হলে অনাকঙ্খিত দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে।’
ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মুখস্থল আফতাবনগর-মেরুল প্রধান সড়কে ফুটওভার ব্রিজ উদ্বোধনকালে ডিএনসিসি মেয়র এসব কথা বলেন।
বুধবার (১৪ জুন ২০২৩) সকাল সাড়ে এগারোটায় আফতাবনগর-মেরুল প্রধান সড়কে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মাধ্যমে ফুটওভার ব্রিজের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম।
এর আগে ফুটওভার ব্রিজের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে একটি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘নিরাপদে পথচারী পারাপারের লক্ষ্যে ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি নতুন ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে। এই ফুটওভার ব্রিজে দুটি এস্কেলেটর থাকবে। ফুটওভার ব্রিজটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা নিরাপদে রাস্তা পারাপার হতে পারবে। এছাড়াও রামপুরা, বনশ্রী, আফতাবনগর, মেরুল বাড্ডা, হাতিরঝিল এলাকায় যাতায়াতকারী পথচারীরা নিরাপদে রাস্তা পারাপারের সুযোগ পাবেন।’
মেয়র আরো বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে দৃষ্টি নন্দন হাতিরঝিল উপহার দিয়েছেন। হাতিরঝিলে সবাই বেড়াতে আসে। ঢাকার ও দেশের ব্রান্ডিং করতে দৃষ্টি নন্দন হাতিরঝিল ব্যবহৃত হয়। এই হাতিরঝিলের পাশেই আফতাবনগরে ফুটওভার ব্রিজটি হচ্ছে। তাই আমি আমাদের ডিএনসিসির প্রকৌশলীদের নির্দেশনা দিয়েছি, এই ফুটওভার ব্রিজটি যেন দেখতে সবচেয়ে সুন্দর হয়, দৃষ্টিনন্দন হয়। এই ফুটওভার ব্রিজটি নৌকার আদলে দৃষ্টি নন্দনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে।’
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সবাইকে সচেতন হতে হবে উল্লেখ করে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘এডিস মশা সবার জন্যই হুমকি। অতএব এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে। একমাত্র সচেতনতাই পারে এই ডেঙ্গু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে। যদিও সিটি কর্পোরেশন থেকে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। কার্যকরী লার্ভিসাইডিং করছি, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছি। কিন্তু সবার সচেতনতা ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। কোথাও পানি জমতে দেয়া যাবে না।’
এসময় এডিসের লার্ভার উৎস পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের পাত্র, ডাবের খোসা, মাটির পাত্র, খাবারের প্যাকেট, অব্যবহৃত কমোড এগুলো দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন করেন তিনি।
জনগণকে গাছ লাগানোর আহবান জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘সবুজে বাস, বারো মাস এই স্লোগানের মাধ্যমে আমারা বৃক্ষরোপণ শুরু করেছি। ডিএনসিসি এলাকার ফুটপাতে, সড়ক বিভাজকে গাছ লাগানো হবে। আগামী দুই বছরে দুই লাখ গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নিয়েছি। কোন জায়গা খালি রাখতে চাই না। ফুটপাতে ছাতিম, বকুল, কাঠ বাদাম, কৃষ্ণ চূড়া, সোনালু, সড়কের মিডিয়ানে কাঁটা মেহেদী, রংগন, করবী ও বাগান বিলাস, বামন জারুল, রসকাউ লাগানো হবে। আর আমাদের খালের পাশে বিভিন্ন ধরনের ফলজ গাছ, আম, জাম, কাঁঠাল ও ঔষধি গাছ লাগাবো। নগরে কোন পাখি নাই। আমরা বন বিভাগের সাথে আলাপ আলোচনা করে রসকাউ লাগাচ্ছি। রসকাউ ফলটা পাখিদের জন্য খুবই প্রিয়। ক্লিনিং, গ্রিনিং ও ফিডিং এই তিনটিকে বিবেচনায় নিয়ে গাছ লাগানো হবে।’
তিনি বলেন, ‘গাছই পরিবেশ রক্ষা করবে, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে। এই শহরকে বাঁচাতে সবার সহযোগিতায় ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণ করতে চাই।’
বক্তৃতা শেষে ডিএনসিসি মেয়র ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের পাশে গাছ রোপণ করেন।
ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ্য উপদেষ্টা, বোর্ড অব ডিরেক্টরস প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য প্রফেসর ড. এম এম শহিদুল হাসান, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিরুল ইসলাম, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী জিয়াউল বাসেত, ২১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাসুম গণি, ৩৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোঃ জাহাঙ্গীর আলমসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা।
বার্তাবাজার/এম আই