ঝিনাইদহে ১৬ বছরের এক কিশোরীকে বিয়ে দিলেন সরকারী তালিকাভুক্ত কাজী মোঃ আ: সোবহান। ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৩ মে সদর উপজেলার পাগলাকানাই ইউনিয়নের খাজুরা গ্রামে। সে ওই গ্রামের জানিক মন্ডলের অষ্টম শ্রেণী পড়–য়া মেয়ে জুনাকী খাতুন। সরকারের আইন অমান্য করে সরকারী তালিকাভুক্ত কাজী বাল্যবিবাহ দেওয়ায় জনসাধারনের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এমন ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।

জুনাকী খাতুনের নানা মনিরুদ্দিন জানান, জুনাকী ২০০৭ সালের এপ্রিল মাসের ০৫ তারিখ জন্ম গ্রহন করে। এ অনুযায়ী পাগলাকানাই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের ০৪ তারিখ জন্ম নিবন্ধন সনদ নেওয়া হয়েছে। যার নম্বর ২০০৭৪৪১১৯৭৩১০০৬৬৯।

মেয়ের বয়স হয়নি বলে স্বীকার করে আরো বলেন, গত ১৩ মে রাতে পাগলাকানাই ইউনিয়নের কাজী মোঃ আ: সোবহান তাদের বাড়িতে এসে কাগজপত্র না দেখেই বিয়ে দেন। বয়স না হলেও দেখতে ছোট নেই তাই বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। এতে কোন সমস্যা নেই কারন পরিবারের সকলের উপস্থিতিতেই বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে।

মেয়ের নানী সালেহা বেগম জানান, নাতনী দেখতে বড় হয়ে গেছে তাই দেখাদেখি করেই পাশের উপজেলা হরিনাকুন্ডু’র সাকারিদহ গ্রামের রাজিব হোসেনের সাথে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। বয়স ১৮ বছর না হলেও কাজী উপস্থিত থেকে বিবাহের রেজিষ্ট্রার খাতায় নাম ঠিকানা লিখে বিয়ে দিয়েছে। কাজীকে খুশি করতে বেশ কিছু টাকাও দিয়েছি। কাজী বলেছে বয়স ১৮ হলে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করা হবে এখন শুধু নাম ঠিকানা লিখে রেখেছে। এমন বাল্যবিবাহ আশে পাশে আরো বেশ কয়েকজনকে দিয়েছে এই কাজী। এতে তো কোন সমস্যা হয়নি আমাদেরও কোন সমস্যা নেই বলেন সালেহা বেগম।

জুনাকীর মা বলেন, আমার স্বামী জানিক মন্ডল বিদেশ প্রবাসী। দুই সন্তানের মধ্যে জুনাকী ছোট। প্রথমে ব্রাক স্কুলে পড়ালেখা করতো। পরে স্থানীয় পারমথুরাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে বাদ দিয়ে দেয়। পড়ালেখা বাদ দেওয়ার ২ বছর পর মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। মেয়ের বয়স ১৬ বছর হলেও দেখতে বড় হয়েছে আর যেহেতু লেখাপড়া করে না তাই সরকারী কাজীর মাধ্যমে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে কোন সমস্যা নেই মেয়ে এখন শশুর বাড়িতে ঘর সংসার করছে বলেও জানান তিনি।

অভিযুক্ত কাজী মোঃ আ: সোবহান জানান, চেয়ারম্যান মেম্বরের সাথে কথা বলেই বিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিয়ের সময় কোন কাজপত্র দেখাতে পারেনি। রেজিষ্ট্রি বইয়ে শুধু নাম ঠিকানা লিখা হয়েছে বাকি জায়গাগুলো পূরন করা হয়নি বলেও স্বীকার করেন কাজী সোবহান। তাই পরে কাগজ পত্র ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ঠিক করে দিলে বিয়ের রেজিষ্ট্রি করা হবে, না হলে রেজিষ্ট্রি করা হবে না।

সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া জেরিন জানান, লিখিত কোন অভিযোগ কেউ দেয়নি। তবে সাংবাদিকদের মাধ্যমে শুনেছি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

জেলা রেজিস্ট্রার সাব্বির আহমেদ জানান, বাল্যবিবাহ না দেওয়ার জন্য আমারা কাজীদেরকে সব সময় পরামর্শ দিয়ে থাকি। তবে পাগলাকানাই ইউনিয়নের সরকারী তালিকাভূক্ত কাজী ১৬ বছরের একটি মেয়েকে মৌলভী দিয়ে বিবাহ পড়িয়েছে কিন্তু রেজিস্ট্রি হয়নি। বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তীতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট জানিয়ে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। যদি কাজী জড়িত থাকে প্রমানিত হলে তার রেজিস্ট্রি বাতিল করা হবে।

বার্তা বাজার/জে আই