রাত পোহালেই পর্যটন নগরী কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে ভোটারদের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করলেও রয়েছে ধরপাকড়ের অভিযোগ। বিশ্লেষকদের ধারণা দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীর টানা টানিতে ভোট বিপ্লব ঘটাবে নিরব ভোটাররা, তবে মেয়র মুজিবের ভোট ব্যাংক বড় ফ্যাক্ট। নির্বাচনকে অবাধ নিরপেক্ষ, সুস্থ ও অংশগ্রহণমূলক করতে মাঠে তৎপর রয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনী।

জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মোঃ শাহাদাত হোসেন বলেন, আগামীকাল সোমবার (১২ জুন) ৪৩টি কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এবারে কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে ১৫ জন ম্যাজিস্ট্রেট, ৭প্লাটুন বিজিবি, ১২টি র‍্যাবের টিম, ৭৯০জন পুলিশ সদস্য মাঠে কাজ করছেন। নিরাপত্তার স্বার্থে শনিবার রাত থেকে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ রয়েছে।

কক্সবাজার পৌরসভায় মোট ১২ ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ৯৪ হাজার ৮০২ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৪৯ হাজার ৮৭৯ জন এবং নারী ভোটার ৪৪ হাজার ৯২৩ জন। মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ৫ প্রার্থী। তাঁরা হলেন, আওয়ামী লীগের মনোনীত মাহবুবুর রহমান চৌধুরী (নৌকা), বিদ্রোহী প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদ (নারিকেল গাছ), তাঁর স্ত্রী জোসনা হক (মোবাইল ফোন), জগদীশ বড়ুয়া (হেলমেট), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী জাহেদুর রহমান (হাতপাখা) ও কাউন্সিলরসহ মিলিয়ে মোট প্রার্থী ৭৮ জন।

এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে কোনো বিরোধী দলের প্রার্থী নেই তবে জামায়াতের একজনকে মনোনয়ন দিয়েও পরে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। স্থানীয় নির্বাচন বিশ্লেষকদের ধারনা, মেয়র পদে সরকার বিরোধী অন্যান্য বড় রাজনৈতিক দলের প্রার্থী না থাকায় সেসব দলের কর্মী সমর্থকরা আপাতত চুপ রয়েছেন। তাদের নিরব ভোট যেদিকে যাবে সেদিকেই ভোট বিপ্লব ঘটাবে। এদিকে স্বতন্ত্রপ্রার্থী জগদীশ বড়ুয়া নিজেকে মঙ্গল পার্টির নেতা দাবী করলেও মূলত সে বিএনপি সমর্থিত। তাই নিরব ভোটারেদের একটি বড় অংশ জগদীশ বড়ুয়ার বাক্সে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশী।

সূত্র জানায়, পৌর মেয়র জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মুজিবুর রহমানের অন্তত ১০ হাজার রিজার্ভ ভোট রয়েছে। মেয়র প্রার্থী বিজয়ের ক্ষেত্রে তার এই রিজার্ভ ভোট একটি বড় ফ্যাক্টর। তবে আজকের দিন পর্যন্ত নৌকার পক্ষে প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী রাশেদ মুজিবুর রহমানের চাচাতো ভাই। এই পর্যন্ত নৌকার পক্ষে প্রচারনা অংশ গ্রহন করলেও সর্বশেষ রাশেদের সাথে আতাত করেছে বলে এমন একটি উড়ো খবর বেশ কিছুদিন ধরেই শুনা যাচ্ছে।

মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন- নির্বাচনী প্রচারনার শুরু থেকেই স্বতন্ত্রপ্রার্থী রাশেদ ভোটারদের মাঝে কালো টাকা বিতরন করছেন। টাকা বিতরন কালে এই পর্যন্ত কয়েকজনকে হাতেনাতে আটক করেছে আইনশৃংখলা বাহিনী। আমার কাছে কালো টাকা নেই, ‘আমি তিনবারের পরীক্ষিত পৌরসভার (কাউন্সিলর) ছিলাম। আমি ছাত্রলীগ থেকে যুবলীগ এবং সর্বশেষ জাতির জনকের হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসাবে কাজ করছি। এ শহরের মানুষ অবশ্যই আমাকে তাদের মূল্যবান সমর্থন প্রদান করবেন।

বিদ্রোহী প্রার্থী মাশেদুল হক রাশেদ জানান, ‘আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং স্বাধীনতার পর পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান। আমাকে মনোনয়ন না দেওয়ায় আমার বাবার অনুসারি দলীয় কর্মীদের চাপে আমি প্রার্থী হয়েছি। ইতিমধ্যে অনেক চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে নির্বাচন থেকে সরে যেতে। কিন্তু না সরায় আমার সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এমনকি শনিবার দুই সমর্থককে আটক করা হয়েছে। শহরের জনগন এর জবাব ১২ তারিখ সন্ধ্যায় বুঝিয়ে দেবেন।

তিনি অভিযোগের সুরে বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে নির্বাচনে জনগনের সমর্থন নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার কারণে আমাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। আমার পক্ষে প্রচারনার অভিযোগে অপর দুই ভাই এক বোন যথাক্রমে যুবলীগের জেলা সাধারণ সম্পাদক শহীদুল হক সোহেল, কক্সসবাজার সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক কায়সারুল হক জুয়েল এবং জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি তাহমিনা নুসরাত জাহান লুনাকে বহিষ্কার করা হয়।

পুলিশ সুপার মো মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘যেকোনো রকমের পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রস্তুত আছে। ভোটারের বাইরে কেউ কেন্দ্রে প্রবেশ করার সুযোগ নেই।’

ইতোমধ্যে নৌকার প্রার্থীকে বিজয় করতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতৃবৃন্দরা দলীয় নেতা কর্মীদের নিয়ে বৈটক করে গেছেন। তার পর থেকেই দলীয় কর্মীরা আটঘাট বেধে মাঠে নেমেছেন। এতোদিন পিছিয়ে থাকলেও শেষ মূহুর্থে এসে নৌকা এগিয়ে রয়েছে বলে দাবি সাধারণ ভোটারদের। তবে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

প্রসঙ্গত, কক্সবাজার পৌরসভার সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই। ওই নির্বাচন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মুজিবুর রহমান।

বার্তাবাজার/এম আই