রংপুরের মিঠাপুকুরে পরীক্ষার ফি বাড়ানোকে কেন্দ্র করে শালমারা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক এবং অভিভাবকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

বুধবার (৭জুন) এ ঘটনা ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে পরীক্ষা স্থগিত থাকায় শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষের সামনে অবস্থান করেন। পরে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন পুলিশ। এরপর বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে সকল শিক্ষার্থীদের একত্র করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক
পুলিশের উপস্থিতিতে আজকের পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করে আগামীকালের পরীক্ষা নিয়মানুযায়ী চলবে বলে জানিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের ছুটি দেন।

সরেজমিনে জানা গেছে, শালমারা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়টিতে নতুন কমিটি দায়িত্ব গ্রহণ করার পর বিদ্যালয়টির সার্বিক উন্নয়নে কাজ করার চেষ্টা করছেন। তবে অভিযোগ রয়েছে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক কোন প্রকার আলোচনা ছাড়াই অর্থ বার্ষিক পরীক্ষার ফি বৃদ্ধি করে কালেকশন শুরু করেন। হঠাৎ ফি বাড়ার কারণে ফুঁসে ওঠেন অভিভাবকরা। কেন কি কারণে হঠাৎ পরীক্ষার ফি বৃদ্ধি করা হলো বিষয়টি জানতে আজ সকালে পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে শত শত অভিভাবক বিদ্যালয়ে জড়ো হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। একপর্যায়ে অভিভাবক ও প্রধান শিক্ষকের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপর প্রধান শিক্ষক অভিভাবকদের ধাওয়া খেয়ে আত্মরক্ষার জন্য প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় অবস্থান নেন।

পরে কমিটির লোকজন এসে পরিস্থিতি শান্ত করে প্রধান শিক্ষকের সাথে আলোচনায় বসেন অভিভাবক ও বিদ্যালয় কমিটির সদস্যরা।

কয়েকজন অভিভাবক জানান, এখানকার অধিকাংশ অভিভাবক দিনমজুর তাদের পক্ষে শ্রেণিভেদে ৮’শ, ৯’শ এবং ১২’শ টাকা করে একসাথে দেওয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া তিনি যে পরীক্ষা ও সেশন ফি বাবদ টাকা নেন তার কোন রশিদ দেন না। এতগুলো টাকা প্রধান শিক্ষক কি করেন। তাদের অফিসে ফ্যান থাকলেও কোন ক্লাস রুমে ফ্যান নাই। প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা আয় হয় সেই টাকা কোথায় যায়। প্রধান শিক্ষক সভাপতিকে সাথে নিয়ে বিদ্যালয়ের টাকা আত্মসাৎ করছেন। তা না হলে এই গরমে আমাদের সন্তানরা গরমে থাকবে কেন। প্রতিষ্ঠানের টাকা কোথায় যায়? আমরা এর জবাব চাই। আমাদের এলাকার স্কুল আমাদেরকেই দেখতে হবে আমরা কোন অনিয়ম দূর্নীতি হতে দেবোনা।

বিদ্যালয়টির নবম শ্রেণির এক ছাত্র বলেন, ক্লাস ৬ষ্ঠ থেকে দেখে আসছি ক্লাস রুমে ফ্যান নেই। সমস্যা লেগেই আছে। আমাদের বন্ধুরা যেসব স্কুলে পড়ে সেখানে অনেক সুবিধা কিন্তু আমাদের ক্লাসরুমে একটা ফ্যানও নেই। একটা সমাধান হওয়া দরকার।

৮ম শ্রেণির ছাত্র রাকিব বলেন, সেশন ফি, পরীক্ষার ফি ও মাসিক বেতনসহ আমাদের কাছে ৯’শ ৩০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে কিন্তু কোন রিসিভ দেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে শালমারা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) শাহজাহান আলী বলেন, দীর্ঘদিন থেকে বিদ্যালয়ে ৪ জন শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে এছাড়াও মাঝেমধ্যে অনেক শিক্ষক ছুটি নিয়ে থাকেন এ কারণে ঠিকমতো ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয় না। পরীক্ষার ফি যেটা বেশী ধরা হয়েছিল তা কমিয়ে আগেরটাই চুড়ান্ত করা হয়েছে। কমিটির সভাপতি ও সদস্যরা মিলে সিন্ধান্ত হয়েছে। পুলিশ এসেছিল আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে আপাতত আইনগত কোন ব্যবস্থা না নেওয়ার সিন্ধান্ত হয়েছে।

শালমারা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফয়জার রহমান খান বলেন, আমরা যারা নতুন কমিটিতে সদস্য রয়েছি তারা সবাইমিলে একটা পরিকল্পনা নিয়েছি কিন্তু খুব সহজে তা বাস্তবায়ন সম্ভব না। দীর্ঘদিন এই বিদ্যালয়ে মামলা মোকদ্দমা শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং ছিল সেগুলো এখন নিরসন হয়েছে। এখন সবাই মিলেমিশে সমস্যার সমাধান করা হবে। পরীক্ষার ফি বাড়ানোর বিষয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে একটা ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। অভিভাবকদের যে দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে সকল বিষয়ে মিটিংয়ে সিন্ধান্ত নিয়ে রেজুলেশন করা হবে।

মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। আমি নিজেই সেখানে গিয়ে প্রধান শিক্ষকসহ উপস্থিত লোকজনের সাথে কথা বলেছি। এখন কোন সমস্যা নেই, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।

বার্তাবাজার/রাআ