নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার ও দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বাণিজ্যমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রীকে সবসময় বন্দুকের ট্রিগারে হাত রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বুধবার (৭ জুন) অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এম এ মান্নান বলেন, কলকাতা, আগরতলা খুব বেশি দূরে নয়। ওই বাজার আর বাংলাদেশের বাজারের মধ্যে পণ্যমূল্যে এত তফাৎ হওয়া উচিত নয়। কিন্তু হচ্ছে। বাংলাদেশের বাজারে কোথাও কোনো সমস্যা আছে। পেঁয়াজের দাম বাড়ছে দেখে বাণিজ্যমন্ত্রী বললেন তিনি পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছেন। দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে না এলে আমদানির অনুমোদন দেওয়া হবে। বাণিজ্যমন্ত্রীর এমন ঘোষণার পর দাম কিছুটা কমল। পরে যখন ব্যবসায়ীরা দেখল সরকার কিছু করছে না, তখন দাম আবার বেড়ে গেল। এখন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, দামও কমছে।
‘এজন্য বাণিজ্যমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রীকে সবসময় ট্রিগারে হাত রাখতে হবে। যাতে কেউ যখন অস্বাভাবিক কিছু করবে তখন গুলি ছোড়া যায়’- বলেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
এম এ মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রীও আমদানি-নির্ভর পণ্যে মজুত গড়ে তোলার পক্ষে। বিভাগীয় পর্যায়ে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মজুত গড়ে তোলার জন্য তিনি (প্রধানমন্ত্রী) মতামত দিয়েছেন। চালে মজুদ তৈরি করার ফলে এখন বাজার স্বাভাবিক। অন্যান্য পণ্যেও সেটা দরকার।
প্রস্তাবিত বাজেট প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, অনেক কঠিন সময়ে এই বাজেট এসেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি ‘থিন’ অর্থনীতি। নব্যধনীদের যেমন চাকচিক্য থাকে কিন্তু গভীরতা তেমন নয়।
তিনি বলেন, বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্য বাস্তবসম্মত হয়নি। তবে এটা পরের বছর সম্ভব হতে পারে। সরকার ভর্তুকি থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছে। তবে কৃষি ও খাদ্যে ভর্তুকি রাখা হবে, কারণ এই ভর্তুকি ভালো ভর্তুকি।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার সমাজতান্ত্রিক সরকার নয়। তবে বৈষম্য কমানোর বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ রয়েছে। প্রত্যক্ষ কর সংগ্রহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমদানি-বিকল্প শিল্পকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষকে নিজস্ব ঠিকানা তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে আয়ের সুযোগের পাশাপাশি সুপেয় পানি, নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা পাচ্ছে তারা।
বেসরকারি ট্যাক্স এজেন্ট সিস্টেম একবারে চালু না করে বিভাগীয় জেলায় পাইলটিং করে শুরু করার পরামর্শ দেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, গত ৪০ বছরে এমন সংকটে পড়েনি ব্যবসায়ীরা। করোনার সময় সবকিছু বন্ধ থাকলেও সমস্যা হয়নি। এখন সবকিছু খোলা সত্ত্বেও সংকটটা বড়।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বাজেটে বাড়তি রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা আছে। কিন্তু কীভাবে সংগ্রহ হবে তার রূপরেখা নেই।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষণা সংস্থা র্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, বাজেটে মূল্যস্ফীতির চাপ ও বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখার মতো চ্যালেঞ্জগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত হলেও কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে তা স্পষ্ট নয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা বাজেটে নেই। অন্যদিকে প্রবৃদ্ধির উচ্চ হার ধরা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরও আলোচনা করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক আবু ইউসূফ, দৈনিক প্রথম আলোর অনলাইন বিভাগের প্রধান শওকত হোসেন মাসুম, এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর কাজী ফয়সাল বিন সেরাজ, বিল্ডের সিইও ফেরদৌস আরা বেগম এবং ইআরএফের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা।
ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। আয়োজনে সহযোগিতা করে এশিয়া ফাউন্ডেশন ও র্যাপিড।
বার্তা বাজার/জে আই