বান্দরবানের লামায় সরকারের বরাদ্দের কোটি টাকা আত্মসাৎ, ইউপি সদস্যের স্বাক্ষরজাল, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে ৩নং ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হোসাইন এর বিরোদ্ধে লিখিত অনাস্থা প্রস্তাব দাখিল করেছেন ১২ ইউপি সদস্য।

বুধবার (১৭ এপ্রিল’২৪) দুপুরে ইউএনও কার্যালয়ে অনাস্থা প্রস্তাব দাখিল করেন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বিগত ২০২১ সনের অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে শপথ গ্রহণের পর মো. নুরুল হোছাইন চৌধুরী একক কর্তৃত্বে সরকারী বরাদ্ধের কোন প্রকার তথ্য না দিয়ে সম্পূর্ণ গোপনীয়ভাবে ও প্রভাব বিস্তারের করে সরকারী বরাদ্ধকৃত বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

জানা যায়, বিভিন্ন ওয়ার্ডের বরাদ্দকৃত টিআর, কাবিটা, এল.জি.এস.পি-১, এল.জি.এস.পি-২, এল.জি.এস.পি-৩ প্রকল্প সমূহসহ ইউপি টোল-ট্যাক্স, হোল্ডিং ট্যাক্স, জাতীয়তা সনদপত্র হতে আয়, জন্ম নিবন্ধন, প্রত্যয়ন পত্র ও রোহিঙ্গা নয় মর্মে প্রদত্ত সনদসহ বিভিন্ন খাত হইতে আয়ের টাকা কোন প্রকার অবগত বা অবহিত না করে দুর্নীতির আখড়াই পরিণত করেছেন।

এছাড়া সরকারী বিভিন্ন প্রকল্পের কোন কাজ না করে আমাদের (ইউপি সদস্য) অজ্ঞাতে স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে উক্ত প্রকল্প সমূহের লক্ষ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে তা আত্মসাৎ করেছেন। ইতিপূর্বে একাধিকবার সরকারী বরাদ্দকৃত বিভিন্ন প্রকল্পের বিষয়ে এবং উপরোল্লিখিত বিভিন্ন খাত হতে প্রাপ্ত আয় ও ব্যয়ের বিষয়ে তথ্য দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা সত্ত্বেও কোনরূপ কর্ণপাত না করে আমাদের (আবেদনকারীগণকে) হুমকি ধমকি প্রদানে বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। ইতিপূর্বে চেয়ারম্যান ২০২১-২২ অর্থবছরে বিশেষ প্রকল্প কর্মসূচীর আওতায় বরাদ্দকৃত ৮০ মেঃ টন চাউল, ২০ মেঃ টন গম (যাহার জিও নাম্বার- ২৯,০০,০০০০.২২৩, ০২,০০৫,২০২১-২২, তারিখ-২৩/০১/২০২২ইং) এর বিপরীতে প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে উক্ত প্রকল্প সমূহের যাবতীয় বরাদ্দ সম্পূর্ণরূপে আত্মসাৎ করেন। এছাড়া ইউনিয়নে বিভিন্ন সময়ে সরকারীভাবে বরাদ্দকৃত আরো আনুমানিক ১৫০ মেঃ টন বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করেন।

এদিকে মুজিব শতবর্ষের উপহারস্বরূপ গৃহহীন মানুষের জন্য সরকারীভাবে বরাদ্দকৃত প্রতি ঘর বাবৎ বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তির নিকট হতে ৩০ হতে ৫০ হাজার টাকা করে আদায় করে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বর্তমানে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের সর্বজনসাধারণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হওয়ায় আমরা আবেদনকারীগণ একান্ত বাধ্য হয়ে সকলের মতামতের আলোকে সর্বসম্মতিক্রমে ইউনিয়ন পরিষদ আইন ২০০৯ এর ৩৯ ধারার বিধান মোতাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আনীত অনাস্থা প্রস্তাব গ্রহণ পূর্বক যথাযথ আইনানুগ প্রক্রিয়ায় চেয়ারম্যান পদ হতে অপরাসণপূর্বক অব্যহতি প্রদানের নিমিত্তে আবেদন করেছি।

এবিষয়ে ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান মো. নুরুল হোছাইন চৌধুরী বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা ভাগ করে দিতে রাজি না হওয়ায় সদস্যরা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন।

লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ১২জন ইউপি সদস্য চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব দাখিল করেছেন। বিষয়টি বান্দরবান জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।