সিরাজগঞ্জে ভুয়া প্রকল্প অনুমোদন করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠেছে সদর উপজেলার রতনকান্দি ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মোতাহার হোসেন বাচ্চু, রওনাক জাহান রানু ও আয়নালের বিরুদ্ধে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইউনিয়নটির চিলগাছা দক্ষিণ পাড়া মসজিদ হতে পাকা সড়ক পর্যন্ত মাটি ভরাটের প্রকল্প ‘কাবিখা’ বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। কিন্ত গ্রামটি কাজিপুর-১ নির্বাচনী এলকা হওয়ায় গত ২২-২৩ অর্থবছরে তানভীর সাকিল জয়(সংসদ সদস্য কাজিপুর-১) গ্রামবাসীর যাতায়াতের সুবিধার্থে তার বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে মাটি ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ করেন। গ্রামটি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার অন্তর্ভুক্ত থাকায় একই জায়গায় মাটি ভরাটের উদ্দেশ্যে সদর উপজেলা থেকে ‘কাবিখা’ প্রকল্প অনুমোদনের জন্য আবেদন করে ইউনিয়নটি। পরবর্তীতে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে গ্রামটিতে ২,৮৮,০১৪ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে নাম মাত্র মাটি ভরাট করে প্রকল্পের বিলের পুরো টাকা উত্তোলন করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে ৪,৫,৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনের ইউপি সদস্য ও প্রকল্পের সভাপতি রওনাক জাহান রানু, ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোতাহার হোসেন বাচ্চু এবং ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার আয়নাল হোসেনের বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চিলগাছা দক্ষিণ পাড়া গ্রামের একাধিক স্থানীয়রা জানায়, মাটি ভরাটের আগে তানভীর সাকিল জয় (সংসদ সদস্য কাজিপুর-১) মাটি ভরাট করে রাস্তা বানিয়ে দেন। পরে জামে মসজিদের পাশে ও মসজিদের সামনে অল্প একটু রাস্তায় মাটি ভরাট করেছেন রানু, বাচ্চু ও আইনাল। এসময় সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানান স্থানীয়রা।

ভুয়া প্রকল্প অনুমোদন করে অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে ৫ নং ওয়ার্ড মেম্বার আয়নাল হোসেনকে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, প্রকল্পটির দেখভালের সম্পূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন রানু। কোথায় কখন কিভাবে কাজ করেছে তিনিই ভালো বলতে পারবেন।
এ বিষয়ে প্রকল্পের সভাপতি রওনাক জাহান রানুকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, প্রকল্পটি আমার না। আয়নাল মেম্বারের। কত ট্রাক মাটি ফেলা হয়েছে আমি জানি না। এ বিষয়টি আয়নাল মেম্বার জানে। আমি শুধু সভাপতি ছিলাম।

রানুর এমন উত্তরে প্রশ্ন ওঠেছে তিনি যদি কিছু না জানেন তাহলে প্রকল্পের সভাপতি হিসেবে তার স্বক্ষর ছাড়া প্রকল্পের বিল উত্তোলন হয় কি ভাবে?
এছাড়া স্থানীয়দের মধ্যে আলোচনা আছে রানু তার ওয়ার্ডের যাবতীয় কাজ পরিচালনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং দুর্নীতির টাকা ভাগাভাগিসহ পরিষদের যাবতীয় কাজ করান তার স্বামী ইসমাইলকে দিয়ে।

৪ নং ওয়ার্ডের একাধিক স্থানীয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান, ইউপি সদস্য মোতাহার হোসেন বাচ্চু জেলার নেতাদের নাম ভাঙিয়ে নিজেকে প্রভাবশালী হিসেবে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করছে। বাচ্চুর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করতে চাইলে তিনি সাংবাদিকের কাছে বিকাশ নাম্বার চান। সাংবাদিক বিকাশ নাম্বার দিতে রাজি না হওয়ায় সিরাজগঞ্জ জেলার এক নেতাকে নিয়ে বসে সমাধানের চেষ্টা করবেন বলে জানান তিনি।

এছাড়াও প্রশ্ন ওঠেছে ইউনিয়নটির চেয়ারম্যান আনেয়ার হোসেনের দিকেও। একটি ইউনিয়নের অভিভাবক হয়েও তার অগোচরে এমন অনিয়ম ও দুর্নীতির হচ্ছে। ইউনিয়নটিতে এমন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে কী তারও মদদ রয়েছে? এ বিষয়ে আনোয়ার হোসেন (চেয়ারম্যান, ১ নং রতনকান্দি ইউনিয়ন) বলেন, আমার জানামতে ওরা (রানু,বাচ্চু, আয়নাল) কাজ করেছে। তবে কাজে একটু কম বেশি হয়ে থাকতে পারে।

তবে প্রকল্পটির সম্পূর্ণ কাজ বুঝে পেয়েছেন বলে সাংবাদিককে বোঝানোর চেষ্টা করেন সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মাদ সাইদুল হক। এছাড়া তার মোবাইলে তোলা অন্য একটি প্রকল্পের বস্তা ভরাট দেখিয়ে তিনি বোঝান চিলগাছা দক্ষিণ পাড়ার কাজ অনেক এলাকার চেয়ে ভালো হয়েছে। প্রকল্প পরিচালকের এমন পক্ষপাত আচরণে প্রশ্ন ওঠতেই পারে সরিষার মধ্যেই কি ভুত?