নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) বিজ্ঞান ভিত্তিক সংগঠন সায়েন্স ক্লাবের আয়োজনে নবীন শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘গবেষণায় হাতেখড়ি’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মোট ৬ টি সেগমেন্ট নিয়ে তৃতীয়বারের মতো এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এ বিজ্ঞান ক্লাবটি।

রবিবার ( ২৪ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস অডিটোরিয়ামে সকাল ১১.০০ টায় প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আবদুল বাকী, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা বিভাগের প্রধান ও ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. বিপ্লব মল্লিক, সায়েন্স ক্লাবের উপদেষ্টা ও ফার্মেসি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উপ-উপদেষ্টা এবং বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান ড. মফিজুল ইসলাম।

উক্ত অনুষ্ঠানে কি-নোট স্পিকার হিসেবে আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুল আহসান, অন্যান্য স্পিকারদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নোবিপ্রবির ফার্মেসি বিভাগের প্রভাষক আব্দুল বারেক স্যার এবং বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক আব্দুল কাদের।

গবেষণা নিয়ে বিস্তারিত ধারণা দিতে গবেষণায় হাতেখড়ি অনুষ্ঠানটিকে গবেষনার সংক্ষিপ্ত পরিচয়, বৈজ্ঞানিকভাবে গবেষণার ধারণা প্রদর্শন, বৈজ্ঞানিক পোস্টার প্রদর্শন, রেফারেন্সিং এর সংক্ষিপ্ত ধারণা এবং ‘দ্যা আর্ট অব সায়েন্টিফিক কমিনিউকেশনসহ মোট ৬ টি সেগমেন্ট এ ভাগ করা হয়। এ ছাড়াও শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে গ্রিন ক্যাম্পাস ইনিশিয়েটিভ (ক্যাম্পাসকে পরিষ্কার রাখা এবং সবুজ ক্যাম্পাসে রুপান্তর করা) নিয়ে আয়োজিত প্রজেক্টের উপর প্রেজেন্টেশন এর আয়োজন করা হয়।

সায়েন্স ক্লাবের আয়োজনকে সাধুবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল বাকী বলেন, শিক্ষার্থীরা গবেষণার মাধ্যমে নিজেদের জ্ঞানের বিকাশ ঘটাতে পারে। কোন বিষয় নিয়ে গবেষণা করবে এটা ঠিক করাটা খুবই জরুরি। কি নিয়ে গবেষণা করতে চাই, টাইটেলটা কি হবে এটা মাথা থেকে আসতে হবে। এটা যদি কপি পেস্ট করা হয় তাহলে সেটা প্লেজারিজম এ ধরা পড়ে যাবে।

প্রায় সময় দেখা যায় অনেকে টাকা দিয়ে তার রিসার্চ পেপার পাবলিশ করায়। বলতে গেলে অনেক ভালো মানের জার্নালে তারা টাকা দিয়ে পেপার পাবলিশ করিয়ে নেয়। তবে এখনো অনেক জার্নাল আছে যেখানে সৎভাবে পেপার পাবলিশ হয়। তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ গবেষণা হয়তো তোমাকে টাকা দিবে না, কিন্তু জ্ঞান দিবে। এটার জন্য পাগলামি লাগে। যার যত বেশি পাগলামি গবেষণার প্রতি সে তত বেশি এগিয়ে যাবে।

কি-নোট স্পিকারের বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুল আহসান গবেষণা এবং গবেষণার প্রকারভেদ, কখন কিভাবে গবেষণা শুরু করবে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি বলেন, বিজ্ঞান অনুমান নির্ভর তথ্যের বদলে সবসময় নির্ভরযোগ্য তথ্যে বিশ্বাসী। গবেষণা চিন্তার বিকাশ ঘটাতে সহযোগিতা করে। গবেষণা অজানা জিনিসকে জানতে সাহায্য করে তবে মানবতার বৃহত্তর কল্যানে তার ফলাফল বিভিন্ন ভাবে প্রকাশ করতে হয়। সব গবেষণার ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব থাকে এমনকি বিজ্ঞানেরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সেই সীমাবদ্ধতাকে কাটিয়ে উঠতে হবে গবেষণার মাধ্যমে।

তিনি আরে বলেন, গবেষণার জন্য আগ্রহ, সুযোগ সুবিধা ও অর্থ ৩ টি জিনিসের সমন্বয় দরকার। কোনো একটি ফিল্ডে গবেষণা করতে হলে সেই ফিল্ড সংশ্লিষ্ট পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখতে হবে।
এ ছাড়াও তিনি প্রাথমিক গবেষণা ও ব্যবহারিক গবেষণার বিভিন্ন দিক, গবেষণায় চ্যালেঞ্জ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

সায়েন্স ক্লাবের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, তরুণরাই একটি জাতির মূল সম্পদ। এদের মধ্যে থাকে অনুসন্ধান করার তীব্র ইচ্ছা ও অদম্য কর্মস্পৃহা। তারা যখন শৈশব এবং কৈশোর পেরিয়ে তারুণ্যে পদার্পণ করে, চারিদিকে অনেক কিছুই তাদের আকৃষ্ট করে। অনেক কিছুই তাদের হাতছানি দিয়ে কাছে টেনে নিতে চায়। যার ফলে পরিবার ও শ্রেণীকক্ষের বাইরেও বিশাল এক জগতের সঙ্গে তাদের নিরন্তর মিথস্ক্রিয়া ঘটে। যেখানে তাদের নিত্য-নতুন অনেক কিছু শেখার এবং নিজেকে অন্যের সামনে তুলে ধরার সুযোগ হয়।

তিনি আরো বলেন, এ অবস্থায় তরুণ প্রজন্মের এই চাহিদার যোগানে এবং বিপথগামী হওয়া থেকে সুরক্ষা দানে প্রয়োজন তাদের বিভিন্ন রকম সৃজনশীল ও গঠনমূলক কর্মকাণ্ডে নিজেদের নিয়োজিত করা। তোমরা যখন একটি ক্লাবে সংযুক্ত হবে এতে করে তোমরা তোমাদের সমবয়সীদের পাশাপাশি সিনিয়র-জুনিয়রদের সঙ্গে মেশার সুযোগ পাবে এমনকি অনেক বড় একটি পরিসরে কাজ করার মধ্য দিয়ে তোমাদের মধ্যে ভবিষ্যতে কাজ করার উপযোগী দক্ষতা ও নেতৃত্ব গুণের বিকাশ ঘটবে। আমি আশা করি নোবিপ্রবি সায়েন্স ক্লাব নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের এসব গুণের বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হবে। তার ফলাফল দেখা যায় বিভিন্ন জাতীয় বিজ্ঞান প্রতিযোগিতায়।

সায়েন্স ক্লাবের উপদেষ্টা ও মাইক্রোবায়োলজি ডিপার্টমেন্টের প্রধান অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ বলেন, সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে মানব সমাজ আজ যে পর্যায়ে উপনীত হয়েছে, তাতে পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে কয়েক শতকে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর সব আবিষ্কার। বিজ্ঞানের আবিষ্কারের মাধ্যমে কৃষি ও শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। শত শত বছর ধরে মানুষ যে সব রোগ-ব্যাধির কাছে অসহায় ছিল, যার কোনো প্রতিষেধক ছিল না তার অনেকগুলোই আজ মানুষের নিয়ন্ত্রণে। যার নজির দেখা যায় অতি অল্প সময়ে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন তৈরী করা।

তিনি আরো বলেন, বিজ্ঞানের এ যুগে আমরা যদি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এগিয়ে যেতে না পারি তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা কমে যাবে। এর জন্য প্রয়োজন এমন একটি সুদক্ষ ও সৃজনশীল প্রজন্ম গড়ে তোলা যারা হবে বিজ্ঞান চর্চায় নিবেদিত, আত্মোৎসর্গীকৃত।