কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) মেয়র পদে উপনির্বাচনে গতকাল বিএনপির সাবেক নেতা মনিরুল হক সাক্কুর জনসংযোগে ককটেল বিস্ফোরণ ও তার মালিকানাধীন হোটেলে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন চারজন।

এদিকে নির্বাচনে মোট চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করলেও মাঠের পরিসংখ্যান বলছে, এবারের ভোটে মূল লড়াই হবে কুমিল্লার দুবারের মেয়র বিএনপির সাবেক নেতা মনিরুল হক সাক্কু এবং নগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নূর উর রহমান মাহমুদ তানিমের মধ্যে। তবে জয়ের পথে প্রধান এই দুই প্রার্থীর বাধা ভোটের লড়াইয়ে থাকা নিজ দলেরই অপর দুই প্রার্থী। ফলে নির্বাচনে দুই দলের দুজন করে প্রার্থী থাকায় ভোটাররা রয়েছেন কিছুটা বিভ্রান্তিতে। ভোটের ফলাফলেও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন নির্বাচক বিশ্লেষকরা।

আগামী ৯ মার্চ কুসিকের মেয়র পদে উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন দুবারের মেয়র ও বিএনপির সাবেক নেতা মনিরুল হক সাক্কু (টেবিল ঘড়ি প্রতীক) মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম (হাতি প্রতীক), মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহসিন বাহার সূচনা (বাস প্রতীক) এবং মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার (ঘোড়া প্রতীক)। ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই প্রচারে নেমে পড়েন প্রার্থীরা। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে দিচ্ছেন উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতী।

২০২২ সালের জুনে অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটির তৃতীয় নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রার্থী হয়েছিলেন বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু এবং স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সার। পরে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ থেকে একক প্রার্থী ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত। ওই নির্বাচনে রিফাতের কাছে ৩৪৩ ভোটে হেরে যান সাক্কু। এবারের নির্বাচনেও সাক্কুর বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন কায়সার। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, কায়সারের প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে নির্বাচনের বৈতরণী পার হতে সাক্কুকে বেগ পেতে হবে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগেও রয়েছে বিভক্তি। গেল নির্বাচনে একক প্রার্থী থাকলেও এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী দুজন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর মহানগর আওয়ামী লীগ এক বর্ধিত সভায় দলের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহসিন বাহার সূচনাকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দিয়েছে। কিন্তু অপর প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম অভিযোগ তুলেন, বর্ধিত সভায় একক প্রার্থী ঘোষণা করা দলের গঠনতন্ত্র পরিপন্থী। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নেই, কোনো দলের একক প্রার্থীও নেই। বিশেষ বর্ধিত সভা ডেকে একজনকে একক প্রার্থী ঘোষণা করা সংগঠনের গঠনতন্ত্র পরিপন্থী। কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের কোনো একক প্রার্থী নেই, মহানগর আওয়ামী লীগের প্রার্থী আছি দু’জন। সংগঠনের উপদেষ্টা হিসেবে আমিও মহানগর আওয়ামী লীগের প্রার্থী।’

ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নে মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ‘এবার যেহেতু দলীয় প্রতীক নেই, যার ইচ্ছা হয় সে-ই নির্বাচন করতে পারে। আমি কাউকে ছোট করে দেখছি না। আমার দল থেকেও একজন (কায়সার) নির্বাচন করছে। গতবারও সে নির্বাচন করেছিল। আমি তাকে বলেছিলাম, এবারের উপনির্বাচনটা আমি করি। তোমার যদি ইচ্ছা থাকে মেয়র ইলেকশন করবা, তাহলে সামনে তুমি চেষ্টা করো, আমি সহযোগিতা করব। বড় ভাই হিসেবে তাকে এটা আমি বলেছি।’

কায়সারের প্রার্থিতায় ভোটের মাঠে প্রভাব ফেলবে না উল্লেখ করে সাক্কু বলেন, ‘গত নির্বাচনে আমি ৯৮৭ ভোটে জয়ী হয়েছিলাম, কিন্তু আমাকে পরাজিত দেখানো হয়েছে। যদি আমি আরও কিছু ভোট বেশি পেতাম, তাহলে ষড়যন্ত্র করেও পরাজিত দেখাইতে পারত না। আমি বিশ্বাস করি, এবার জনগণ আমাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবেন। আমি মেয়র নির্বাচিত হতে পারলে কুমিল্লা নগরীকে আরও সুন্দরভাবে সাজিয়ে পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তুলব।’

এ বিষয়ে নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে না এলেও দলের নেতা-কর্মীরা আমার সঙ্গে আছেন। আমি যেখানেই যাচ্ছি, বিপুলসংখ্যক মানুষ জড়ো হচ্ছেন। এ জন্য আমাকে নির্বাচন কমিশনের শোকজও পেতে হয়েছে। তিনি (মনিরুল হক সাক্কু) বিএনপির কেউ নন, তার সঙ্গে দলের নেতা-কর্মীরা নেই।’

মহানগর আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী তাহসিন বাহার সূচনা বলেন, ‘কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় দলের সিদ্ধান্তক্রমে আমাকে কুমিল্লা সিটি উপনির্বাচনে একক মেয়র প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দেওয়া হয়। আমি দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে দীর্ঘদিন মানুষের সেবায় কাজ করছি। প্রচারে যেখানেই যাচ্ছি মানুষ আমাকে কাছে টেনে নিচ্ছেন। তারাই আমাকে বিপুল ভোটে জয়ী করবেন।’