ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় মো. মেহেদী হাসান (১৪) নামে এক দাখিল পরীক্ষার্থী কিশোর গ্যাংয়ের হামলার শিকার হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছে। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি আছেন বলে জানিয়েছে তার স্বজনরা।

মেহেদী হাসান উপজেলার ধলাইরচর বরকতিয়া মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষার্থী। তার ফুফা আলফাডাঙ্গা উপজেলা সদরের বাসিন্দা মাওলানা আলী আকবারের বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করে সে। মেহেদী হাসান গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার রাতইল গ্রামের হাফিজুর রহমানের একমাত্র ছেলে।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মেহেদী হাসানের ফুফা আলী আকবার সিসি টিভির ফুটেজ দেখে সনাক্ত করে কিশোর গ্যাংয়ের মূলহোতা কাশিয়ানী উপজেলার বেজড়া গ্রামের শুভ কাজী (১৬), আলফাডাঙ্গা পৌরসভার ইছাপাশা গ্রামের মো. তামিম (১৬), কুসুমদি গ্রামের রাকিব (১৭), অপু (১৬) ও একই উপজেলার ব্রাহ্মণ জাটিগ্রাম এলাকার নয়নের (১৭) নাম উল্লেখপূর্বকসহ অজ্ঞাত আরও ২-৩ জনকে আসামী করে আলফাডাঙ্গা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার পর ঘটনার মূলহোতা শুভ ও তার সহযোগী তামিমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মেহেদী হাসান গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ধলাইরচর বরকতিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে দাখিল পরীক্ষা শেষে তার চাচাতো ভাই জোবায়ের মোটরসাইকেলে ফুফা আলী আকবারের বাড়িতে আসতেছিলেন। পথিমধ্যে কলেজের সামনে আসলে মোটরসাইকেল অধিক গতিতে চালানো হয়েছে বলে কিশোর গ্যাংয়ের ওই পাঁচ সদস্য তাদের দু’জনকে থামতে বলে। কিন্তু তারা প্রাণভয়ে দ্রুত মোটরসাইকেল চালিয়ে চলে আসতে গেলে কিশোর গ্যাংয়ের ওই সদস্যরা তাদের তাড়া করে। একপর্যায়ে মেহেদী হাসান তার ফুফার বাড়ির সামনে চলে আসার সাথেই কিশোর গ্যাংয়ের ওই পাঁচ সদস্য তার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় মেহেদী হাসানকে হকিস্টিক ও চাইনিজ কুড়াল দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। তখন স্থানীয়রা এগিয়ে এলে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা পালিয়ে যান। এরপর স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মেহেদী হাসানের অবস্থা খারাপ দেখতে পেয়ে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।

রোববার রাতে মেহেদী হাসানের ফুফা মাওলানা আলী আকবার বার্তা বাজার’কে জানান, ‘মেহেদী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছে। একটি নির্দিষ্ট সময় না যাওয়া পর্যন্ত তার ব্যাপারে চিকিৎসকরাও কিছু বলতে পারছে না।’

ধলাইরচর বরকতিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. মোছলেম উদ্দীন বলেন, ‘মেহেদী আমাদের মাদ্রাসা থেকে এবার দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। সে একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। কোন কারণ ছাড়াই তার ওপর একদল কিশোর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। এখন সে মৃত্যু শয্যায়। ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।’

আলফাডাঙ্গা আরিফুজ্জামান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজাদুল ইসলাম জানান, ‘শুভ ও তামিম আমাদের বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলো। কিন্তু এই ঘটনার কয়েকমাস আগেই ইভটিজিংসহ বিভিন্ন অভিযোগের কারণে তাদের দু’জনকে বিদ্যালয় থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।’

আলফাডাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ সেলিম রেজা বার্তা বাজার’কে বলেন, ‘ঘটনার ওইদিন রাতেই থানায় একটি মামলা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মামলার দুই এজাহারভুক্ত আসামীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকী আসামীদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’