নিখুঁত শিল্পকর্ম দারুশিল্প বা কাঠের শিল্পকর্ম ঐতিহ্য ও কৃষ্টি সংস্কৃতির একটি অংশ।
মানব সভ্যতার আদি যুগ হতেই মানুষ কাঠের ব্যবহার শুরু করেছিল।কালের বিবর্তনে সভ্যতার উন্নয়ন ধারায় মানবগোষ্ঠী কাঠে সুন্দর ডিজাইন, নকশা, আল্পনা, চিত্র, ভাস্কর্য ইত্যাদি সহজে খোদাই করে নানা বৈচিত্র্য আনয়ন করেছে।
বাংলার দারুশিল্পীরা তাদের আপন অভিজ্ঞতা ও প্রতিভা দিয়ে বাসগৃহ, দরজা-জানালা, কপাট এছাড়া লক্ষীপেঁচা, পুতুল, রামলক্ষণ, সীতা, রাবন ও মহাভারতে বর্ণিত নানা ঐতিহাসিক ঘটনা কাঠের মধ্যে খোদাই করে অপরূপ দৃষ্টিনন্দন অনন্য শিল্পকর্মের সৃষ্টি করে আসছে।
তেমনি সিরাজগঞ্জ সদরে কালীবাড়ি ঘোষপাড়া মহল্লার দারুশিল্পী নরেশ কুমার সূত্রধর প্রায় (৬৫) মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় নেতা, গ্রাম বাংলার আবহমান চিত্র, মানব সভ্যতা, মনীষী-মহামানব ও বিভিন্ন পশু পাখিসহ সবই ফুটিয়ে তুলেছেন তার এ শিল্পকর্মে। তিনি প্রায় পাঁচ শতাধিক ভাস্কর্য তৈরি করেছেন।
বয়সে কাছে হার না মেনে তারুণ্যের গতিতে এখনো কাজ করে যাচ্ছে তার পুরোনো ভাঙা বাড়িটিতে। সংরক্ষণের অভাবে অযত্ন অবহেলায়  পড়ে আছে তার শিল্পকর্মগুলো।নরেশ কুমার বলেন, ছোটো বেলা থেকেই এই কাজের সাথে জড়িত আছি। নিজের দায়বদ্ধতা থেকেই এই প্রজন্মের জন্য কিছু করতে চাই। বর্তমানে অনেকেই অনেক ইতিহাস জানে না। তাই আমি আমার কাজের মাধ্যমে দেশ ও সমাজের কাছে ইতিহাসের প্রতিচ্ছবি রেখে যেতে চাই।

সংরক্ষণের জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করে তার স্ত্রী কল্পনা রানী জানান, জায়গা-জমি না থাকায় সরকারি জমিতে ছোট্ট ভাঙা বাড়িতে বসবাস করছেন তারা। বিয়ের ত্রিশ বছর জীবনে চার সন্তান নিয়ে অনেক প্রতিকুলতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে তাদের। পারিবারিকভাবে এই পেশায় স্বামী ছোটো বেলা থেকেই অনেক মনযোগী হওয়ায় সংসারে খুব একটা খেয়াল রাখতেন না। এখন বয়স হয়েছে। শরীরে নানান রোগ বাসা বেঁধেছে। আগের মতো খুব একটা বেশি কাজ করতে পারে না। এছাড়া তিনি আরও জানান, এক সময়ে এসব কাজ দেখে সময় অপচয় বলে মনে হলেও এখন স্বামীকে শিল্পী হিসেবে মনে করেন তিনি। তার কাজ নিয়ে করেন গর্ববোধ।
শেষ জীবনে স্বামীর আক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন চার যুগেও মেলেনি শিল্পের সম্মান। শিল্পকর্মগুলো অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে। সরকার যদি তাকে স্বীকৃতি দিয়ে তার শিল্পকর্মগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতো খুব ভালো হতো