মাদারীপুরের রাজৈরে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে বীর নিবাস নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। ঠিকাদাররা নয়ছয় করায় ক্রমেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে বীর মুক্তিযোদ্ধারা। সঠিকভাবে কাজ না করায় সিডিউল মোতাবেক বীর নিবাস নির্মাণের দাবী জানিয়ে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন তারা। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বারংবার ধর্না দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না বরাদ্ধপ্রাপ্ত পরিবারের সদস্যরা।
বরাদ্ধপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের লিখিত অভিযোগে জানা যায়, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে বীর নিবাস। কোন কোনটি এখনও নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। নির্মাণের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিম্নমানের স্বাক্ষর রয়েছে রড, ইট, বালি, ইলেক্ট্রনিক্স মামলামালসহ বিভিন্ন সেটিংসে। বিভিন্ন আইটেমেও দেয়া হয়েছে ফাঁকি। এমনকি ভালোমানের কাজ করে দেয়ার আশ্বাসসহ বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে বরাদ্ধপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কাছ থেকে নগদ টাকসহ নির্মাণ সামগ্রী ক্রয় করিয়ে নিয়েও তারা ভালো মানের কাজ করেনি। এসব অভিযোগ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বারংবার ধর্না দিয়ে প্রতিকার পাচ্ছেন না বরাদ্ধপ্রাপ্ত পরিবারগুলো। সবকিছু শুধু আশ্বাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
উপজেলার তাতীকান্দা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম ও সত্যবতী গ্রামের মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নুর ইসলামের পুত্র বাবুল শেখসহ আরও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা জানান, নির্মাণ কাজ ভালোভাবে করে দেয়ার আশ্বাসে নগদ টাকা, বালি ও সিমেন্ট কিনে দিয়েছি। তারপরেও ঠিকাদার ইলেক্ট্রনিক্সপন্যসহ বিভিন্ন সেটিংস এর কাজে নয়-ছয় করেছে। আবার কাজ সম্পূর্ন না করেই হুমকি-ধমকি দিয়ে জব কমপ্লিশন সার্টিফিকেট বা কাজ সমাপ্তি পত্র নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। বীর নিবাস নির্মাণে এসব নানা অনিয়মের অভিযোগ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বারবার লিখিতভাবে দিয়েও কোন প্রতিকার পাইনি।
এ ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধকালিন কমান্ডার মোঃ কাইয়ুম মীর বলেন, প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য নিম্নমানের ঘর নির্মাণের অভিযোগ নিয়ে আমার কাছে এসেছে। কিন্ত আমি তাদের জন্য কিছুই করতে পারিনি। আমি ওই সব দুর্নীতিবাজ ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানাচ্ছি।
সাবেক রাজৈর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ সেকান্দার আলী শেখ জানান, ভালোমানের কাজ হয়নি বলে প্রতিদিনই কোন না কোন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা আমার কাছে অভিযোগ করেছে। কাজগুলি সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য আমি ঠিকাদার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলেছি। তারা আশ্বাসের মধ্য দিয়ে শুধু টালবাহানা করছে।
অভিযুক্ত এক ঠিকাদার এমদাদুল হক হাওলাদার বলেন, কাজ করতে গেলে ত্রুটি বিচ্চুতি একটু হতে পারে। কিন্তু নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করার অভিযোগ সম্পুর্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
রাজৈর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এসএম মাহবুবুর রহমান জানান, ৬৫টি বীর নিবাসের মধ্যে ২৬টির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে, ৩৯টি বীর নিবাসের কাজ চলমান রয়েছে। এ ৩৯টির মধ্যে ৭/৮টি ভবনের কাজের অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। আমরা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের সাথে আলাপ করে অচিরেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপমা ফারিসা জানান, অভিযোগ পেয়েছি। শীগ্রই অসমাপ্ত কাজ সম্পুর্ন করার জন্য ঠিকাদারদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।