নারায়ণগঞ্জ শহরের একটি রেস্তোরাঁয় গান বাজানোকে কেন্দ্র করে ভাঙচুর চালিয়েছেন স্থানীয় একটি মসজিদের কয়েকজন মুসুল্লি। এই সময় রেস্তোরাঁটির পাশের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও ভাঙচুর করেন তারা।
শনিবার (১০ জানুয়ারি) রাত সাড়ে আটটার দিকে দেওভোগ এলাকায় শেখ রাসেল পার্কের ভেতরে ‘পার্ক লাউঞ্জ রেস্টুরেন্ট’ ও পাশের ‘নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটে’ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পার্ক লাউঞ্জ রেস্তোরাঁয় এসএসসি ৯৫ ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনীয় আয়োজন করা হয়। দুপুর থেকে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানটি তখন শেষ পর্যায়ে ছিল। রাতে এশার নামাজ শেষে পার্শ্ববর্তী ডিআইটি রেল কলোনী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে অর্ধশত মুসুল্লি এসে রেস্তোরাঁয় চলমান গান বন্ধ করতে বলেন। আয়োজকরা সাথে সাথে গান বন্ধ করে দিলেও উত্তেজিত মুসুল্লিরা রেস্তোরাঁটির চেয়ার ও বাদ্যযন্ত্রগুলো ভাঙচুর করেন। এতে চেয়ার ছোড়ার ঘটনায় কয়েকজন সামান্য আঘাতপ্রাপ্তও হন।
ওই সময় রেস্তোরাঁটির পাশে নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের নিচতলায় ‘বসন্তবরণ উৎসব’ উপলক্ষে রঙের কাজ করছিলেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। মুসুল্লিরা সেখানে ঢুকেও ভাঙচুর করেন।
যোগাযোগ করা হলে পার্ক লাউঞ্জ রেস্তোরাঁর মালিক আব্দুস সাদিক আল-আমিন (মিনার) বলেন, তিনি নিজেও এসএসসি ৯৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী। নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন অন্তত ৪০০ শিক্ষার্থী এই আয়োজনে অংশ নেন।
‘আমাদের অনুষ্ঠান শেষ হতে সর্বোচ্চ আর ১৫ মিনিটের মতো লাগতো। আমরা নামাজের সময় হিসেবে করে এশার আযানের পর অন্তত ৪০ মিনিট গান বন্ধও রেখেছিলাম। কিন্তু পাশে একাধিক মসজিদ, হয়তো ডিআইটি মসজিদের নামাজ তখনও শেষ হয়নি। এটা আমাদের জানা ছিল না, আমাদেরই ভুল ছিল হয়তো। যদিও আমাদের বলার পর সাথে সাথে গান বন্ধ করে দিয়েছিলাম। তারপরও কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোকজন ভাঙচুর চালায়।’
ভাঙচুরের পর ‘র্যাফেল ড্র’র এর জন্য রাখা দশটি উপহারসামগ্রীও লুট করা হয় জানিয়ে রেস্তোরাঁ মালিক বলেন, ‘আমাদের ক্রোকারিজগুলোও নিয়ে গেছে। এটা দুঃখজনক। তারা হয়তো কেউ বহিরাগতও ছিলেন, আসল মুসুল্লি হলে তো আর এইসব লুট করার কথা না।’
তবে, এই ঘটনায় ‘নিজেদের ভুল’ মেনে নিয়ে কোন আইনগত পদক্ষেপ নিতে রাজি নন বলে জানান তিনি।
এদিকে, নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চারুকলার এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘রেস্তোরাঁয় যখন হামলা করে তখন আমরা চারুকলার নিচতলায় বসন্তবরণ উৎসবের আয়োজন করতে রঙের কাজ করছিলাম। এমন সময় রেস্তোরাঁর একজন তাদের হাতে একটি কি-বোর্ড (ইলেকট্রনিক বাদ্যযন্ত্র) নিয়ে চারুকলার ফটকে ঢুকে পড়েন। তখন উত্তেজিত মুসুল্লিরা চারুকলার ভেতরে ঢুকে কি-বোর্ডটি ভাঙার পর আমাদের রঙের জিনিসপত্রও ভাঙচুর করে।’
তবে, এই বিষয়ে কথা বলতে ডিআইটি রেল কলোনী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব ও নারায়ণগঞ্জ জেলা হেফাজতে ইসলামের আমীর মাওলানা আব্দুল আউয়ালের মুঠোফোনের নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘নামাজের সময় গান বাজানোর অভিযোগে পাশের মসজিদের মুসুল্লিরা রেস্তোরাঁয় ভাঙচুর করেছে বলে জেনেছি। এই ঘটনায় ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। কেউ অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’