জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মীর মশাররফ হল সংলগ্ন জঙ্গলে বহিরাগত নারী ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের সাময়িক বহিষ্কার, শিক্ষা সনদ বাতিল ও ক্যাম্পাস থেকে অবাঞ্ছিত করা হয়েছে৷

রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৩টায় এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় মীর মশাররফ হোসেন হল ও উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় অভিযুক্তদের মধ্যে যেসব শিক্ষার্থী ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে তাদের শিক্ষা সনদ বাতিল করা হয়েছে এবং তাদেরকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া প্রচলিত আইনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আশুলিয়া থানায় বাদী হয়ে মামলা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এবং অধিকতর তদন্তের জন্য ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

অভিযুক্ত হাসানুজ্জামান ও মোস্তাফিজুর রহমানকে ক্যাম্পাস থেকে অবাঞ্ছিত ও তার শিক্ষা সনদ স্থগিত করা হয়। মোস্তফা মনোয়ার সিদ্দিকী ও সাব্বির হাসানকে অবাঞ্ছিত, সাময়িক বহিষ্কার ও শিক্ষা সনদ প্রদান স্থগিত করা হয়। এবং মুরাদ হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী শাহ পরানের বিরুদ্ধে ধর্ষকদের পালাতে সহযোগিতা করার ঘটনায় নির্দেশদাতা হিসেবে চিহ্নিত করে তার সনদপত্র স্থগিত করা হয়।

এর আগে, শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাত সাড়ে নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন জঙ্গলে বহিরাগত ওই নারীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে অভিযুক্তরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান ও বহিরাগত যুবক মামুন (৪৫)। তাদের মধ্যে মোস্তাফিজ মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক।

জানা যায়, ওই দম্পতির বাড়িতে ভাড়া থাকতেন অভিযুক্ত মামুন। তার প্রেক্ষিতে শনিবার সন্ধ্যায় ভুক্তভোগীর স্বামীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেকে নিয়ে আসেন তিনি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আসলে তাকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ‘এ’ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে আটকে রাখেন অভিযুক্তরা। এরপর তার স্ত্রীকে দিয়ে নিজের রেখে আসা জিনিসপত্র আনতে বলেন মামুন। তার প্রেক্ষিতে মামুনের জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন ভুক্তভোগী নারী। পরে জিনিসপত্র নিয়ে মামুন হলের ভিতরের ওই কক্ষে রেখে আসেন। এরপর তার স্বামী অন্যদিক থেকে আসবে বলে ওই নারীকে হল সংলগ্ন জঙ্গলে নিয়ে যান অভিযুক্তরা। পরে সেখানে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই নারী।

এদিকে মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ.স.ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় মামলা হয়েছে। এক্ষেত্রে পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে যত ধরনের সহায়তা চাইবে আমরা দিবো। আমরা আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি বাস্তবায়নে কাজ করবো।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম বলেন, ‘অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের সনদ স্থগিতের পাশাপাশি তাদেরকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত করা হয়েছে। এবং ক্যাম্পাস বহিরাগতদের প্রবেশ ও অস্থায়ী দোকানপাট নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’

ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস ও ট্রাফিক উত্তর বিভাগ) মো. আবদুল্লাহিল কাফী বলেন, মূল আসামি মোস্তাফিজুর রহমানসহ আমরা ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। পলাতক মুরাদ ও মামুনকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

বার্তা বাজার/জে আই