আমন্ত্রণে সাড়া না দেওয়ায় স্থানীয় প্রশাসনের ব্যাপক সমালোচনা করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান। রাজনৈতিক জীবনের ৪৫ বছরেও এত বিব্রত হননি উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ইভটিজিং ও ভূমিদস্যুতা বন্ধে আজকের এই আয়োজন। এজন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মন্ত্রীপরিষদ সচিব আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। স্থানীয় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারকে আমি আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম৷ এরপরেও তারা কেন আসেননি, তা সংসদের প্রথম অধিবেশনেই সংসদ নেতা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জানতে চাইবো। মনে রাখবেন, আমার নাম শামীম ওসমান। আমি কারো দয়ায় চলি না৷
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) বিকালে নারায়ণগঞ্জের ওসমানী স্টেডিয়ামে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের নিয়ে আয়োজিত সভায় তিনি এসব কথা বলেন৷ চারবারের এই সংসদ সদস্য আরো বলেন, অনেকেই অনেককিছু করেন, আমরা সব দেখি৷ নারায়ণগঞ্জের টাকা ধরা পড়ে যাত্রাবাড়িতে আর কেস দেখান ফতুল্লাতে৷ সাংবাদিকরা আমাদের অনেককিছু জানান৷ আমাদের নারায়ণগঞ্জ আমরাই ঠিক করবো। এখানে উপস্থিত অনেকেই আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন যে ডিসি, এসপি কেন আসেননি। রাজনৈতিক জীবনের এই ৪৫ বছরেও আজকের মতো এত বিব্রত হইনি৷
জেলা প্রশাসককে বারবার আমন্ত্রণ জানানোর কথা উল্লেখ করে প্রভাবশালী এই আওয়ামী লীগ নেতা আরো বলেন, নাসিক মেয়র (ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী)- এর মতো বলতে পারবো না যে প্রশাসন টাকা কামাতে আসেন৷ জেলা প্রশাসককে বারবার দাওয়াত দিয়েছি৷তিনিসহ প্রশাসনের অন্যরা কেন আসেননি, জীবিত থাকলে এই প্রশ্ন সংসদে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জিজ্ঞেস করবো। এটা আওয়ামী লীগের সরকার, সরকারের আওয়ামী লীগ না। রাজপথ থেকে সৃষ্টি হয়েছি, রাজপথেই শেষ হবো৷ ৷ মাথা নোয়াবার মানুষ নই আমি৷ প্রতিষ্ঠা হতে যাওয়া সংগঠন ‘প্রত্যাশা’- এর সাড়ে চার লাখ লোক রাস্তায় নেমে যদি বলে আমরা নারায়ণগঞ্জে অমুককে চাই না, তাহলে কিন্তু কেউ থাকতে পারবেন না। আমাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জন্য নারায়ণগঞ্জ এসে অনেকেই সুযোগ নিয়ে চলে যাচ্ছে৷ প্রেস ক্লাবে গোলটেবিল বৈঠক আয়োজনের কথা বলেছেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ৷ আমি অবশ্যই থাকবো সেখানে। আমার ছোট বোন মেয়র আইভীসহ অন্যদেরও বলতে চাই, তারাও যেন আসেন। আগামী প্রজন্মের জন্য সুন্দর নারায়ণগঞ্জ রেখে যেতে চাই৷ মৃত্যুর সময় আমার যাতে ভয় না লাগে৷
শামীম ওসমান আরো বলেন, আপনাদের দোয়ায় আমরা নিষিদ্ধপল্লী উচ্ছেদ করেছি। অনেকে ভেবেছিলেন এর পেছনে কোনো উদ্দেশ্য আছে। পবিত্র কাবা শরিফ ছু্ঁয়ে এবার আমি ওয়াদা করেছি মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতা ও ইভটিজিং বন্ধ করবো। মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, আলেম, জনপ্রতিনিধি, আইনজীবী, ছাত্রছাত্রীরা এসেছেন এখানে। আমরা একটা সুন্দর বাংলাদেশ চাই, একটা সুন্দর নারায়ণগঞ্জ চাই৷ যখন আমরা শুনি একটা মেয়ের সংসার ভেঙে যাচ্ছে স্বামীর মাদকের কারণে। একটা ১৮ বছরের ছেলে রাত ১২টায় বের হতে পারলেও মেয়েরা পারে না৷ কেন? এই রাস্তায় কি নরপশু থাকে? জীবজন্তু থাকে? আমি জানি আজকের পর থেকে মাদক বিক্রির টাকা দিয়ে বিভিন্নভাবে আমাদের বিভক্ত করার চেষ্টা করবে। আমরা সবাই কিন্তু খুব অসহায়৷ জনপ্রতিনিধিরাও এখন অসহায়৷ এর মধ্যেই আমি নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের প্রেসিডেন্ট দীপু, ও সাধারণ সম্পাদক জীবন, সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট সালাম, ইত্তেফাকের বাদল ভাইয়ের সাথে ছয় মাস আগে আলোচনা করি৷ প্রকৃত সাংবাদিকেরা আমাকে কথা দিয়েছেন তারা এই কাজের সাথে আছি৷ প্রয়োজনে কলম, ক্যামেরা ছেড়ে হাতে লাঠি নিয়ে নামবো৷ এতে আমি সাহস পেয়েছি৷ কৃতজ্ঞতা জানাই৷ নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সভাপতি এড সাখাওয়াতকে নিজে টেলিফোন করেছি৷ উনি বলেছেন কেন্দ্রের পারমিশন পেলে উনি আসবেন৷ চরমোনাই নেতাদেরও দাওয়াত করেছি। নাসিক মেয়রকেও দাওয়াত দিয়েছিলাম, হয়তো ব্যক্তিগত কারণে আসতে পারেননি তিনি৷
মাদক বিক্রেতাদের ইবলিশ আখ্যা দিয়ে তিনি আরো বলেন, ওরা অনেক শক্তিশালী৷ ওদেরকে দুর্বল ভাববেন না। আমি কাল না-ও থাকতে পারি৷ অনুরোধ থাকবে আপনারা বিষয়টি চলমান রাখবেন৷ ছিঁচকে সন্ত্রাসীদের কারণে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারেন না৷ মাদক থেকেই আসে সন্ত্রাস, কিশোর গ্যাং। ৯০টি ওয়ার্ডের সাংবাদিক, আলেম, নারী, শিক্ষকদের নিয়ে একটা করে কমিটি করা হবে৷ যে মাদক খায় সে অসুস্থ, যে বেচে সে ইবলিশ শয়তান৷ ২৬ মার্চের আগে এক হাজার করে ভালো মানুষ চাই৷ আলেমরা অন্তত জুম্মায় মাদকের বিরুদ্ধে দুই মিনিট কথা বলবেন, শিক্ষকেরা ক্লাস নিতে গিয়ে কথা বলবেন৷ সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা চাই সাংবাদিকদের কাছে৷ তাদের মধ্যেও ভালো মন্দ আছে৷ যারা মেইনস্ট্রিম সাংবাদিক তারা কখনোই মাদককে সমর্থন করবে না। এরা সবাই চাইলে জেলায় মাদক, সন্ত্রাস থাকবে না। আমরা মেডিকেল ক্যাম্প করবো ঢাকা থেকে বড় বড় চিকিৎসক নিয়ে এসে৷
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাইয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দন শীল, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত মো. শহিদ বাদল, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন সাজনু৷ আরো উপস্থিত ছিলেন জেলার আলেম-ওলামা, শিক্ষক, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি, চিকিৎসক, আইনজীবী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিবৃন্দ।
বার্তাবাজার/এম আই