ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিস আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদের দৌড় থেকে বেরিয়ে এসেছেন। ফলে রিপাবলিকান দল থেকে মনোনয়ন দৌড় এখন আনুষ্ঠানিকভাবে দুই ঘোড়ার প্রতিযোগিতায় পরিণত হয়েছে।

এর এক ঘোড়া হচ্ছেন দক্ষিণ ক্যারোলিনার সাবেক গভর্নর নিকি হ্যালি এবং আরেক ঘোড়া হচ্ছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।

ডিস্যান্টিসের এভাবে প্রতিযোগিতার মাঠ থেকে বেরিয়ে আসা অনেককেই অবাক করেছে। তাকেই ট্রাম্পের সবথেকে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হচ্ছিল। আগামী মার্কিন নির্বাচনে রিপাবলিকানদের জয়ের সম্ভাবনাই বেশি বলে জানান দিচ্ছে জরিপগুলো।

সে হিসেবে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে সবথেকে বড় বাধা হিসেবে দেখা হচ্ছিল ডিস্যান্টিসকেই। কিন্তু মাত্র একটি রাজ্যের ভোটে হেরেই প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। সমর্থন দিয়েছেন ট্রাম্পকেই।

এত দ্রুত ডিস্যান্টিস কেনো হতাশ হয়ে পড়লেন তার একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন মার্কিন নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন এবং উদ্যোক্তা আর্মেন কুর্দিয়ান। তিনি রুশ গণমাধ্যম স্পুটনিককে জানান যে, ডিস্যান্টিসের এই পিছিয়ে পড়ার কারণ হচ্ছে তার প্রচারণা শিবিরের একের পর এক ভুল। তিনি অত্যন্ত দারুণ একজন প্রার্থী ছিলেন।

কিন্তু প্রচারাভিযান ঠিকভাবে না করতে পারায় তাকে এভাবে পিছিয়ে পড়তে হয়েছে। আর্মেন বলেন, আপনি একজন মহান ব্যক্তি হতে পারেন, আপনার দুর্দান্ত জ্ঞান থাকতে পারে, আপনার মধ্যে সব ভালো বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে।

কিন্তু যদি আপনার প্রচারাভিযান সঠিকভাবে সংগঠিত না হয় তাহলে এগুলোর কিছুই কাজে আসবে না। একজন ভালো প্রার্থীর কারণে তার প্রচারাভিযান দারুণ হতে পারে। কিন্তু প্রচারাভিযান খারাপ হলে একজন ভালো প্রার্থী কখনও এগিয়ে যেতে পারেন না।

ডিস্যান্টিসের সবথেকে বড় ভুল ছিল তার প্রার্থী হওয়ার ঘোষণাতেই। তিনি এক্সের মালিক ইলন মাস্কের সঙ্গে এক অডিও বার্তায় নিজের প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার এই সিদ্ধান্তটি ছিল ভুল। সাধারণত বিশাল জনসমাগম ও সারাদেশের গণমাধ্যমের সামনে এ ধরণের ঘোষণা দিতে হয়।

কিন্তু ডিস্যান্টিস তা না করে সোশ্যাল মিডিয়ায় অডিও বার্তা দিয়ে তার প্রচারণা শুরু করেন। অথচ তার উচিৎ ছিল প্রথমে ক্যামেরা, সংবাদমাধ্যম ও সমাবেশের মাধ্যমে প্রচারণা শুরু করা। এরপর তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় এটিকে নিয়ে যেতে পারতেন।

কুর্দিয়ান বলেন, এই প্রতিযোগিতা ডনাল্ড ট্রাম্প এবং রন ডিস্যান্টিসের মধ্যে একটি দুই-ব্যক্তির প্রতিযোগিতা হওয়া উচিত ছিল। ডিস্যান্টিসের সামনে সেই সুযোগ ছিলও। তিনি ২০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি অনুদান সংগ্রহ করেছেন তার প্রচারণার জন্য। যা নিঃসন্দেহে একটা বড় অংক।

বর্তমানে ট্রাম্পের একমাত্র প্রতিপক্ষ হিসেবে রয়ে গেছেন নিকি হ্যালি। তবে কুর্দিয়ান মনে করেন না যে, হ্যালির মনোনয়ন ছিনিয়ে নেয়ার খুব বেশি সুযোগ আছে। তিনি বলেন, আমি নিকি হ্যালিকে পছন্দ করি। সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে যে হ্যালির সমর্থকদের বেশিরভাগই ট্রাম্প-বিরোধী। এ কারণে মনোনয়ন দৌড়ে হ্যালি ট্রাম্পের কাছে হেরে গেলে আগামী নির্বাচনে তার সমর্থকরা রিপাবলিকান হওয়া সত্বেও হয়ত ট্রাম্পকে ভোট দেবেন না। ডেমোক্রেটরা এই ভোট ছিনিয়ে নিতে পারে বলেও জানান তিনি। কারণ, এ দলটা ভোট বাগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে খুব ভাল।

তবে ট্রাম্প-বিরোধীদের উপর নির্ভরতা হ্যালির প্রচারণাকে ধ্বংস করতে পারে। ডেভিড পাইন নামের একজন সক্রিয় রিপাবলিকান সদস্য এবং প্রচারক স্পুটনিককে একটি ইমেলে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, হ্যালি রিপাবলিকানদের যে অংশের প্রতিনিধিত্ব করছেন তার আকৃতি ক্রমশ কমে আসছে। হ্যালি ও রিপাবলিকানদের মধ্যে থাকা বুশপন্থীরা ট্রাম্পের বিরোধীতা করলেও তারা জয় থেকে ট্রাম্পকে আটকানোর সুযোগ পাবে না। খুব সম্ভবত হ্যালি কোনো অঙ্গরাজ্যেই জিততে পারবেন না।

পাইন উল্লেখ করেছেন যে, ট্রাম্প এবং হ্যালির বৈদেশিক নীতি পুরোপুরি বিপরীত। ট্রাম্পের নীতিতেই সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকানরা বিশ্বাস করেন। পাইন উল্লেখ করেছেন যে, রক্ষণশীল ‘আমেরিকা ফেস্ট ২০২৩’ কনভেনশনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মাত্র ৩.৫ শতাংশ ইউক্রেনে মানবিক সহায়তা প্রদানকে সমর্থন করে। সামরিক সহায়তাকে সমর্থন করে না বলতে গেলে কেউই।

তিনি বলেন, নিকি হ্যালি সব যুদ্ধেই যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণকে সমর্থন দিয়েছেন। এমনকি তিনি ইউক্রেনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে বাইডেনের প্রক্সি যুদ্ধকে সমর্থন দিচ্ছেন। তিনি ইউক্রেনকে আরও ৬১ বিলিয়ন ডলারের বিশাল সহায়তা দেয়ার প্রস্তাবের পক্ষে। অপরদিকে ট্রাম্প যুদ্ধ বন্ধে দ্রুত যুদ্ধবিরতি ও শান্তি চুক্তি করতে চান। তিনি সম্ভাব্য তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঠেকাতে বদ্ধপরিকর।

বার্তা বাজার/জে আই