সরকারি কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী চাকরিতে কর্মরত অবস্থায় কোনো রাজনৈতিক দল বা রাজনীতিতে যুক্ত হতে পারেন না। এমনকি অবসর গ্রহণের তিন বছর পরও তিনি নির্বাচন করতে পারেন না। কিন্তু এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা দেদারসে রাজনীতি-নির্বাচন করে বেড়ান। ব্যবসা থেকে শুরু করে এলাকার গ্রাম্য সালিশ পর্যন্ত তারা করেন। বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য নির্ধারিত কোনো চাকরি আচরণবিধি না থাকায় এ সুযোগ নিচ্ছেন তারা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারা নামে বেসরকারি হলেও তাদের বেতন ভাতার অংশ সরকারি কোষাগার থেকে দেওয়া হয়। তার মানে তাদের চাকরিবিধি ও আচরণ বিধি থাকা উচিত। কিন্তু এত বছরে সেটি হয়নি। এবার সেই আচরণ ও চাকরিবিধি করার উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখানে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত কোনো শিক্ষক যেন রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশ নিতে না পারেন সেই প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এমনকি আন্দোলনের চাঁদা তোলা ও তাতে সমর্থনও জানাতে পারবেন না। এমন বিধান করতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি বিধিমালায় এসব প্রস্তাব করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এ খসড়া তৈরিতে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের প্রস্তাবকে আমলে নেওয়া হয়েছে। ডিসি সম্মেলনে বেসরকারি শিক্ষকদের রাজনীতি না করার প্রস্তাব দেন তারা। ওই প্রস্তাবকে সামনে রেখে আগাতে চায় মন্ত্রণালয়।

আগামী ৩০ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠেয় কর্মশালায় খসড়াটি চূড়ান্ত করা হতে পারে বলে জানা গেছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের চাকরি বিধিমালায় ১০টি ধারা উল্লেখ করা হয়েছে। খসড়ার একটি বিধিতে অনুমোদন ছাড়া শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশনি নিষিদ্ধের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া আরেকটি বিধিতে শিক্ষকদের রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ, আন্দোলনের নামে চাঁদা সংগ্রহ এবং এসব আন্দোলন সমর্থন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) মো. রবিউল ইসলাম বলেন, যেহেতু বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য কোনো চাকরিবিধি নেই, তাই বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য আচরণবিধি তথা একটি চাকরি বিধিমালা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি একেবারেই প্রাথমিক অবস্থায় রয়েছে। আগামী ৩০ জানুয়ারি এ সংক্রান্ত একটি কর্মশালা হবে। কর্মশালা শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো যাবে।

সর্বশেষ জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য সরকারি কর্মচারীদের মতো একটি বিধিমালা তৈরির প্রস্তাব দেন ঝিনাইদহের তৎকালীন ডিসি মনিরা বেগম। এরপর বিধিমালা তৈরির কাজ শুরু করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

বর্তমানে এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৯ হাজার ১৬৪টি। এর মধ্যে স্কুল-কলেজ ২০ হাজার ৪৩৭ টি, বাকিগুলো কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসা। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারী আছেন সাড়ে ৫ লাখের মতো।

বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী আচরণ বিধিমালায় খসড়া প্রস্তাবে সাধারণ আচরণ ও শৃঙ্খলা শিরোনামে ১০টি বিধি রয়েছে। এর একটিতে বলা হয়েছে, ‘কোনো রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করবেন না, এর সাহায্যে চাঁদা দেওয়া বা অন্য কোনো উপায়ে এর সহায়তা করবেন না এবং প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের পরিপন্থী কোনো কার্যকলাপে নিজেকে জড়িত করবেন না। আরেক বিধিতে আছে, কোনো বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য কোনো অনুরোধ বা প্রস্তাব নিয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো সংসদ সদস্য বা অন্য কোনো বেসরকারি ব্যক্তির দ্বারস্থ হতে পারবেন না।

বার্তা বাজার/জে আই