ঢাকার পাশ্ববর্তী কেরানীগঞ্জ থানার তেলঘাট এলাকায় সাইফুল ইসলাম রাসেলকে রাতভর নির্যাতনে মৃত্যুর ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রাব্বিসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

পুলিশ বলছে, রাসেল হত্যায় জড়িত ঘাতকরা দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে ছিল। তারা দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

বুধবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর পুরান ঢাকার জনসন রোডে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আসাদুজ্জামান এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- আফতাব উদ্দিন রাব্বি (২৪), আলমগীর ওরফে ঠান্ডু (৩৯), মো. আমির হোসেন (৩৮), মো. শিপন (৩১), দেলোয়ার দেলু (৩৭), মো. রনি (৩৫), অনিক হাসান হিরা (৩০), মো. সজীব (৩৬), ফিরোজ (৩১), রাজীব আহমেদ (৩৫), মো. মাহফুজুর রহমান (৩৬), মোঃ রতন শেখ (২৮)।

এসপি আসাদুজ্জামান বলেন, দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার তেলঘাটে রাব্বির ব্যক্তিগত অফিসে গত ১০ জানুয়ারি রাতে রাসেলকে লোক মারফত ডাকা হয়। রাব্বির ডাকে রাসেল তার অফিসে গেলে রাব্বির নেতৃত্বে রাতভর রাসেলকে প্রচন্ড নির্যাতন করা হয়। কেচি দিয়ে রাসেলের মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়। নির্যাতনের একপর্যায়ে ১০ তারিখ দিনগত রাত ২টতার দিকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রাসেলকে কয়েকজন মিলে বস্তায় ভরে বাসায় নিয়ে যায়। সেখানেও রাসেলকে চিকিৎসকের কাছে নিতে বাধা দেয়। আহত অবস্থায় দীর্ঘসময় থাকার কারণে সেখানেই রাসেলের মৃত্যু হয়। পরের দিন রাসেলের স্ত্রী মিডফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাসেলকে মৃত ঘোষণা করেন।

আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত রাসেলের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হাওলাদার বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় রাব্বিসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ১০/১৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছেন, নিহত রাসেল আসামি রাব্বির বন্ধু ছিল। তেলঘাট এলাকায় রাসেল বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে রাব্বির নামে চাঁদা তুলতেন। সেই টাকা রাব্বি ও তাদের অন্যান্য সহযোগীদের না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করেন রাসেল। মূলত আর্থিক লেনদেনকে কেন্দ্র করে রাব্বি ও তার সহযোগীরা রাসেলের ওপর ক্ষুদ্ধ হয় এবং রাসেলকে উচিৎ শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করেন।

হতাকাণ্ডে জড়িত অন্যান্য পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে।

আসাদুজ্জামান বলেন, ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে রাব্বি তার রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে তেলঘাট এলাকায় নিরব চাঁদাবাজি করতেন। এ ধরনের চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেরানীগঞ্জের ব্যবসায়ীদের বলব আপনারা কেউ চাঁদা দিবেন না। কেউ চাঁদা দাবি করলে পুলিশকে জানাবেন আমরা ব্যবস্থা নেব।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের রাব্বির অফিসে যাতায়াত ছিল। কি ভাবে মানুষ পুলিশের ওপর আস্থা রাখবে এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, কোনো পুলিশ কর্মকর্তা জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে একজনকে থানা থেকে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বার্তাবাজার/এম আই