পরিবারের হাল ধরতে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জের যুবক মিঠু। ভালো বেতনের আশ্বাস পেয়ে দালালের হাতে তুলে দেন সাড়ে চার লাখ টাকা৷ কিন্তু সৌদিতে গিয়ে কোনো কাজ তো মেলেইনি, বরং কাজের পারমিট না থাকায় যেতে হয়েছে জেলে।

অন্যদিকে দালাল আল- আমিন যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন মিঠুর সাথে৷ প্রচণ্ড অর্থকষ্টে থাকা মিঠু সৌদির ডাস্টবিনে পড়ে থাকা পঁচা, বাসি খাবার কুড়িয়ে এনে খাচ্ছেন আর অপেক্ষার দিন গুনছেন দেশে ফেরার৷ এমনই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে ফতুল্লা থানার পাগলা বৌবাজারের বাসিন্দা মোহাম্মদ মিঠুর সাথে।

পিতাহারা মিঠু ২০২৩ সালের জুনে সৌদিতে পাড়ি জমান। সংসারে কিছুটা স্বচ্ছলতা ফেরানোর স্বপ্ন নিয়ে ভিনদেশে পাড়ি দেওয়া মিঠুর স্বপ্ন ফিকে হতে সময় লাগেনি৷ সৌদিতে পৌঁছেই বুঝতে পারেন, দালালের প্রতারণার শিকার হয়েছেন তিনি। কিন্তু পৈতৃক ভিটামাটি বিক্রি করে শেষ সম্বলটুকুও ততোদিনে দালাল আল- আমিনের হাতে তুলে দিয়েছেন মিঠু৷ কাজের পারমিট না থাকায় সৌদির বিভিন্ন শহরে লুকিয়ে কাজ করার চেষ্টা করতে থাকেন মিঠু৷ এতেও বাধে বিপত্তি। গ্রেফতার হয়ে জোটে জেলে যাওয়ার দুর্ভাগ্য৷

জেল থেকে বের হয়ে মিঠু এখন দিন কাটাচ্ছেন অনেকটাই অনাহারে। খিদের যন্ত্রণা সইতে না পেরে ডাস্টবিনে পড়ে থাকা উচ্ছিষ্টও খেতে হচ্ছে তাকে। অন্যদিকে তাকে মিথ্যে আশ্বাসে সৌদিতে নিয়ে যাওয়া প্রতারক আল- আমিনের কোনো খোঁজও পাচ্ছেন না মিঠু। উপায়ন্তর না পেয়ে মিঠু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক ভিডিও পোস্ট করে বেঁচে থাকার ও দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন। ডাস্টবিন থেকে খাবার কুড়িয়ে খাওয়ার ঘটনাও বর্ণনা করেছেন৷

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বগুড়ার আলমদীঘি থানার ইন্দ্রই গ্রামের জহির সরকারের সন্তান, প্রতারক আল- আমিন নিজেও সৌদিতে থাকেন৷ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার লোকেদের মাধ্যমে নানা প্রলোভনে সৌদিতে লোক নেওয়ার ব্যবসা তার৷ এর মাধ্যমে ইতোমধ্যে অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়ে যাওয়া আলআমিনের প্রতারণায় নিঃস্ব হয়ে যাওয়া পরিবারের সংখ্যা শতাধিক।

বুধবার (১৭ জানুয়ারি) সৌদির তায়েফ শহরের ছেহেলি থেকে মিঠু বলেন, ‘দালালের খপ্পড়ে পড়ে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি৷ পরিবারকে ভালো রাখার স্বপ্ন নিয়ে এখানে এসে জেল খাটলাম৷ এখন ডাস্টবিনের উচ্ছিষ্ট কুড়িয়ে খেয়ে কোনোমতে বেঁচে আছি৷ এক বাংলাদেশীর আশ্রয়ে এখানে আছি আমি, কিন্তু তার অবস্থাও করুণ৷ এদিকে দেশে আমার মা আমার জন্য সারাক্ষণ কাঁদতে কাঁদতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন৷ দুইটা সন্তান আছে আমার, ওরা আমাকে দেখার জন্য ছটফট করে। কিন্তু রিবারের এখন আর সেই সামর্থ্যও নেই যে তারা আমাকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন৷ দালাল আল আমিনকে বিভিন্ন লোক মারফত বলেছি, অন্তত আমাকে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করুক, কিন্তু সে বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও কথা রাখছে না৷ এভাবে আর কিছুদিন থাকলে অনাহারে থাকতে থাকতে আমি হয়তোবা মারা যাব। দয়া করে আমার মায়ের কাছে আমাকে ফিরে যেতে সাহায্য করুন।

এ বিষয়ে জানতে আল-আমিনকে একাধিক কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

বার্তাবাজার/এম আই