২০২৩ সালে সমুদ্রপথে স্পেন পৌঁছাতে গিয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে মারা গেছেন অথবা নিখোঁজ হয়েছেন ছয় হাজার ৬১৮ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী। একই বছর রেকর্ডসংখ্যক অভিবাসনপ্রত্যাশী পৌঁছেছেন স্পেনের ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে।

অভিবাসীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা সংগঠন কামিনান্দো ফ্রন্তেরাস বা ওয়াকিং বর্ডারস মঙ্গলবার এ পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে।

এক সংবাদ সম্মলনে সংস্থাটির সমন্বয়ক হেলেনা মালেনো জানিয়েছেন, ‘লজ্জাজনক’ এই পরিসংখ্যানটি আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের চেয়ে অন্তত তিন গুণ। ওই বছর দুই হাজার ৩৯০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী সমুদ্রপথে মারা গেছেন অথবা নিখোঁজ হয়েছেন।

২০০৭ সাল থেকে এই পরিসংখ্যানটি রাখছে বেসরকারি সংস্থাটি৷ তাদের হিসাবে, ২০২৩ সালেই যাত্রাপথে সর্বোচ্চ সংখ্যক অভিবাসী মারা গেছেন।

কামিনান্দো ফ্রন্তেরাস আরও জানিয়েছে, নিহত বা নিখোঁজ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা ৩৮৪ জন। উদ্ধার পাওয়া অভিবাসী ও স্বজন হারানো পরিবার থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই সংখ্যাটি নির্ধারণ করেছে এনজিওটি।

গেলো বছর রেকর্ডসংখ্যক অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু ও নিখোঁজের ঘটনায় উদ্ধারকারীদের জন্য পর্যাপ্ত সহযোগিতার অভাবকে দায়ী করেছেন মালেনো।

রাজনৈতিক অস্থিরতা, বেকারত্ব, খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়া এবং সাগরে মাছের পরিমাণ কমে যাওয়াসহ নানা কারণে সেনেগালের হাজার হাজার নাগরিক মৃত্যুঝুঁকি জেনেও ইউরোপ পৌঁছাতে সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

কামিনান্দো ফ্রন্তেরাসের মতে, আফ্রিকা থেকে স্পেনের ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জমুখী যাত্রায় আটলান্টিক মহাসাগরে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক অর্থাৎ ছয় হাজার সাত জন অভিবাসনপ্রত্যাশী মারা গেছেন।

ভূমধ্যসাগরে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপের কারণে ইউরোপে ঢোকার ক্ষেত্রে স্পেনের সাতটি দ্বীপের সমষ্টি ক্যানারি এখন বিকল্প গন্তব্য। বিশেষ করে, আফ্রিকার দারিদ্র্য এবং সংঘাত থেকে পালিয়ে বাঁচতে চাওয়া মানুষেরাই ইউরোপের প্রবেশদ্বার হিসেবে ক্যানারিকে বেছে নিয়েছেন।

মালেনো বলেন, ‘আটলান্টিক মহাসাগরের এই অভিবাসন রুটটি বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক রুট হয়ে উঠেছে।’

স্পেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৩ সালে দেশটিতে আসা অভিবাসীর সংখ্যা ৫৬ হাজার ৮৫২ জন। সংখ্যাটি তার আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। আর ২০১৮ সালের পর গেলো বছরই সর্বোচ্চ সংখ্যক অভিবাসী এসেছেন দেশটিতে। ২০১৮ সালে স্পেনে এসেছিলেন ৬৪ হাজার ২৯৮ জন অভিবাসী।

৫৬ হাজার ৮৫২ জন অভিবাসীর মধ্যে ৭০ শতাংশই স্পেনে ঢুকেছেন ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ হয়ে। উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকার উপকূল থেকে ক্যানারির দূরত্ব মাত্র ১০০ কিলোমিটার। ‘পিরোগ’ নামের কাঠের তৈরি নৌকায় চড়ে আসেন তারা। মূলত মাছ ধরার এসব নৌকাগুলো মরক্কো, গাম্বিয়া এবং আরো দক্ষিণের দেশ সেনেগালের উপকূল থেকে ছেড়ে আসে। তবে সেনেগাল থেকে ক্যানারির দূরত্ব সমুদ্রপথে এক হাজার ৬০০ কিলোমিটার। পৌঁছাতে অন্তত সাত দিন সময় লাগে।

গেলো বছর অভিবাসনপ্রত্যাশীদের উপচেপড়া ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেয়েছে ক্যানারি কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি উন্নয়নে অক্টোবরে দ্বীপপুঞ্জটটিকে পাঁচ কোটি ইউরো অর্থ সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকার। এছাড়া অনিয়মিত অভিবাসন বন্ধে সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরিতে সেনেগাল ও মৌরিতানিয়ার সঙ্গে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে মাদ্রিদ।

স্প্যানিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফার্নান্দো গ্রান্দে-মারলাস্কা বৃহস্পতিবার বলেছেন, এই সহযোগিতার কারণে গেলো বছর অন্তত ২৭ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশীর যাত্রা আটকে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, এর মধ্য দিয়ে ‘আমরা জীবন বাঁচিয়েছি।’

বার্তা বাজার/জে আই