‘আরিফুর রহমান দোলন এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী না হলে ফরিদপুর-১ আসনে কোন ভোটের উৎসবই থাকত না। তিনি নির্বাচনে এসে আব্দুর রহমানকে বড় চ্যালেঞ্জে ফেলে দিয়েছেন। রাতদিন মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন ঈগল প্রতীকের প্রার্থী দোলন।’ মধুখালী উপজেলা নওয়াপাড়া বাজারে একটি চায়ের দোকানে কয়েকজন ভোটারের আড্ডায় এমন আলোচনাই হচ্ছিল।

ফরিদপুর-১ আসনে পাঁচজন প্রার্থী থাকলেও আলোচনায় রয়েছেন তিনজন। এ আসনে এবার আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান। তার বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ঈগল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কাঞ্চন মুন্সি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও ঢাকা টাইমস সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলন এবং নোঙ্গর প্রতীক নিয়ে লড়ছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ্ মোহাম্মদ আবু জাফর।

কিন্তু আসনটিতে ভোটের মাঠে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আব্দুর রহমান ও আরিফুর রহমান দোলনের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মিলেছে। তবে ভোটারদের আড্ডায় ঘুরে-ফিরে আলোচনায় থাকছে দোলনের নাম। ভোটাররা মনে করছেন, তার জন্য শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন আব্দুর রহমান।

কী সেই চ্যালেঞ্জ?—সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী ও মধুখালী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে কথা হয়।

তারা জানান, ফরিদপুর-১ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুর রহমান এর পূর্বে দুইবার সংসদ সদস্য ছিলেন। দায়িত্ব থাকাকালীন সময়ে গ্রুপিং রাজনীতি করায় দলটিতে নেতাকর্মীরা দু’টি ভাগে বিভক্ত ছিলো। পরবর্তীতে তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হলে এলাকায় খুব বেশি সময় দেননি। ফলে এলাকায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা ছিলো কম। এবারের নির্বাচনে প্রকাশ্যে পদধারীদের অনেকেই তার সঙ্গে থাকলেও অনেক অনুসারী নীরবে ঈগল প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে রয়েছেন। অন্যদিকে আরিফুর রহমান দোলন নানাভাবে পুরো নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ মানুষের পাশে ছিলেন। নির্বাচনে এসব ইস্যু বড় করে দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, নির্বাচনে তিনটি উপজেলার আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের অনেকেই প্রকাশ্যেই ঈগল প্রতীকের হয়ে মাঠে রয়েছেন। বিভিন্ন উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারাও ঈগলের পক্ষ নিয়েছেন। তিনটি উপজেলার আটটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রকাশ্যে কাজ করছেন। তাদের অনেক অনুসারী রয়েছেন।

মধুখালী উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মির্জা আহসানুল আজাউল জানান, ‘বিভিন্ন ওয়ার্ড, ইউনিয়নের পদধারী অনেক নেতা ও জনপ্রতিনিধি দোলনের পক্ষে কাজ করছেন। নানা কারণে তারা প্রকাশ্যে আসতে পারছেন না। সাধারণ মানুষও ভোট দিতে প্রস্তুতি নিলেও মুখ খুলতে পারছেন না নানা কারণে।’

বোয়ালমারী উপজেলা যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মো. হান্নান মোল্যা বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ মোতাবেক এ নির্বাচনে যেকোনো প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। তাই আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা আরিফুর রহমান দোলনকে বেছে নিয়েছে। তিনি পরোপকারী মানুষ, মানুষকে সম্মান ও ভালোবাসতে জানেন। বিপদে-আপদে মানুষের পাশে থাকেন। তাই ভোটের সমীকরণে দোলনের ঈগলের পাল্লায় ভারি।’

অনুসন্ধানে জানা যায়, আসনটিতে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আব্দুর রহমান নৌকা প্রতীক নিয়ে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার ৩৮৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। তখন তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির শাহ্ মোহাম্মদ আবু জাফর ধানের শীষ প্রতীকে ৭২ হাজার ২৮৫ ভোট পেয়েছিলেন। তবে এবারের নির্বাচনে শাহ্ মোহাম্মদ আবু জাফর বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে বিএনএমে যোগ দিয়ে নির্বাচন করছেন। সেকারণে শাহ্ মোহাম্মদ আবু জাফরের প্রতি বিএনপির নেতাকর্মীদের ক্ষোভ রয়েছে। তাই এবারের চিত্র ভিন্ন; নির্বাচনে নেই বিএনপি। ধারণা করা হচ্ছে, পদধারী আর চিহ্নিত নেতারা ভোটকেন্দ্রে না গেলেও বিএনপি সমর্থক ভোটারদের একটি বৃহৎ অংশ তাদের ভোট আব্দুর রহমান ও শাহ্ মোহাম্মদ আবু জাফরের বিপক্ষের বাক্সেই যাওয়ার কথা। সেক্ষেত্রে সেসব ভোট স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আরিফুর রহমান দোলনের ঈগল প্রতীকের পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর বাইরে এই আসনে প্রায় ৬০ হাজার সংখ্যালঘু ভোটার রয়েছেন। সেখানেও নৌকা আর ঈগলে ভাগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ঈগল প্রতীকের নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির সদস্য এ কে এম জাহিদুল হাসান বলেন, ‘বর্তমানে তৃণমূল জনগণের আস্থার প্রতীক ঈগল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে প্রধানমন্ত্রীর নৌকাকে নয় নৌকার প্রার্থীকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাছাড়া দলীয় প্রধান নির্বাচন উন্মুক্ত করে দিয়ে বলেছেন, নেতাকর্মীরা যার পক্ষে ইচ্ছে কাজ করতে পারেন। কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। এজন্য সাধারণ মানুষ ছাড়াও অনেক নেতাকর্মী স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে রয়েছেন।’

বার্তা বাজার/জে আই