হামাসের রাজনৈতিক শাখার উপপ্রধান সালেহ আল অরৌরির নিহতের ঘটনায় সংবাদমাধ্যমে কোনো প্রতিক্রিয়া না জানাতে মন্ত্রিসভার সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। ইসরায়েলের নিউজ চ্যানেল ইসরায়েলি পাবলিক ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন বুধবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

২ জানুয়ারি, মঙ্গলবার লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মোওয়াদে হামাসের কার্যালয় লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী; সেই হামলায় নিহত হন সালেহ আল অরৌরি, যিনি হামাসের রাজনৈতিক শাখার কেন্দ্রীয় উপপ্রধানের পাশাপাশি এই গোষ্ঠীটির লেবানন শাখারও শীর্ষ নেতা ছিলেন।

আল আরৌরি ছাড়াও হামাসের সামরিক বিভাগ দুই কমান্ডারও সেই হামলায় নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

ঠিক কী কারণে নেতানিয়াহু এই নির্দেশ দিয়েছেন— তা পরিষ্কার নয়। তবে রাজনীতি বিশ্লেষকদের একাংশের মত, ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোতরিচ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইতামার বেন গেভির সম্প্রতি গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের বিতাড়ন করা সম্পর্কিত যে ‘বেফাঁস’ মন্তব্য করেছেন— তার জেরেই এই নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু।

গত সোমবার ইসরায়েলে এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বেজালের স্মোতরিচ বলেন, গাজা উপত্যকায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের অবশ্যই উপত্যকা ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যেতে হবে। একই দিন ভিন্ন একটি অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বেন গেভির মন্তব্য করেন, ‘এই যুদ্ধ গাজাবাসীর সমানে অন্যদেশে অভিবাসনের সুযোগ এনে দিয়েছে। এই সুযোগ হারানো তাদের জন্য উচিত হবে না।’

দুই মন্ত্রীর এই মন্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে মন্ত্রিসভার সদস্যরা যেন ভবিষ্যতে কোনো উসকানিমূলক বক্তব্য না দেন— সে সম্পর্কে নেতানিয়াহুকে নজর রাখতে সতর্কবার্তাও দিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্তে হামাস যোদ্ধারা অতর্কিত হামলা চালানোর পর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী। ২৮ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থলবাহিনীও।

ইসরায়েলি বাহিনীর টানা দেড় মাসের অভিযানে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা, নিহত হয়েছেন ২২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। এই নিহতদের ৭০ শতাংশই নারী, শিশু, অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর-কিশোরী এবং বয়স্ক লোকজন।

আহত হয়েছেন আরও ৫৪ হাজার ৯৬৮ জন এবং এখনও নিখোঁজ রয়েছেন ৭ হাজার জন।। এছাড়া হাজার হাজার পরিবার বাড়িঘর-সহায় সম্বল হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন স্কুল, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল প্রাঙ্গণে।

অন্যদিকে, হামাসের গত ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছিলেন ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক। পাশাপাশি, ইসরায়েলের ভূখণ্ড থেকে ২৪২ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিককে সেদিন জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যান হামাস যোদ্ধারা। তাদের মধ্যে এখনও মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছেন ১২৯ জন জিম্মি।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসকে সম্পূর্ণ ধ্বংস এবং গাজাকে পরিপূর্নভাবে নিরস্ত্রীকরণ করার আগ পর্যন্ত এই যুদ্ধ চলবে।

বার্তা বাজার/জে আই