নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দেয়া সাজাকে ফরমায়েশি বলে বক্তব্য দিয়েছে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এই গণভবনের রায়ে পুরো জাতি লজ্জিত।

সোমবার (১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ভার্চুয়ালি সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বক্তব্য দেন রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, ফরমায়েশি রায়ের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং ক্ষোভ জানাচ্ছি। প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে এই রায় যে দেয়া হয়েছে। তার প্রমাণ শেখ হাসিনা অব্যাহতভাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে বিষোদগার এবং তাকে দেওয়া হুমকি।

ইংরেজি নতুন বছরের প্রথম দিনটি পরমানন্দে শুভেচ্ছা জানানোর এ সময়ে দেশের স্বাধীনতাপ্রিয় গণতন্ত্রকামী জনগণের কাছে মোটেই সুখকর নয়। শ্রম আইন লঙ্ঘনের কথিত মামলায় শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ফরমায়েশি রায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন শেখ হাসিনার আদালত।

সোমবার (১ জানুয়ারি) শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলার রায়ে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনকে ৬ মাস করে কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন।

২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগের শ্রম পরিদর্শক (সাধারণ) এস এম আরিফুজ্জামান মামলাটি করেন। গত ৬ জুন এই মামলায় ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করেছিলেন ড. ইউনূস ও অন্যরা। আপিল বিভাগ গত ২০ আগস্ট সেই আবেদন চূড়ান্তভাবে খারিজ করে দেন।

এরপর ২২ আগস্ট শ্রম আদালতে এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। যা শেষ হয় ৯ নভেম্বর। গত ২৪ ডিসেম্বর রাতে আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের শেষ যুক্তিতর্ক শোনার পর এই মামলার রায় ঘোষণার জন্য ১ জানুয়ারি তারিখ ধার্য করেন আদালত।

আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা শ্রম আইন, ২০০৬ এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক বা কর্মচারীদের শিক্ষানবিশকাল পার হলেও তাদের নিয়োগ স্থায়ী করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক বা কর্মচারীদের মজুরিসহ বাৎসরিক ছুটি দেওয়া, ছুটি নগদায়ন ও ছুটির বিপরীতে নগদ অর্থ দেওয়া হয় না।

মামলায় আরও অভিযোগ আনা হয়, গ্রামীণ টেলিকমে শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি এবং লভ্যাংশের ৫ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন অনুযায়ী গঠিত তহবিলে জমা দেওয়া হয় না।

অভিযোগের জবাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে ৯ নভেম্বর ড. ইউনূসসহ চারজন বিবাদী লিখিতভাবে আদালতকে বলেন, গ্রামীণ টেলিকমের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয় নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী। কারণ, গ্রামীণ টেলিকম যেসব ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে, সেগুলো চুক্তিভিত্তিক। তবে গ্রামীণ টেলিকমের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে স্থায়ী কর্মীর মতো ভবিষ্য তহবিল (প্রভিডেন্ট ফান্ড), আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি), অর্জিত ছুটি ও অবসরকালীন ছুটি দেওয়া হয়ে থাকে। মামলায় নিয়োগ স্থায়ী না করার যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা প্রশাসনিক ও দেওয়ানি মামলার বিষয়।

আদালতে দেওয়া লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি আইনের ২৮ ধারা অনুযায়ী একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। এর লভ্যাংশ বিতরণযোগ্য নয়, সামাজিক উন্নয়নে ব্যয় করা হয়।

বার্তা বাজার/জে আই