গত নভেম্বর থেকে দেশে চলমান হরতাল-অবরোধের প্রকোপে বিভিন্ন সময় বাঁধাগ্রস্ত হয়েছিল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণী কার্যক্রম। কিন্তু এসময় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন শিক্ষার্থীরা।

এই সময়ে বন্ধ ছিল না বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বিভাগেরই শিক্ষা কার্যক্রম। সাবলীল গতিতেই চলেছে সবকিছু। গত নভেম্বর ও চলতি ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষা। পরিস্থিতি বিবেচনায় পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় থাকলেও স্বাভাবিক গতিশীলতার ফলে স্বস্তি প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থীরা।

করোনা মহামারীর ফলে দেশের সকল প্রতিষ্ঠানেই নেমে আসে ভয়াবহ সেশনজট। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ও শিকার হয় সেই সেশনজটের। তবে সেশনজট কাটিয়ে উঠার মুহুর্তে আবারও সেশনজটের কবলে পড়লে পড়ার আগ্রহ হারাতো শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় বর্ষের একজন শিক্ষার্থী জানান, করোনাভাইরাসের কারণে আমরা প্রায় ১ বছরের সেশনজটের সম্মুখীন হয়েছি। এমতাবস্থায় চলমান পরিস্থিতিতে যদি আমাদের চূড়ান্ত পরীক্ষা পিছিয়ে যেত, তবে আবার রুটিন দেওয়া, পরীক্ষার প্রস্তুতি সবমিলিয়ে সেশনজটের আরেকটা ধাক্কা সামলাতে হতো। এমন কিছু না হওয়ায় সৃষ্টিকর্তার প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী জানান, আমাদের শিক্ষার্থীদের অনেকেরই স্বপ্ন বিসিএস পরীক্ষায় সফলতা অর্জন। সম্প্রতি প্রকাশিত ৪৬তম বিসিএসে আবেদনের জন্য অবশ্যই ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা সম্পূর্ণরূপে শেষ হতে হতো। সঠিক সময়ে পরীক্ষা সমাপ্ত হওয়ায় আবেদন করার সুযোগ পাচ্ছি।

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগেরই শ্রেণী কার্যক্রমেই ছিল সাবলীল গতি। ফলশ্রুতিতে করোনা পরবর্তীতে আবারও কয়েক মাসের একটি সেশনজটের কবল থেকে বাঁচল রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: শাহ্ আজম বলেন, করোনা মহামারীর ফলে সেশনজটের কবলে পড়ে শিক্ষার্থীদের বিশাল একটি সময় নষ্ট হয়েছে। শিক্ষার গুণগত মান অক্ষুণ্ণ রেখে সেই সময় কিছুটা লাঘব করা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালন নীতির মূল উপজীব্য। এ লক্ষ্যে আমরা নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষা পরিবেশ অব্যাহত রাখতে চাই। আমাদের বিশ্বাস করোনাকালীন সেশনজট নিরসনে যেসকল বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে রয়েছে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ও সে তালিকায় প্রথম সারিতে রয়েছে। আমাদের প্রচেষ্টা-শিক্ষার্থীদের যেন একদিনও নষ্ট না হয়। এটি আচমকা কোনো ঘটনা নয়, ধারাবাহিক উদ্যোগ। এই নীতির অনুসরণে আমরা এর আগেও শীতকালিন ও গ্রীষ্মকালিন ছুটি বাতিল করেছি এবং এবছরও শীতকালীন ছুটি কমিয়ে এনেছি।

রবি উপাচার্য আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরাজমান স্থবিরতার সময়ে ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর আমি উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর থেকেই পঠন-পাঠনে সবাইকে মনোযোগী করতে উদ্যোগ নেই এবং এর ফলে ২১ ডিসেম্বর সব বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হয়। একটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে তার পরিবার ও সমাজের এক বিশাল প্রত্যাশা থাকে। আমি মনেকরি আমাদের শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি অর্জনে অল্প সময় বাঁচানো গেলেও তা অনেকগুণে তাদের প্রতিযোগিতামূলক সামর্থ্য বৃদ্ধি করবে। বাংলার মৃত্তিকালগ্ন সংস্কৃতির পরিপালন ও গুণগতমান সম্মত শিক্ষা ও গবেষণা আমাদের অঙ্গীকার। সেই সাথে কোন কারণেই যেনো রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত না হয় তা নিশ্চিত করতে আমাদের সকল শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী অত্যন্ত আন্তরিকভাবে কাজ করছেন।

উল্লেখ্য, সেশনজট কমাতে সম্প্রতি শীতকালীন ছুটিতে কাটছাঁট করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এছাড়াও এর আগে শীতকালীন ছুটি পুরোপুরিভাবে বাতিল ও করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি।

বার্তাবাজার/এম আই