নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গৌরবদীপ্ত বিজয়’ শীর্ষক মহান বিজয় দিবস ২০২৩ অনুষ্ঠান উদযাপিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে মুজিব মঞ্চে জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।

আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, ‘একটা দেশের মহান স্থপতি ও জাতির পিতাকে হত্যা করা, পৃথিবীর সবচেয়ে নিন্দনীয় ন্যাক্কারজনক ঘটনা। ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুই প্রথমে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, পরবর্তী সময়ে এই ঘোষণা কেউ বেতারে পাঠ করেন, এসব বিষয়ে আমাদের শিক্ষার্থীদের মাঝে ধোঁয়াশা তৈরি করে রাখা হয়েছিল। বর্তমান প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানতে হবে।’

ভিসি বলেন, ‘আমাদের সংবিধানের সমাজতন্ত্র বলতে জাতির পিতা সকলের প্রতি ন্যায্যতা বুঝিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুই সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। রাজনীতিতে কেউ যাতে ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার না করতে পারে- সে বিষয়ে পরিষ্কার ছিলেন। অথচ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ধর্মকেই ব্যবহার করে থাকে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে, ধর্মীয় কোনো বিষয়ই এখানে উল্লেখ নেই।’

অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি মফিদুল হক তৎকালীন জগন্নাথ কলেজকে সকল আন্দোলনের সূতিকাগার উল্লেখ করে বলেন, ‘১৯৪৭ এর দেশভাগ, দ্বি-জাতিতত্ত্ব ও পাকিস্তানের যাত্রা সেই যাত্রাটা এই উপমহাদেশকে একটা অন্ধকারের মধ্য দিয়ে ফেলে দিয়েছিল, বিশেষ করে পূর্ব বাংলার মানুষদের। সেখান থেকে জাগরণের চেষ্টা নানানভাবে ঘটেছে- আর এই জাগরণের জায়গাটাতে তরুণ সমাজ, শিক্ষক, রাজনীতিবিদদের ভূমিকা আর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ছিল অপরিসীম। এসব কিছু মিলে মিশে যে ইতিহাস সেই ইতিহাস নিয়েই ১৯৪৭ ও ১৯৭১। বাঙালি আন্দোলনের মূল চালিকা শক্তিই ছিলেন বঙ্গবন্ধু।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. হুমায়ূন কবীর চৌধুরী বলেন, ‘কোনো সমঝোতার মাধ্যমে এদেশ স্বাধীন হয়নি- আমাদের দেশ স্বাধীনতা লাভ করে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে পুরো জাতি একাত্মতা ঘোষণা করে দেশ স্বাধীন করে।’

আলোচনা সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন কলা অনুষদের ডিন ও অনুষ্ঠান আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. হোসনে আরা বেগম। এসময় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজী এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসাইন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ রফিকুল ইসলাম ও ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শবনম শারমিন লুনা।

আলোচনা সভা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল নাট্যকলা বিভাগের অংশগ্রহণে নাটক মঞ্চায়ন ও নৃত্য পরিবেশনা এবং সংগীত বিভাগের অংশগ্রহনে অনুষ্ঠিত হয় সংগীতানুষ্ঠান। পরবর্তী সময়ে আবৃত্তি সংসদ, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে বিভিন্ন পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, প্রক্টর, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, সাংবাদিক ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

বার্তা বাজার/জে আই