কক্সবাজার-ঢাকা রুটে রেলের টিকেট নিয়ে কালোবাজারি থামছেই না। অনলাইনে টিকেট সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত হয়রানি-ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা। রেল স্টেশনের কাউন্টারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও মেলেনা টিকেট। মুহূর্তেই হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। রেল কর্তৃপক্ষও যার সঠিক জবাব, সুরাহা দিতে অপারগতা প্রকাশ করছেন বারবার।

অবশেষে জনদাবি ও জনভোগান্তি বিবেচনায় টিকেটে কালোবাজারি বন্ধে স্বপ্রণোদিত মামলা করেছেন আদালত।

রবিবার (১৭ ডিসেম্বর) কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সদর) আদালতের বিচারক শ্রীজ্ঞান তঞ্চঙ্গ্যা মামলাটি করেন। যার মিচ নং-০৩/২০২৩ ইং।

মামলাটি তদন্ত করে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে র‌্যাব ১৫-এর অধিনায়ককে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এসব তথ্য জানিয়েছেন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সদর) আদালতের বেঞ্চ সহকারী মোহাম্মদ শফি।

আদেশের সুত্র ধরে তিনি বলেন, স্থানীয় একটি অনলাইনে রেলের টিকেট কালোবাজারী হচ্ছে মর্মে সংবাদ প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আদালত মন্তব্য করেছেন, “প্রতিবেদনটি পর্যালোচনাক্রমে সার্বিক বিষয় বিশ্লেষণ করে অত্র আদালতের নিকট প্রতিয়মান হয়, কক্সবাজার ট্রেনের টিকেট কালোবাজারিদের হাতে ছড়িয়ে পড়ায় সাধারণ নাগরিকরা ট্রেনের টিকেট প্রাপ্তিতে ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। সংবাদ/প্রতিবেদনটি ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ১৯০(১)(সি) ধারায় আমলে নেয়ার ক্ষমতা প্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে আমার নজরে আসে। উক্ত প্রতিবেদনে বর্ণিত ঘটনা পর্যালোচনায় দি স্পেশাল পাওয়ার এ্যাক্ট, ১৯৭৪ এর ২৫ ধারায় অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকতে পারে মর্মে সন্দেহের কারণ রয়েছে যা তদন্ত হওয়া একান্ত প্রয়োজন।

কিন্তু উপরোক্ত অপরাধসমূহ সুনিদিষ্টভাবে আরো কার কার দ্বারা সংঘটিত হচ্ছে তাদের বিস্তারিত নাম, ঠিকানা প্রকাশিত প্রতিবেদনে সুস্পষ্ট নয়। সাক্ষীদের নাম, ঠিকানাও প্রতিবেদনে নাই। সুতরাং অপরাধটি কাদের দ্বারা সংঘটিত হচ্ছে তা প্রাথমিক অনুসন্ধানের মাধ্যমে নিরুপন করা প্রয়োজন এবং সহজ ডট কমের কোন কর্মকর্তা কর্মচারী তাতে জড়িত আছে কিনা সেই বিষয়ে তদন্তের মাধ্যমে আসামিদের সনাক্ত করা প্রয়োজন। এমতাবস্থায়, সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকসহ অপরাপর সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও মুচলেকা গ্রহণ পূর্বক আগামি ১৫ (পনেরো) দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য অধিনায়ক, র‍্যাব- ১৫, কক্সবাজারকে নির্দেশ প্রদান করা হলো।

র‌্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী বলেন, এটি এটকি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। আদালতের আদেশটি এখনও হাতে পৌঁছেনি। যথাযথ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবে র‌্যাব।

উল্লেখ্য, প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, “কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট ছাড়ার এক মিনিটের। মধ্যেই হয়ে যায় হাওয়া। যাকে নিয়ে টিকেট কালোবাজারীর গল্প শুরু তার নাম রিয়াজ উদ্দিন। এখন প্রশ্ন হতে পারে রিয়াজ উদ্দিন টিকেট পায় কোথায় থেকে? এটার উত্তরে একজন লোক অর্থাৎ রিয়াজ উদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে বিষয়টি অঙ্গীকার করে এবং ক্যামেরার সামনে থেকে পালিয়ে যায়। রিয়াজ উদ্দিন টিকেট পায় কক্সবাজার রেল ষ্টেশনের সামনে খুপির দোকানের মালিক সালমান সাকিবের কাছ থেকে। সালমান সাকিবকে জিজ্ঞাসাবাদে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তিনি অঙ্গীকার করেছেন। রিয়াজ উদ্দিন সালমান সাকিবের বন্ধু বলা হলে সেট সালমান সাকিব অস্বীকার করেছেন।

সংবাদের অনুসন্ধান এবং গোপন সূত্র বলছে, সালমান সাকিবের সাথে সহজ ডট কম এর বুকিং অফিসার মোহাম্মদ হাসিবুল এর সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক। মূলত এই মোহাম্মদ হাসিবুলই হচ্ছে টিকেট কালোবাজারীর মূল হোতা। হাসিব টিকেট ছাড়া সাথে সাথেই সহজ ডট কম থেকে ভাগিয়ে নেয় বেশীর ভাগ টিকেট। এসব বিষয় নিয়ে হাসিবের কাছে জানতে চাইলে হাসিব কিছুটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে।

কক্সবাজার রেল ষ্টেশনের ষ্টেশন মাষ্টার গোলাম রাব্বানী বলেন, টিকেট কালোবাজারের কোন সুযোগ নেই। ভ্রমণ যার টিকেট তার। ষ্টেশনের ইনচার্জ হিসেবে তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে তিনি ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।

তিনি আরো বলেন, টিকেট কালোবাজারী হওয়ার মতো কোন অপশন নেই। টিকেট সম্পূর্ণ অনলাইন। টিকেট ছাড়ার সাথে সাথে এক মিনিটের মধ্যে হাওয়া হয়ে যাওয়া টিকেট ব্যবস্থা থেকে মুক্তি চায় সাধারণ মানুষ।

একজন সাধারণ নাগরিক বলেছেন, তিনি সকাল আটটা থেকে এসে টিকেটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু টিকেট পাননি। তিনি আরো বলেন, এই ষ্টেশনে সর্বোচ্চ ০৫টি টিকেট বিক্রি করা হয়। কক্সবাজারে ট্রেন চালু হওয়ার এক মাসের মধ্যে টিকেট বিক্রি নিয়ে নয়-ছয় হওয়ায় সর্বত্র সমালোচনা চলছে মর্মে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।”

অভিযোগ উঠেছে, কক্সবাজারে রেলের টিকেট শতভাগ কালোবাজারি সিন্ডিকেটের দখলে চলে গেছে। আর অতিরিক্ত দেড় থেকে ২০০ টাকা দেয়া হলেই মিলছে টিকেট। যেখানে প্রতিদিনই কাউন্টারে গিয়ে পাওয়া যায় না কোনো টিকেট, আর অনলাইনেও ১ বা ২ মিনিটের মধ্যে সব উধাও হয়ে যায় সব টিকেট।

বার্তা বাজার/জে আই