তৈরি পোশাক খাতের প্রধান কাঁচামাল তুলা, সুতাসহ সব ধরনের কাঁচামাল আমদানি কমেছে। গত অক্টোবর পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে পোশাকের কাঁচামাল আমদানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ২১ শতাংশেরও বেশি। অন্যদিকে টানা দুই মাস কমেছে তৈরি পোশাকের রপ্তানি। কাঁচামাল আমদানি কমে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে, আগামী মাসগুলোতে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।

পোশাক খাতের রপ্তানিকারক উদ্যোক্তারা মনে করেন, বিশ্ববাজারে চাহিদা কমে আসায় রপ্তানিতে কাঙ্ক্ষিত গতি নেই। বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘চারটি কারণে কাঁচামাল আমদানি কম। প্রথমত, তৈরি পোশাকের রপ্তানি আদেশ কমেছে। দ্বিতীয়ত, আমরা পোশাকে মূল্য সংযোজনের ক্ষেত্রে কিছু পণ্য স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করছি। তৃতীয়ত, গত বছরের তুলনায় এখন কাঁচামালের মূল্য কিছুটা কমেছে। আর চতুর্থত, আমদানিতে পরিবহন ব্যয়ও আগের তুলনায় কমেছে। পরিবহন ব্যয়সহ আমদানির হিসাব করা হয়। এসবের বাইরে অন্য কোনো কারণ নেই।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, জুলাই-অক্টোবর সময়ে পোশাক খাতে বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল আমাদানি হয়েছে ৫১৪ কোটি ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল প্রায় ৬৫৩ কোটি ডলার। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ১৩৯ কোটি ডলার মূল্যের কাঁচামাল দেশে কম এসেছে।

এ সময় পোশাক কারখানাগুলোত স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সুতা-কাপড়ের ব্যবহার বেশি হয়েছে তাও নয়। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) বলছে, অনেক কারখানাতেই সুতা-কাপড়ের স্তূপ জমে আছে। রাখার জায়গা নেই। এ কারণে বিটিএমএর সদস্য কারখানাগুলোর উৎপাদন এখন সক্ষমতার তুলনায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কম।

জানতে চাইলে বিটিএমএর পরিচালক এবং লিটিল স্টার স্পিনিং মিলসের চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম বলেন, পোশাক উৎপাদনের কারখানাগুলো তাদের মূল ক্রেতা। পোশাক খাতে রপ্তানি আদেশ কম যাওয়ার কারণে স্থানীয় সুতা-কাপড়ের চাহিদাও কমছে। এ কারণে গ্যাস সংকটের মধ্যেও উৎপাদিত সুতা-কাপড়ের প্রচ্ছন্ন রপ্তানি অর্থাৎ স্থানীয় বাজারে সরবরাহ করা যাচ্ছে না। সুত-কাপড় রাখার জায়গা নেই। সে কারণে সক্ষমতার চেয়ে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত উৎপাদন কম করছে দেশের বস্ত্রকলগুলো।

তৈরি পোশাক উৎপাদনে কাঁচা তুলার ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে চলতি অর্থবছরের চার মাসে কাঁচা তুলার আমদানি কম হয়েছে ৩৯ দশমিক ৩ শতাংশ। ১০৯ কোটি ডলার মূল্যের তুলা আমদানি হয় এ সময়। গত অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল প্রায় ১৮০ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক তুলা আমদানিই কমল ৭১ কোটি ডলারের।

সুতা আমদানি কমেছে ৫ শতাংশের মতো। ৯৭ কোটি ডলারের সুতা আমদানি হয়েছে গত জুলাই-অক্টোবর সময়ে, যা গত অর্থবছরের একই সময় ছিল ১০২ কোটি ডলার। অর্থাৎ, সুতা আমদানি কমেছে ৫ কোটি ডলার। স্টেপল ফাইবার আমদানি কম হয়েছে ১৬ শতাংশ। মোট ৪৪ কোটি ডলারের স্টেপল আমদানি হয়েছে চার মাসে। গত অর্থবছরের একই সময়ে হয়েছিল ৫২ কোটি ডলারের। পোশাক উৎপাদনে ব্যবহার হওয়া বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক আমদানি কমেছে ১১ শতাংশ। ২৮ কোটি ডলারের আমদানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩২ কোটি ডলার।

গত কয়েক মাস ধরে পোশাক রপ্তানি নেতিবাচক প্রবণতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। টানা দুই মাস ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে রপ্তানিতে। বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বরে আগের বছরের একই মাসের চেয়ে রপ্তানি কম হয়েছে ১৪ শতাংশ। পরের মাস অক্টোবরে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ৭ শতাংশ।

হান্নান গ্রুপের চেয়ারম্যান এ বি এম শামছুদ্দিন বলেন, রপ্তানিতে নেতিবাচক ধারা আগামী মাসগুলোতেও অব্যাহত থাকতে পারে। কারণ হিসেবে বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ২৭ দেশের অর্থনীতির মন্থর গতির কথা উল্লেখ করেন তিনি। তাঁর মতে, চাহিদা কমেছে ওই দেশগুলোতে। নিজের কারখানার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, তাঁর গ্রুপের পোশাক রপ্তানি গত অর্থবছরের চেয়ে ৩ কোটি ডলারের মতো কম হবে এ বছর।

বার্তাবাজার/এম আই