অবশেষে ফুরালো অপেক্ষার প্রহর। বাস্তবে রূপ নিলো কক্সবাজারবাসীর ৯২ বছরের লালিত বহুল কাঙ্খিত স্বপ্ন। ১ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টায় ১ হাজার ২০ জন যাত্রী নিয়ে পর্যটন নগরী, সমুদ্র শহর কক্সবাজার থেকে রাজধানী ঢাকার উদ্দেশ্যে ছাড়লো প্রথম ট্রেন। এর মাধ্যমে শুরু হলো বাণিজ্যিকভাবে রেল চলাচল।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার এক্সপ্রেস চট্টগ্রামে বেলা ৩টা ৪০ মিনিটে এবং ঢাকায় পৌঁছবে রাত ৯টা ১০ মিনিটে। পর্যটন শহর থেকে রাজধানী ঢাকা যেতে সময় লাগবে ৮ ঘণ্টা ১০ মিনিট।

ইতিহাসের পাতায় আজীবন লিপিবদ্ধ থাকবে, তাই দিনক্ষণ ঠিক ছিল আগে থেকেই। শুক্রবার সকাল থেকে ব্যস্ততা বাড়ে কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনে। বেলা বাড়তেই আসতে থাকেন কক্সবাজার এক্সপ্রেসের যাত্রীরা। কড়া নিরাপত্তায় তাঁদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় ট্যুরিস্ট পুলিশ ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। যাত্রীদের পাশাপাশি রেল প্ল্যাটফর্মে জড়ো হন স্থানীয়রাও। সবার মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা।

ইতিহাসের স্বাক্ষী হতে পেরে বেশ উচ্ছ্বসিত পর্যটকেরা। তাঁদের অভিমত, ট্রেনে চড়ে কক্সবাজার আসবো বা বাড়ি ফিরবো কখনো চিন্তা করেনি। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ হলো আজ। আশা করছি এখন থেকে ট্রেন হবে নিরাপদ যাতায়াত ও বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম।

কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার গোলাম রাব্বানী জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ নভেম্বর কক্সবাজারে নব নির্মিত আইকনিক স্টেশনে এই রেলপথ প্রকল্পের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী নিয়ে প্রথম ট্রেনটি যাত্রা দিলো ১ডিসেম্বর শুক্রবার ১২ টা ৪০ মিনিটে। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ নামের এই ট্রেনটিতে ২০ টি বগিতে ১০২০ জন যাত্রী রয়েছেন।

তিনি আরও জানান, এ রুটে আপাতত দুটি ট্রেন চলাচল করবে। কক্সবাজার থেকে ট্রেন ছাড়বে বেলা ১২ টা ৪০ মিনিটে। চট্টগ্রাম হয়ে এটি ঢাকায় পৌঁছাবে রাত ৯টা ১০ মিনিটে। অন্যদিকে ঢাকা থেকে ট্রেন ছাড়বে রাত সাড়ে ১০টায়। এটি কক্সবাজার পৌঁছাবে পরদিন সকাল ৭টা ২০ মিনিটে।

তিনি জানান, ট্রেনে এসি স্নিগ্ধা শ্রেণি ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩২৫ টাকা। নন এসি শোভন শ্রেণির ভাড়া ৬৯৫ টাকা। কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের ভাড়া এসি ৪৭০ টাকা এবং নন এসি ২৫০ টাকা।

শুক্রবার যাত্রীবাহি প্রথম ট্রেনের যাত্রাকালে আইকনিক স্টেশনে উপস্থিত ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির। তিনি প্রথম ট্রেনের যাত্রীদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

এসময় তিনি বলেন, ডিসেম্বর মাস জুড়ে কক্সবাজার এক্সপ্রেস চলাচল করবে ঢাকা কক্সবাজার রেলপথে। জানুয়ারি থেকে এই রুটে রেলের সংখ্যা আরো বাড়ানো পরিকল্পনার কথা রয়েছে।

প্রথম যাত্রীবাহি ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ট্রেনের চালক লোকোমাস্টার আব্দুল আউয়াল রানা ও সহকারী লোকোমাস্টার রাকিবুল হাসান রাজু।

লোকোমাস্টার আব্দুল আউয়াল রানা জানান, ইতিহাসের প্রথম কক্সবাজার থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছে ট্রেন। এটি চালানোর একটি ইতিহাসের স্বাক্ষী হলাম, ভালো লাগছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক মো. আপেল মাহমুদ জানান, ট্রেনের প্রথম যাত্রার মধ্য দিয়ে কক্সবাজারে পর্যটকের আগমন অনেক বেশি বাড়বে। তাই পর্যটকের সেবা, নিরাপত্তায় সকল প্রকার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ট্রেনটির যাত্রীরাও কক্সবাজার থেকে ঢাকায় প্রথম ট্রেনের যাত্রাকে আনন্দময় বলে মন্তব্য করেছেন।

চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইন প্রকল্প ২০১০ অনুমোদন পায়। ২০১১ সালে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৬ সালে প্রকল্পটি সংশোধন করার পর গত ১১ নভেম্বর এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই প্রকল্পের খরচ হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। আর রেল লাইনের দৈর্ঘ্য দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার।

বার্তা বাজার/জে আই