আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘যেমন খুশি তেমন প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর শেখ হাসিনা গণভবনে মনোনয়নবঞ্চিতদের সমাবেশে দলীয় প্রার্থীদের একজন করে ডামি প্রার্থী রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। মনোয়নবঞ্চিতদের বলা হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে। বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন। তার মানে নৌকা বনাম আওয়ামী লীগ! নিজেরা নিজেরাই। ব্যাপারটা দাঁড়িয়েছে যেন এরকম : আমি, আমরা আর মামুরা। নির্বাচন হবে আমি আর মামুদের মধ্যে! পাতানো ম্যাচ খেলব দুজন তুমি আর আমি। আর সাইড লাইনে থাকবে টাকার বিনিময়ে খরিদ করা ‘কুইন্স পার্টি’ভুঁইফোড় পার্টির নেতারা।’
সোমবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা সারা পৃথিবীর মানুষকে বোকা বানাতে চান। তবে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ আর আন্তর্জাতিক মহলকে এই হাস্যকর সাজানো নাটক দিয়ে নয়-ছয় বুঝানো সম্ভব নয়। শেখ হাসিনার হাতে বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা পচে-গলে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। নির্বাচনের নামে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের কারাগারে ভরে নির্বাচনী সার্কাস করে লাভ নেই। বারবার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান এবার ঘুঘু বধ করতে ১৮ কোটি জনগণের সঙ্গে আছেন গোটা গণতান্ত্রিক বিশ্ব।’
বিরোধীদলের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীনরা ‘হেট স্পিচ’বা ঘৃণা বক্তব্য দিচ্ছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ‘ক্ষমতা ধরে রাখতে একতরফা নির্বাচনের জন্য এখন বিবেকহীন নিষ্ঠুরতায় বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের ওপর নামিয়ে এনেছেন এক ভয়ংকর দমনপীড়ন। অবিরাম চলছে গ্রেপ্তার অভিযানের লোমহর্ষক ঘটনা। বিএনপি নেতাকর্মীকে ধরার জন্য বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে তাদের না পেলে পিতা, ভাই, আত্মীয়স্বজনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আওয়ামী নাৎসিবাদ এখন বাংলাদেশে জার্মানির মতো হুবহু পৈশাচিকতায় প্রয়োগ করা হচ্ছে। হিটলার যেমন ইহুদিদের বিরুদ্ধে ‘হেট স্পিচ’ অর্থাৎ ঘৃণার বক্তব্য রাখতেন ঠিক তেমনিভাবে শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রীরা বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল বা নাগরিক সমাজের বিরুদ্ধে ‘হেট স্পিচ’ দিয়ে যাচ্ছেন। সরকার প্রধান ‘হেট স্পিচ’ দিচ্ছেন বিএনপি সন্ত্রাস করে, অগ্নিসন্ত্রাসসহ নানা নাশকতা করে। তার এহেন বক্তব্য দেশের জনগণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রত্যেক নাশকতা এবং সন্ত্রাসের উৎস্যভূমি হচ্ছে আওয়ামী লীগ। যার প্রমাণ প্রতিদিন গণমাধ্যমের কোনো না কোনো প্রতিবেদনে প্রকাশ পাচ্ছে।’
কথিত সাংবাদিকের প্রশ্ন বিস্ময় মন্তব্য করে রিজভী আরও বলেন, ‘আজকে টিভিতে একটা সংবাদ সম্মেলন দেখলাম পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করছেন সাংবাদিকরা। প্রথম কথা হলো, পুলিশ-প্রশাসন-র্যাব শেখ হাসিনার কথা শুনছে এবং আজকে যত নিপীড়ন-নির্যাতন তাদের দ্বারা বিরোধীদলকে নির্মূল করার প্রচেষ্টা হিটলারের গেস্টাপো বাহিনীর মতো। কিন্তু আমার সবচাইতে অবাক লেগেছে, এটা একেবারে দৃষ্টান্তহীন আজকে গোয়েন্দা পুলিশ প্রধানকে প্রশ্ন করছেন কথিত সাংবাদিকরা তারা বলছেন, বিএনপির রুহুল কবির রিজভীকে কেনো গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না? এটা আওয়ামী লীগের লোক বললে বলতেই পারে, পুলিশের লোক হলে বলতে পারে কিন্তু সাংবাদিকরা! যুগে যুগে পৃথিবীতে গণতন্ত্র, স্বাধীনতার জন্য সবচাইতে বেশি সেই সমস্ত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কাছাকাছি থাকে তারা হচ্ছেন গণমাধ্যমের লোকেরা। সাংবাদিকরা প্ররোচিত করছে, সাংবাদিকরা জোরাজুরি করছে ওনাকে আপনারা ধরছেন না কেন? আমি গোটা সাংবাদিক সমাজকে বলছি না, কতিপয় সাংবাদিকদের কথা বলছি। ফ্যাসিবাদী কিছু কিছু দোসর তারা যেভাবে কাজ করছেন, প্ররোচিত করছেন পুলিশকে, তাকে ধরা হচ্ছে না কেন? এটা বিরল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে। আমি মনে করি, যেভাবে সাংবাদিক প্রশ্ন করছেন ঊর্ধ্বর্তন পুলিশ কর্মকর্তাদের এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যেখানে গণতন্ত্রের ঘাটতি আছে যেখানে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম হয় সেখানে গণতান্ত্রকামী রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকরাও গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাদের ওপর নানা ধরনের চাপ হয়েছে। এরশাদবিরোধী আন্দোলন সেখানেও দেখেছি আতাউস সামাদের মতো একজন বর্ষিয়ান প্রাজ্ঞ-বিজ্ঞ সাংবাদিক তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু আজকে যেন সমস্ত কিছু পাল্টে যাচ্ছে সাংবাদিক প্ররোচিত করছে গণতান্ত্রিক সংগ্রামে আন্দোলনরত রাজনৈতিক নেতাকে ধরানোর জন্য। দেখুন, কয়দিন আগে গ্রেপ্তার হলাম পাঁচ মাস ছিলাম কারাগারে। তো গ্রেপ্তারের ভয় বা নিপীড়ন নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে আর যাই হোক সবাইকে কাবু করা যায় না। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্ররাজনীতি করে আসছি তখন আমাদের নানা কর্মসূচি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছি, এখন পর্যন্ত অনেকটা সেই কাজ করছি। কিন্তু কখনও দেখিনি এরকম প্রশ্ন করার ঘটনা। আমার রাজনীতির আদর্শের সাথে ভিন্নমত থাকতে পারে কিন্তু গ্রেপ্তার কেন করা হচ্ছে না- এরকম নৈতিকতাহীন ঘটনা কখনও আমি দেখিনি। কয়েকজন সাংবাদিকদের এরকম আচরণ গণতন্ত্রকামী মানুষকে ব্যথিত করেছে।’
বার্তা বাজার/জে আই