মাদারীপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুলের জানালা বন্ধ করে জেলা প্রশাসকের জমি দখল করে মার্কেট নির্মাণ করেছে প্রভাবশালী একটি পরিবার। জানালা খুলতে না পারায় অন্ধকারাচ্ছন্ন ক্লাশ রুমে চলছে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠ দান। বিষয়টি নিয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়নি জেলা বা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। বছরের পর বছর বিদ্যালয়ের জানালা বন্ধ থাকলেও কিছুই জানেনা জেলা প্রশাসকের শিক্ষা শাখা।

মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর বাজারের সাথেই অবস্থিত মস্তফাপুর হাই স্কুল ও ৯৩ নং মস্তফাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের পাশ দিয়েই জেলা প্রশাসনের জমিতে নির্মিত সড়ক। সড়ক ও স্কুলের মাধ্যবর্তী জেলা প্রশাসনের এই এক চিলতে জমিতে স্থানীয় প্রভাবশালী ও সাবেক চেয়ারম্যান আ. রব খান নির্মাণ করেন মার্কেট। সেখানে দোকান ভাড়া দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি। এই মার্কেট করতে গিয়ে মস্তফাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২টি কক্ষের জানালা বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। বর্তমানে এই মার্কেট দেখাশুনা ও ভাড়া উত্তোলন করেন আ. রব খানের ছেলে বর্তমান চেয়ারম্যান সোহরাব খান। স্থানীয়ভাবে এই পরিবারটি প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে এলাকার কেউ কথা বলতে সাহস পায় না।

৯৩ নং মস্তফাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা জানান, আলো কম হওয়ায় তাদের পড়তে ও লেখতে খুবই কষ্ট হয়। এছাড়া প্রচন্ড গরমের মধ্যে তাদের ক্লাশ করতে হয়। এতে লেখাপড়া করতে খুবই কষ্ট হয় শিশুদের।

স্কুলের শিক্ষিকা নুরুন্নাহার জানান, অনেকদিন যাবৎ এই জানালাগুলো বন্ধ। আমরা জানালা খুলতে পারিনা, কারণ স্কুল ভবনের পাশ দিয়ে দোকানগুলো। আগের যারা টিও ও এটিও স্যারেরা ছিল তারা সাবাই দেখেছে। এছাড়া আমাদের কমিটির মিটিং এ আলোচনা হয়েছে। তারা সবাই বলেছে ব্যবস্থা নিবে কিন্তু কোন ব্যবস্থা কেউ নেয়নি। বাচ্চাদের পড়ালেখা করতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। দ্রুত জানালা খুলে দিলে আমরা শিক্ষকরা ও আমাদের শিক্ষার্থীরা স্বস্তি পাব।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কেটের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ২ থেকে ৩ লাখ টাকা এ্যাডভান্স নিয়ে মাসিক আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে তারা এখানে দোকান করছে। আগে ভাড়া নিত আ. রব খান নিজে। কিন্তু বর্তমানে তিনি অসুস্থ্য থাকায় তার ছেলে বর্তমান চেয়ারম্যান সোহরাব খান মাসিক ভাড়া নিচ্ছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তাপস কুমার পাল বলেন, আমি নতুন এসেছি। আমি নিজে গিয়ে স্কুলের বর্তমান অবস্থা দেখে জেলা প্রশাসক স্যারের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিব।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাইনুদ্দিনের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে গণমাধ্যম কর্মিদের সামনেই উপজেলা উপ কমিশনার ভূমিকে তদন্ত করার নির্দেশ দেন ও বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

বছরের পর বছর এভাবে স্কুলের জানালা বন্ধ করে মাকের্ট তৈরি করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিলেও এ বিষয় কিছুই জানে না জেলা প্রশাসনের শিক্ষা শাখা।

জেলা শিক্ষা শাখার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মার্জিয়া সুলতানা জেলা শিক্ষা অফিস ও উপজেলা শিক্ষা অফিস কিছু জানায়নি বলে জানান। তারা বিষয়টি দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে বলে জানান।

বার্তা বাজার/জে আই