সবজি চাষ করে নিজ উপজেলার চাহিদা পূরণ করে অন্যত্র সরবরাহ করতে সক্ষম কুষ্টিয়ার দৌলতপুর। সবজির ভান্ডার খ্যাত এই উপজেলায় এখন লাগামহীন সবজির দাম। এমন পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছে নিম্ন-মধ্যম আয়ের মানুষেরা। এদিকে দাম বাড়ায় কমেছে বিক্রি। কেজি দরে কম এখন পোয়া, গ্রামেই কিনছেন ক্রেতারা।

এদিকে খুচরো বিক্রেতারা বলছেন, সবজির দাম বাড়ায় বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন তাঁরা। তবে লাভ বাড়েনি, কমেছে বিক্রির হার। এদিকে দাম বাড়ার কারণে ক্রয় ক্ষমতা হরিয়ে কেজি ধরে কেনা সবজি পোয়া অথবা গ্রামে কিনছেন ক্রেতারা।

উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, প্রতি বছর এই উপজেলায় সবজি চাষ হয় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে। সেখান থেকে প্রতি বছর সবজি উৎপাদন হয় ১ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিকটন যা স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে উপজেলার বাইরে যায়। উপজেলার তারাগুনিয়া ও খলিশাকুন্ডি বাজার থেকে দিনে কয়েক কোটি টাকার সবজি অন্যান্য জেলা ও উপজেলায় পাঠানো হয়।

৪৬১ বর্গ কিলোমিটার কৃষি নির্ভর এই উপজেলায় প্রায় ৫ লাখের বেশি মানুষের বসবাস। যেখানে একজন মানুষের ন্যূনতম সবজি প্রয়োজন ২৫০ গ্রাম, সেখানে উপজেলাটির দৈনিক চাহিদা ধরা হয়েছে আনুমানিক ১২৫ মেট্রিকটন যার বাৎসরিক চাহিদা ৪৫ হাজার ৬২৫ মেট্রিকটন।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার বড় পাইকারি সবজির বাজার তারাগুনিয়া বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আলু পাইকারি ৫৩ ও খুচরা ৫৫-৬০, পেঁয়াজ পাইকারি ৯২ ও খুচরা ৯৫-১০০, মরিচের পাইকারি ১০০ ও খুচরা ১১৫-১২০, রসুন পাইকারি ২২০ টাকা খুচরা ২৩০-২৪০, কচু পাইকারি ৬০-৬৫ ও খুচরা ৭৫-৮০ টাকা।

শীতকালীন সবজি ফুলকপির পাইকারি দাম ৬০ টাকা ও খুচরা ৭০ টাকা যথাক্রমে মুলা পাইকারি ১৫-২০, খুচরা ২৫, পালং শাক পাইকারি ৪০-৪২ খুচরা ৫০-৫৪ টাকা, লাল শাক পাইকারি ২৫ টাকা খুচরা ৩০ টাকা, তবে বাজারে দেখা মেলেনি শিম, গাজর ও টমেটোর।

এদিকে পটল পাইকারি ৩২ ও খুচরা ৩৫-৪০ টাকা, পেঁপে পাইকারি ১৫ ও খুচরা ২০ টাকা, ওল পাইকারি ৪৫ ও খুচরা ৫৫-৬০ টাকা, কাঁচা কলা পাইকারি ২৮ ও খুচরা ৩৫-৪০, শসা পাইকারি ৪০ ও খুচরা ৪৫-৫০, ধনেপাতা পাইকারি ৮০ ও খুচরা ৯০ টাকা, উস্তে পাইকারি ৭৫ ও খুচরো ৯০-১০০, মিষ্টি কুমড়া পাইকারি ৫০ টাকা খুচরো ৫৫-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বাজারে এ ছাড়া এ ছাড়া লাউ, চালকুমড়া পাইকারি ৩০ টাকা যা খুচরো বাজারে ৩৫-৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

তারাগুনিয়া বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা মতলেব হোসেন বলেন, বাজারে সব সবজির দাম তুলনামূলকভাবে বেশি তবে গত দুদিন একটু কমেছে। দাম বাড়ায় বিক্রিও কমেছে। আগে মানুষ কেজি ধরে কিনলেও এখন পোয়া অথবা গ্রামে মেপে কিনছেন।

বাজারে বেজপুর এলাকা থেকে বাজার করতে আশা সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা নিম্ন আয়ের মানুষ সারা দিনে ইনকাম করি ৫০০ টাকা। বাজারে এসে কী কিনব ভেবে কুল পায় না। মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা কেজি। আর কী কিনে খাব? বড় মাছ-গোস্তো তো ভাবাই যায় না।’

কাইয়ামারি থেকে আশা শামিম নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘বাজারে সবজির এত দাম যে বাজার করা অসম্ভব হয়ে গেছে। এখন ৫০০ গ্রাম অথবা ২৫০ গ্রাম করে কেনা লাগছে, কেজি তো এখন স্বপ্ন।’

উপজেলার ডাংমড়কা থেকে বাজার করতে আশা সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা নিম্ন আয়ের মানুষ। সবজি কিনে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে পর্যাপ্ত সবজির সরবরাহ আছে। এই উপজেলার সবজি বাইরে অন্যান্য উপজেলায় যায়। কয়েক দিনের তুলনায় সবজির দাম কমেছে। দাম যেটুকু বেড়েছে সিন্ডিকেটর কারণে।’

বাজার তদারকির বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘বাজার দর নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিং চলছে।

বার্তা বাজার/জে আই