জনপ্রিয় মটিভেশনাল স্পিকার এটিএম মাহমুদ যিনি এটিএম স্যার নামেও পরিচিত। তিনি বলেন, সন্তানদের প্রতি একটু যত্নবান হতে হবে। তাদের সুযোগ দিতে হবে। মানসিকভাবে চাপ দিলে বড় কিছু করা সম্ভব না-ও হতে পারে। দিনশেষে সবার সফলতার গল্প এক নয়।

সফল হওয়া সহজ না। তবে অবশ্যই অসম্ভব কিছু নয়! অথচ আমাদের অনেকেই হাল ছেড়ে দেয়। আমার সাথে প্রতিদিন এমন কিছু মানুষের দেখা হয় যারা চেষ্টা করার আগেই পরাজয় স্বীকার করে নেয়। তারা কি জানে না? স্বাধীনতার বীর রাজা রবার্ট ব্রুস ইংল্যান্ডের সঙ্গে ছয় বার যুদ্ধে হেরে গিয়ে সপ্তম বারের চেষ্টায় জয়লাভ করেছিলেন।
সফলতা মানে চরম ধৈর্যের পরীক্ষা। ধৈর্যের পাশাপাশি দরকার নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস। আর সেই আত্মবিশ্বাস নিজেদের তৈরি করতে হবে। এটি অর্জনের জন্য একাগ্রতার সাথে পরিশ্রম চালিয়ে যেতে হবে।

পরিশ্রম এবং একাগ্রতা যেকোনো সাফল্যের চাবিকাঠি। কিন্তু এরপরও যখন একজন শিক্ষার্থী চেষ্টা না করেই বলে, স্যার আমার দ্বারা সম্ভব না। তখন আমার মনে হয়, সে তার একদম নিকটে থাকা সম্ভাবনার সূর্যকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। কেননা, আমি বিশ্বাস করি যে আমার শিক্ষার্থী সফলতার একদম দ্বারপ্রান্তে। তার শুধু আরেকটু চেষ্টার দরকার।

এটিএম স্যার একজন শিক্ষার্থীর কথা জানান, সে ছিল খুবই মেধাবী একজন শিক্ষার্থী। কিন্তু তার সবচেয়ে বড় হতাশা ছিল অনেক চেষ্টা করেও সে নামকরা কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে নি। পড়তে হয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই নিয়ে তার আফসোসের শেষ ছিল না। অথচ আমার সেই শিক্ষার্থী আইএলটিএস পরীক্ষায় দুর্দান্ত রেজাল্ট করে এবং সে এখন কানাডার নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে না পারার সেই ব্যর্থতা তার সফলতার পিছনে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।

জনপ্রিয় এই মোটিভেশনাল স্পিকার আরো জানান, আসলে ব্যর্থতার মধ্য দিয়েই সফলতার গল্পগুলো তৈরি হয়। যেমনভাবে আমরা প্রতিদিন আকাশে সূর্যের যে ঝলমলে হাসিটা দেখি, তার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ রাতের অন্ধকারের গল্প ও শীতের রাতে কুয়াশা ভেদ করার গল্প। তেমনিভাবে মানুষকেও তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে অনেক দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হয় এবং অদম্য চেষ্টায় নিজেকে রত করতে হয়। অনেকেই বলেন, স্যার এই বয়সে কিংবা এই স্কিল নিয়ে আমি কী পারবো?
এই প্রশ্নের উত্তরে ক্যারিয়ার বিশেষজ্ঞ এটিএম স্যার বলেন, “মেধা নয়, সৃষ্টিকর্তা সর্বদা পরিশ্রমীদের পক্ষে।“ আমার মনে হয় ব্যর্থতার গল্পগুলো যাদের যত বেশি, সফলতা তাদের তত কাছে। তাই কোন অবস্থাতেই হাল ছাড়া উচিত নয়। নিজেকে একটা গণ্ডির মাঝে কোন অবস্থাতেই বেঁধে ফেলা উচিত হবে না। পৃথিবীটা অনেক বড়, আর তার থেকেও বড় মানুষের স্বপ্ন। আর সেই স্বপ্নকে ছুঁতে হলে আমাদের অর্জুনের মতো করেই লক্ষ্যভেদ করতে হবে।

সর্বোপরি এটিএম স্যার আরো বলেন,সবার আগে ‘হতাশা’ থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এই শব্দটি ছোট হলেও এর ব্যাপকতা অনেক। একটা দীর্ঘ জীবন নষ্ট করতে এটিই যথেষ্ট। শয়তান আমাদের মনের গহীনে যে উছিলায় সর্বপ্রথম প্রবেশ করে, তার নাম হতাশা। হতাশা বড় ভয়ংকর। যখনই মনে হতাশা আসবে, নিজেকে নিজেরই সান্ত্বনা দিতে হবে। হতাশা একবার কাটিয়ে উঠতে পারলে তুমিই হবে বিশ্বসেরা।