ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় দূর্গাপূজা উপলক্ষে ৪৭টি মন্দিরে সরকারি বরাদ্দের ২৩.৫ মেট্রিক টন চালের বিপরীতে অর্থ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে একটি সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে। সরকারিভাবে ৪৪ টাকা কেজি দরে চাল ক্রয় করা হলেও ওই সিন্ডিকেট চক্র উপজেলার মন্দির কর্তৃপক্ষদের কাছে কেজি প্রতি ৩৬.৫০ টাকা দরে অর্থ প্রদান করেন। এতে সরকারি অনুদান থেকে ১ লক্ষ ৭৬ হাজার ২৫০ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি সিন্ডিকেট চক্র। এ নিয়ে উপজেলা জুড়ে মন্দির কমিটিগুলোর মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলফাডাঙ্গা উপজেলায় এবার ৬টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ৪৭টি মন্দিরে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিবছরের মত এবছরও সরকারিভাবে দূর্গা মন্দির কমিটিগুলোকে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এ উপলক্ষে মন্দির প্রতি পাঁচশত কেজি করে মোট ২৩.৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী প্রতিটি মন্দিরের অনুকূলে পাঁচশত কেজি চালের ডিও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিস থেকে প্রদান করা হয়। কিন্তু উপজেলায় চাল ক্রয় বিক্রয়ের জন্য গড়ে ওঠা একটি সিন্ডিকেট চক্র মন্দির কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছ থেকে কম মূল্যে এসব চাল কিনে নিচ্ছেন।

উপজেলার কয়েকটি মন্দির কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক জানান, প্রতিটি মন্দির কমিটিকে চাল ক্রয়কারী সিন্ডিকেট চক্র ৫০০ কেজি চালের বিপরীতে ১৮ হাজার ২৫০ টাকা করে প্রদান করেন। সিন্ডিকেট চক্রটি সরকারি মূল্যের ৪৪ টাকা কেজির চাল ৩৬.৫০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করে তা বিতরণ করায় কেজি প্রতি ৭.৫০ টাকা করে হাতিয়ে নেন। সে হিসাবে প্রতি ৫০০ কেজিতে ৩ হাজার ৭৫০ টাকা সিন্ডিকেট চক্র হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মন্দির কমিটির সভাপতি জানান, ‘আমরা মন্দির প্রতি চাল বিক্রয়ের ১৮ হাজার ২৫০ টাকা পেয়েছি। এর থেকে আবার উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ পূজা পরবর্তী পূর্ণমিলনীর জন্য মন্দির প্রতি ৬০০ টাকা করে কেটে রেখেছে।’

আলফাডাঙ্গা উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি প্রবীর কুমার বিশ্বাস জানান, ‘এবছর উপজেলায় ৪৭টি মন্দিরে ৫০০ কেজি করে মোট ২৩.৫ মেট্রিক টন (২৩ হাজার ৫০০ কেজি) চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু মন্দির কর্তৃপক্ষ চালের পরিবর্তে টাকা নিতে ইচ্ছুক থাকায় চাল বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। সরকার নির্ধারিত কেজিপ্রতি চালের দাম ৪৪ টাকা থাকলেও ৩৬.৫০ টাকার উপরে কোন ক্রেতা পাইনি। তাই বাধ্য হয়েই ইমরুল মোল্যা ও সমর কুমার কুন্ডু ভজন নামে দুই ব্যবসায়ীর নিকট কম দামে চাল বিক্রয় করতে হয়েছে। প্রতিবছরই এমনটা হয়ে আসছে।’

এ প্রসঙ্গে চাল ক্রয়কারীদের মধ্যে একজন ইমরুল মোল্যা জানান, ‘আমি নিয়ম অনুযায়ী নগদ টাকা দিয়ে চাল ক্রয় করেছি। বর্তমানে বাজারে চালের মূল্য একটু কম থাকায় কম দামে কিনেছি।’

তবে অপর ব্যক্তি সমর কুমার কুন্ডু ভজন মন্দিরের চাল ক্রয়ের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি কোন মন্দিরের চাল ক্রয় করিনি। আমি নিজেই একটি মন্দিরের সভাপতি। তাই আমার মন্দিরের চাল বিক্রয় করিনি।’

এবিষয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল হক বলেন, ‘সরকারের বরাদ্দকৃত চাল বিতরণ করা আমাদের দায়িত্ব। তবে মন্দির কমিটি কার কাছে চাল বিক্রি করলো এটা দেখার দায়িত্ব আমাদের না।’