কিশোরগঞ্জের ভৈরবে প্রতিনিয়তই কলি বেগম নামে ১৭ বছরের এক বাসার কাজের মেয়েকে শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন করতো আমেরিকা প্রবাসী রুমি মিয়ার স্ত্রী নাবিলা বেগম। দীর্ঘ নয় মাস আগে ৫বছরের মৌখিক চুক্তিতে এতিম মেয়েটিকে নিজ বাসায় কাজ করার জন্য নিয়ে আসেন অভিযুক্ত নাবিলা বেগম। বিনিময়ে তাকে দেয়া হতো মাসে ১ হাজার টাকা। সামান্য ভুল হলেই কাজের মেয়ে কলির উপর চলতো অমানুষিক নির্যাতন। কলি বেগমের মা বাবা কেউ বেঁচে নেই। তার গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার শারফিন বাজার গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত দুলাল মিয়া।

আজ শুক্রবার বেলা আনুমানিক ১২টার দিকে বাসার কাজের মেয়ে (এতিম বালিকা) কলির উপর অমানুষিক নির্যাতন চালায় কিশোরগঞ্জের ভৈরবে শহরের চন্ডিবের দক্ষিণপাড়ার আমেরিকা প্রবাসীর স্ত্রী নাবিলা বেগম। অতিরিক্ত নির্যাতনে কলির শরীর ও মাথায় মারাত্মক রক্ত জখম হওয়ায় পাশ্ববর্তী বাড়ির রায়হান মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে দিয়ে পাঠানো হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। নির্যাতনের কথা গোপন রেখে রায়হান কর্তব্যরত চিকিৎসককে বলেন সিঁড়ি থেকে পড়ে এঘটনা ঘটেছে। শরীরের আঘাতের আলামত পেয়ে ভুক্তভোগী কলির কাছ থেকে তিনি জানতে পারেন নির্যাতনের লোমহর্ষক ঘটনা।
এঘটনার খবর পেয়ে শুক্রবার বেলা ১টার দিকে সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখাযায়, নির্যাতনের শিকার আহত কলি বেগমের মাথায় সেলাই করে ও হাতে বেন্ডেজ করা হচ্ছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে মেয়েটিকে হাসপাতালে ভর্তি দেয়া হয়েছে।

চিকিৎসার সময় অসহায় কলিকে হাসপাতালে নিয়ে আসা রায়হান নামের ব্যক্তিটি পাশে দাঁড়িয়ে আছে। রায়হান মিয়া জানায়, অভিযুক্ত নাবিলা বেগম তাকে দিয়ে মেয়েটিকে হাসপাতালে পাঠায় এবং বলেন মেয়েটি সিঁড়ি থেকে পড়ে যায়। এসময় রায়হান মিয়া মেয়েটিকে নাবিলার বাসায় নিয়ে যেতে চাইলে মেয়েটি ভয়ে বাসায় যেতে রাজি হয়নি। এঘটনা জানতে রায়হান মিয়াকে নাবিলা বেগমের ফোন নাম্বার চাইলে ভয়ে সে এ প্রতিনিধিকে নাম্বার দেয়নি।

নির্যাতিত কলি বেগম জানায়, প্রতিদিনই তাকে কোননা কোনভাবে নির্যাতন করতো আমেরিকা প্রবাসীর স্ত্রী নাবিলা বেগম। আজ শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে মাংস রান্নার জন্য ফ্রিজ থেকে মশলা নামাতে বলে। সে মশলা নামায়। মসলা গলতে দেরি হওয়ায় তাকে চুলের মুঠি ধরে মারে এবং রান্নাঘরের লোহার খনতি দিয়ে আঘাত করে মাথা ফাটিয়ে রক্তাক্ত জখমসহ খনতির আঘাতে হাতে রক্তাক্ত জখম ও শরীরে বিভিন্ন স্থানে ফোলা জখম করা হয়েছে।
কলি জানান, সে আর ওই বাসায় কাজ করবেনা। নির্যাতনকারী মহিলা নাবিলার শান্তি ও বিচার দাবি করেন।

এবিষয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা: রওশন আরা নিপা জানান, আজ বলে পৌনে ১টার দিকে এক ব্যক্তি কলিকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তার প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ভর্তি দিয়েছি। মাথায় তিনটি সেলাই লেগেছে। হাতে ও শরীরের ইনজুরি রয়েছে। কলির কাছ থেকে জানতে পারি সে যে বাসায় কাজ করতো সে বাসার মালিক নাবিলা বেগম তাকে প্রায়ই নির্যাতন করতো। আজও তাকে নির্যাতন করে গুরুতর আহত করেন।

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজকে অবগত করা হলে তিনি বলেন, হাসপাতালে গিয়ে মেয়ের সাথে কথা বলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বার্তা বাজার/জে আই