মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৬২ জন নার্স-ডাক্তারের বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার (ইউএইচএফপিও) পদ শূন্য থাকায় গত ৩ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না তারা। এতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন নার্সরা। এ নিয়ে যেন কোন মাথা ব্যথাই নেই উর্ধতন কর্মকর্তাদের। এ ব্যাপারে ডাইরেক্টর জেনারেল (ডিজি) বরাবর আবেদন পাঠিয়েও কোন সমাধান পাচ্ছেন না তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২২ জন ডাক্তার ও ৪০ জন নার্স কর্মরত আছেন। এ হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রদীপ চন্দ্র মন্ডল পদোন্নতিজনিত বদলি হয়। কিন্তু তাহার কর্মস্থলে স্বাস্থ্য বিভাগ নতুন কোনো কর্মকর্তার নিয়োগ না দেওয়ায় তিনি গত ২৫শে জুন-২০২৩ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. খন্দকার আমিনা নুসরাত জাহান (ইপি) এর নিকট তার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে নতুন কর্মস্থলে চলে যান।

এরপর ওই শূন্য পদে নতুন কোন কর্মকর্তা যোগদান না করায় প্রশাসনিক জটিলতা দেখা দেয়। মেডিকেল অফিসার নুসরাত জাহানকে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হলেও তাকে আর্থিক ক্ষমতা প্রদান করা হয়নি। ফলে তার স্বাক্ষরে অফিসিয়াল অন্যান্য কাজ হলেও বেতন উত্তোলন সম্ভব হচ্ছে না।

এ কারণে ডাক্তারদের ৪ মাস ও নার্সদের মধ্যে কারো ৩ মাস কারো ২ মাস যাবত বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। কবে তারা বেতন পাবেন তাও কেউ বলতে পারছেন না। এ নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নার্সরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মোঃ শামিউল ইসলামের ২৩ জুলাই-২০২৩ তারিখে স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে জানা যায়, সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. শশাঙ্ক চন্দ্র ঘোষকে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) (পদের আইডি নম্বর ৫৩৪৬৭) হিসেবে বদলি করা হয়েছে। কিন্তু তিনি নতুন কর্মস্থলে জয়েন করেনি।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্সিং সুপার ভাইজার বিভা রানী বাড়ৈসহ একাধিক নার্স জানান, সিনিয়র স্টাফ নার্সসহ আমরা মোট ৪০ জন নার্স এ হাসপাতালে কাজ করি। এদের মধ্যে কেউ ৩ মাস আবার কেউ ২ মাস ধরে বেতন পায় না। ডাক্তাররাতো আদালা চেম্বার করে তাই তাদের তেমন সমস্যা হয় না। কিন্তু আমাদের সংসার তো এই বেতনেই চলে। আমরা ইতোমধ্যে অনেক দেনাও হয়েছি। ভারপ্রাপ্ত ইউএইচএফপিও’কে স্যারকে মাঝে মাঝেই বলি, তিনি শুধু বলেন সমাধান হয়ে যাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ডাক্তার জানান, আমরা ‘মে’ মাস থেকে বেতন পাচ্ছি না। আইনগত জটিলতার কারণে আমরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছি।

এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.খন্দকার আমিনা নুসরাত জাহান (ইপি) বলেন, আমি ডিজি বরাবর আবেদন পাঠিয়েছি এবং এখানে নতুন কাউকেও নিয়োগ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু কাউকে নিয়োগ না দেওয়ায় আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি। তবে আসা করি দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে আর আমরা বেতনও পাবো।

ডা. শশাঙ্ক চন্দ্র ঘোষের কাছে রাজৈর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান না করার কারণ জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমার ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে অন্য জায়গায় বদলি হয়েছি।

মাদারীপুর সিভিল সার্জন ডা.মোঃ মনির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আগের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বদলি হয়ে যাওয়ার কারণে সমস্যা হয়েছে। নতুন কর্মকর্তা আসলে ঠিক হয়ে যাবে।

বার্তা বাজার/জে আই