কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় বিদ্যুৎ চলে যাওয়া মানেই ৩৩ কেভি সমস্যা। বিদ্যুৎ অফিসে ফোন করে বিদ্যুৎ নেই কেন জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষের বরাবরই থাকে ৩৩ কেভিতে সমস্যা। এতে সাধারণ মানুষের মনে জন্ম দিয়েছে ৩৩ কেভি নিয়ে নানা প্রশ্ন। পাশাপাশি ক্ষোভে ফুঁসে উঠছে পুরো উপজেলাবাসী। হঠাৎ লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। এদিকে প্রচণ্ড গরমে বিদ্যুৎহীন পাকুন্দিয়াবাসীকে পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে বৃদ্ধ ও শিশুরা।

ঘেমে জ্বর-কাশিসহ ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তারা। এছাড়া চলমান এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরাও ঠিকমতো পড়ালেখা করতে পারছেন না। আউশ ও রোপা আমনের ক্ষেতে সেচ দিতে সংকটে পড়েছেন কৃষক।

আর সারা দিনে ঘনঘন বিদ্যুৎ যাওয়া আসা লেগেই আছে। এতে এখানকার গ্রাহকদের বিদ্যুৎ ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক জিনিসপত্র প্রতিনিয়তই নষ্ট হচ্ছে।

পাকুন্দিয়া উপজেলা জোনাল অফিসের বিদ্যুৎ গ্রাহকেদের অভিযোগ দিনের ডাকেই বিদ্যুতের লাইন বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যুতের চরম বিপর্যয় দেখা দিয়েছে এ উপজেলার গ্রাহকদের। বিদ্যুতের কোনো ঘাটতি না থাকলেও প্রতিদিন বিদ্যুতের অব্যবস্থাপনায় গ্রাহকেরা বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন।

পৌর সদরের বাসিন্দা মোঃ নয়ন মিয়া বলেন, সারাদিনে কতবার বিদ্যুৎ যায়, তার হিসাব নেই! তার ওপর শুধু রাতেই ৩-৪ বার লোডশেডিং হচ্ছে।

কোনো কোনোদিন রাত থেকে ভোর পর্যন্ত থাকছে না বিদ্যুৎ। ফলে গরমে আমার পরিবারের কেউই ঠিকমতো ঘুমাতে পারছেন না। আমার আড়াই বছরের ছোট নাতিকে নিয়ে বিপাকে আছি। কেননা, রাতে বিদ্যুৎ না থাকলে ঘেমে ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে। একই সমস্যায় গ্রামের প্রায় সব পরিবার। ঘন ঘন এমন লোডশেডিংয়ে গ্রামের মানুষজন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। দিনে যেমন-তেমন কিন্তু, রাতে লোডশেডিং বন্ধ রাখা গেলে মানুষজন শান্তিতে অন্তত ঘুমাতে পারবে।

উপজেলার পোড়াবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা সৈয়দ মিয়া বলেন, আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ যায় না মাঝে মধ্যে আসে, দিনে ৪/৫ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, এমন লোডশেডিং আগে কখনও দেখিনি। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি ভোগান্তির মধ্যে আছেন। সারাদিন পরিশ্রম করে রাতে ঘুমানোর সময় বিদ্যুৎ না থাকায় দিনে ঠিক মতো কাজ করা যাচ্ছে না।

তবে পাকুন্দিয়া পৌর সদরের বাসিন্দা আল মামুন বলেন, পাকুন্দিয়া বাজার ও আশপাশে একটু লোডশেডিং কম দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু, আগের তুলনায় লোডশেডিং কিছুটা বাড়ানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে পাকুন্দিয়া জোনাল অফিসের উপ মহাব্যবস্থাপক মোহাঃ শহীদুল আলম বলেন, পাকুন্দিয়া উপজেলায় ৭২ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ১৬ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে ০৭/০৮ মেগাওয়াট, তাইতো প্রতিনিয়ত ০৮/০৯ মেগাওয়াট ঘাটতি ও ৩৩ কেভি সমস্যা থাকায় লোডশেডিংয়ের সমস্যা হচ্ছে। তবে সমাধানে যথাসম্ভব চেষ্টা করছি।

গত ২৪ আগস্ট পাকুন্দিয়া পৌর সদরের জন্য আলাদা লাইন ও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবিতে পাকুন্দিয়া বাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এলাকাবাসীর পক্ষে পৌর সদরের কুড়তলা গ্রামের হৃদয় হোসেন এবং গত বছরের ২৩ অক্টোবর এলাকাবাসীর পক্ষে পৌর সদরের আনোয়ার খালী গ্রামের শাহীন আলম জয়।

এদিকে বিদ্যুতের এই ভেলকিবাজিতে আবারো গ্রাহকেরা অতিষ্ঠ হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অফিস ঘেরাও, মানববন্ধনসহ বড় আন্দোলন করার হুমকি দিচ্ছেন।

বার্তাবাজার/এম আই