কক্সবাজারের রামুতে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে এক প্রবাসীর স্ত্রীকে বেধড়ক পিটিয়ে ঘাড় ও হাতের হাড় ভেঙ্গে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। ছিনিয়ে নিয়েছে নিত্য ব্যবহৃত কয়েক ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার। এই ঘটনার তিন দিন গত হলেও বিভিন্ন অজুহাতে কালক্ষেপণ করে মামলা নেয়নি পুলিশ। অবশেষে বিজ্ঞ আদালতের দ্বারস্থ হয়ে তিন জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন ভূক্তভোগী নারী।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম তদন্তের স্বার্থে মামলা রুজু করতে কালক্ষেপণ হয়েছে বলে জানান। তবে ভূক্তভোগী চাইলে আদলতের দ্বারস্থ হতে পারেন বলেও পরামর্শ দেন তিনি।

গত ২৬ আগষ্ট বিকেলে আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ফেরার পথে রামু রশিদ নগর ইউনিয়নের উত্তর কাহাতিয়া পাড়ায় এই ঘটনা ঘটে।

হামলাকারীরা ওই এলাকার মঞ্জুর মোর্শেদের ছেলে। আহত তাসলিমা নূর শিউলী একই এলাকার প্রবাসী মাহমুদুল হকের স্ত্রী।

গুরুতর আহত তাসলিমা নুর শিউলী জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে সে তার চাচার বাড়ি থেকে ফেরার পথে মঞ্জুর মোর্শেদ (৬৮) এবং তার দুই ছেলে মোয়াজ্জেম মোর্শেদ (৩০) ও রায়হান মোর্শেদ (২৮) পথ রোধ করে। এসময় মোয়াজ্জেম মোর্শেদ ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তাসলিমার গলায় ও হাতে থাকা স্বর্ণের চেইন সহ লকেট ও দুই হাতের চুড়ি ছিনিয়ে নেয়। তাসলিমা বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে হাতে থাকা দা দিয়ে মোয়াজ্জেম মোর্শেদ ও রাইহানুল মোর্শেদ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে। পার্শ্ববর্তী লোকজন এগিয়ে আসলে তারা পালিয়ে যায়।

এই বিষয়ে মোয়াজ্জেম মোর্শেদ এর কাছে জানতে চাইলে তিনি ঘটনা অস্বীকার করেন এবং এই ঘটনার ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না বলে দাবী করেন।

কক্সবাজার সদর হাসপাতাল সূত্র জানায়, রডের আঘাতে বাম হাতের কব্জি ও ঘাড়ের হাড় ভেঙ্গে দুই টুকরো হয়ে গেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে।

ভূক্তভোগীর ভাই জুনাইয়েদ ইসলাম বলেন, ঘটনার দিন একটি অভিযোগ পত্র নিয়ে রামু থানায় গেলে দায়িত্বরত কর্মকর্তা পরের দিন সকালে আসতে বলে। পরের দিন অভিযোগ পত্র জমা দিতে গেলে তারা বিভিন্ন বাহানায় কালক্ষেপণ করে সন্ধ্যায় যোগাযোগ করতে বলে। রাতে থানায় গিয়ে ওসির সাথে সাক্ষাত করলে তিনি বিভিন্ন অজুহাতে মামলা নিতে আপারগতা জানায়।

ভূক্তভোগী পরিবারের দাবী- ঘটনার দিন সন্ধ্যায় রামু থানার এএসআই ইমদাদুল হক মিলন নামের এক পুলিশ কর্মকর্তা কয়েক জন কনেস্টেবল সহ গিয়ে ভূক্তভোগীর মেয়েকে মামলা না করার জন্য হুমকি দেন। এতে ব্যর্থ হয়ে প্রতিপক্ষের লোক জন মোটা অংকের বিনিময়ে ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় হাইব্রীড নেতাদের ম্যানেজ করে। তারা রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে থানা পুলিশকে মামলা গ্রহনে বিরত রাখে।

থানায় মামলা করতে ব্যর্থ হয়ে গতকাল সোমবার কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ভূক্তভূগী বাদী হয়ে মোয়াজ্জেম মোর্শেদ, রায়হান মোর্শেদ, মঞ্জুর মোর্শেদ কে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইকবালুর রশিদ আমিন জানান, আদালত মামলা আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, গত ৯ জুলাই আকস্মিক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ দলবল নিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় মঞ্জুর মোর্শেদ, মোয়াজ্জেম মোর্শেদ ও রায়হান স্থানীয় রশিদ আহমদের জমি জবর দখলের চেষ্টা করে। তাসলিমার বাবা রশিদ আহমদ বাধা দিতে গেলে মোয়াজ্জেম মোর্শেদ নিজেকে আওয়ামীলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে তাকেও শাররিকভাবে লাঞ্চিত করে এবং কুপিয়ে হত্যার হুমকি দেয়। পরে রামু থানার পুলিশ টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে সেখান থেকে রশিদকে উদ্ধার করে এবং সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।

এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে অতি দ্রুত অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনার দাবী জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও নারী নেত্রী নাজনীন সরওয়ার কাবেরী।

বার্তাবাজার/এম আই