রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দিয়েও মেধাতালিকায় সুযোগ পেয়ে যান এক ভর্তি পরীক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত পর্যায়ের ভর্তি প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করে ফেলে সেই শিক্ষার্থী। তবে, প্রক্সিকান্ডের হোতাদের কাছে বাকি টাকা পরিশোধ না করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলে জিম্মি করে রাখা হয় সেই ভর্তি পরীক্ষার্থীকে।
জানা গেছে, সেই ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর নাম আহসান হাবীব। তিনি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার সাইফুল ইসলাম এবং রেহেনা বেগম দম্পতির সন্তান।
বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) রাতে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলে জিম্মি থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আহসান হাবীব ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি করেন, সেই সাথে মেধাতালিকাতেও তার নাম চলে আসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গত ১৩ আগস্ট সি ইউনিটের মেরিট লিস্ট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তিনি পপুলেশন সায়েন্স এ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছেন। গতকাল (১৭ আগস্ট) মায়ের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ভর্তি হন এই শিক্ষার্থী। পরে, তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা ফজলুল হক হলে আটকে রাখা হয়।
আহসান হাবিবের বাবা সাইফুল ইসলাম জানান, “প্রক্সির বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। আমার ছেলে নাকি টাকা দিয়ে ভর্তি হয়েছে শুনলাম। গতকাল আমাকে মুশফিক তন্ময় এবং প্রাঙ্গন ফোন দিয়ে তিন লাখ টাকা দাবি করে। আমার ছেলেকে তারা শেরে বাংলা হলে কিডন্যাপ করে রেখেছিল। এদের সকলের বিরুদ্ধে আমি অভিযোগ জানাবো।”
শের-ই-বাংলা ফজলুল হক হলে প্রক্সির জন্য চুক্তির বাকি টাকা দেওয়ার জন্য আহসান হাবিবকে চাপ দিতে থাকেন সনেট এবং প্রাঙ্গন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ।
ঘটনা সম্পর্কে রাজু আহমেদ বলেন, “প্রাঙ্গণ ও সনেট ওই ছাত্রকে নিয়ে আমার হলে আসেন। হলের বঙ্গবন্ধু কর্নারের পাশেই একটা ছোট্ট করিডোরে ওরা আহসান হাবিবের সাথে এসব বিষয়ে কথা বলতে থাকে। আমি খবর পেয়ে সেখানে যাই, এবং প্রক্সির বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গেই ওদেরকে হল ত্যাগ করতে বলি। হলের প্রভোস্ট স্যার আমার কাছে বিষয়টি জানতে চান এবং ওদেরকে এক পর্যায়ে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির কাছে তুলে দেই। এখানে আমি কোনোভাবেই জড়িত ছিলাম না; বরং আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সাহায্য করেছি।”
এদিকে, রাজশাহী নগরীর মতিহার থানার এই ঘটনার প্রেক্ষিতে দুটি মামলা হয়েছে। জালিয়াতি করে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী আহসান হাবিব ও তাকে সহায়তাকারী রাবি ছাত্রলীগের নেতাসহ মোট ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। শুক্রবার (১৮ আগস্ট) সকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম ও আটক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর মা রেহেনা বেগম জড়িতদের নাম উল্লেখ নগরের মতিহার থানায় পৃথক দুটি মামলা করেছেন।
মামলার আসামিরা হলেন ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে জালিয়াতি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থী মো. আহসান হাবিব (১৯), আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. প্রাঙ্গন (২২), রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক মুশফিক তাহমিদ তন্ময় (২৪), বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই- বাংলা হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী রাজু আহমদ (২৩), মো. সাকিবসহ (২৪) আরো অজ্ঞাতনামা ২/৩ জন।
মামলার এজহার সূত্রে জানা গেছে, আহসান হাবিব প্রক্সির মাধ্যমে রাবিতে ভর্তির বিষয়টি স্বীকার করেছেন। প্রক্সি চক্রের একটি গ্রুপের সঙ্গে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা চুক্তি করে আহসান হাবীব। এর প্রেক্ষিতে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা নগদ ও ৬০ হাজার টাকার চেক পরিশোধ করেন তিনি। ভর্তি পরবর্তীতে বাকি টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভর্তি শেষে বাকি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে আটক রেখে শিক্ষার্থীর বাবার কাছে আরও ৩ লাখ টাকা দাবি করে ওই প্রক্সি চক্র। তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতনও করা হয়।
এ বিষয়ে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন বলেন, “ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি সন্দেহে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একজনকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। এ বিষয়ে রাবি প্রশাসন ও আটককৃত আসামীর মা পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে।”
বার্তা বাজার/জে আই