সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক কান ও গলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিশিষ্ট সমাজসেবী ডা. নুরুল হুদা নাঈম বলেছেন, বিশ্বে মহামারীর মত রূপ নিচ্ছে হেড-নেক ক্যান্সার। রোগটির লক্ষণ দেরিতে প্রকাশ হওয়ার কারণে এটি নিরব ঘাতক হিসেবে কাজ করে। তাই হেড-নেক ক্যান্সার প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ করা উত্তম। এজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। একমাত্র সচেতনতার মাধ্যমে ৫০ শতাংশ ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব।

শনিবার (২৯ জুলাই) বিশ্ব হেড-নেক ক্যান্সার দিবস উপলক্ষে বেলা ২টায় সিলেট নগরীর একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য উপস্থাপন করেন।

ডা. নুরুল হুদা নাঈম বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে মানব মৃত্যুর প্রথম কারণ হৃদরোগ। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে ক্যান্সার। ক্যান্সারের মধ্যে ২০০ প্রকার রয়েছে। এরমধ্যে হেড-নেক ক্যান্সারের অবস্থান আগে ছিল সপ্তম। বর্তমানে এটি চতুর্থ স্থানে রয়েছে। তাই এ বিষয়টি চিকিৎসকদের ভাবিয়ে তুলছে। সকলকে সচেতন না হলে তা মহামারী আকারে রূপ নেবে।

ডা. নাঈম বলেন, এ রোগের লক্ষণ দেরিতে ধরা পড়ে। যার কারণে মানুষ বুঝতে পারে না ক্যান্সার আক্রান্ত কি-না। যখন বুঝতে পারে তখন অনেকের পক্ষে আর কিছুই করার থাকে না। তাই প্রাথমিকভাবে কোনো উপসর্গ যেমন মুখে বা জিহ্বায় ক্ষত, গলার বাইরে টিউমার বা গোটা, নাক-মুখ-কান দিয়ে রক্ত পড়া, স্বর ভঙ্গ হওয়া, খাবার গিলতে অসুবিধা হওয়া -এরকম কোনো লক্ষণ দেখা দিলেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে খুব বেশি।

ডা. নুরুল হুদা আরও বলেন, হেড নেক ক্যান্সার প্রতিরোধ করা প্রতিকারের চেয়ে ভালো। প্রতিরোধে ৫০ শতাংশ ক্যান্সার জয় করা সম্ভব। কিছু দিন আগেও ক্যান্সার শব্দটি মানুষের কাছে ছিল আতঙ্কের বিষয়। এখন আর তেমনটি নয়। সচেতনতার মাধ্যমে ক্যান্সার আক্রান্ত অনেক রোগী ভালো হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন।

তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে প্রায় দুইশ ধরণের ক্যান্সারের মধ্যে স্তন, ফুসফুস, জরায়ু ও কলোরেক্টাল ক্যান্সার বেশি। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় ফুসফুসে ক্যান্সার আক্রান্তদের। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কলোরেক্টাল ক্যান্সার। আর হেড-নেক ক্যান্সারের অবস্থান চতুর্থ। বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৩ থেকে ১৫ লক্ষ মানুষ ক্যান্সার আক্রান্ত হচ্ছেন। আর ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় প্রায় ২ লাখ মানুষের। তবে আশার বিষয় হলো হেড-নেক ক্যান্সার হাইলিকিউরেবল অর্থাৎ চিকিৎসায় ভালো হয়। ৩৫ থেকে ৫০ শতাংশ ক্যান্সার প্রতিরোধযোগ্য। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে পারলে একটি বড় অংশকে ক্যান্সারের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব।

ডা. নুরুল হুদা নাঈম আরো জানান, তাঁর সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান এনজেএল-য়ে হিয়ারিং স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। সেখানে বাচ্চা জন্মের পর কানে শুনে কিনা তা পরীক্ষা করা যায়। এছাড়া জন্মবধির শিশু বা যে কোন বয়সের মানুষের কানে শোনার বিষয়টি পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করে যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে এদেরকে মূল শ্রোতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

তামান্না আক্তার তমনের চমৎকার উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহিত চৌধুরী, সিলেট প্রেসক্লাবের সহ সভাপতি আব্দুল হান্নান, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শাহ দিদার আলম নবেল, এনজেএল ফাউন্ডেশনের সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল মুকিত অপি, সাংবাদিক শমেরন্দ্র বিশ্বাস সমর

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এনজেএল ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যাডভোকেট রেজাউল করীম তালুকদার, অ্যানেশথেসিয়া কনসালটেন্ট ডা. এইচ আহমদ রুবেল।

উল্লেখ্য ডা. নুরুল হুদা নাঈম এনজেএল ফান্ডেশনের চেয়ারম্যান। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হেড-নেক ক্যান্সারে আক্রান্ত অনেক গরিব ও অসহায় মানুষকে সেবা দেওয়া হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে বেশ কয়েকজন হেড-নেক ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে হেড-নেক ক্যান্সারে লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেন ডা. নুরুল হুদা নাঈম।

বার্তা বাজার/জে আই