পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় জাল জন্ম সনদে স্কুলে ছাত্র ভর্তি করার অভিযোগ উঠেছে। পিতার অগোচরে ওই ছাত্রের নানা, পিতা সেজে ও নানি মাতা সেজে ছাত্রের নাম পরিবর্তন করে স্কুলে ভর্তি করান। অথচ ওই ছাত্রের পূর্বের জন্ম নিবন্ধন পত্রে জন্মাদাতা বাবা ও জন্মধাত্রী মায়ের নাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অভিযোগ কারীর পক্ষে রবিউল ইসলাম স্বাক্ষরিত অভিযোগ পত্রের মাধ্যমে জানা যায় বিবাদীরা অন্যায় ভাবে শিশু মাহাফুজের বাবা মায়ের পরিচয় মিশিয়ে নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার পায়তারা করেছেন।

তেতুলিয়া উপজেলার ৫ নং বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের রাজুগছ গ্রামের কামরুজ্জামান ও লিপি বেগমের উরশে জন্ম নেয় মোঃ মাহাফুজ হাসান। কামরুজ্জামান ও লিপি বেগমের দাম্পত্য জীবনের কলহের ফলে গত ২০১৭ সালে পঞ্চগড় জেলা জজ আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। কিন্তু আদালতের নির্দেশে কামরুজ্জামানকে প্রতিমাসে সন্তানের ভরণপোষনের জন্য ১৮০০ টাকা করে দেয়ার আদেশ প্রদান করা হয়। সেই আদেশের প্রতি সম্মান রেখে কামরুজ্জামান প্রতিমাসে সন্তানের ভরণপোষণের জন্য মাসিক ১৮০০ টাকা করে আদালতের মাধ্যমে সন্তানের মা লিপি বেগম প্রদান করে আসছেন।

জন্মসনদের বিবৃত্তিতে জানা যায় মো: মাহাফুজ হাসান গত ০৮-০৫-২০১৫ ইং তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। যার জন্ম নিবন্ধন বহি ০৯, নিবন্ধনের তারিখ ০৪-০১-২০১৮, জন্ম নিবন্ধন ইস্যুর তারিখঃ ০৪-০১-২০১৮, জন্ম নিবন্ধন নম্বরঃ ২০১৫৭৭১৯০৫৪১০১৯৪০।

শিশু মাহাফুজের বর্তমান ঠিকানা একই গ্রামের আব্দুল জব্বারের বাড়িতে। যেহেতু আব্দুল জব্বার শিশু মাহাফুজের সম্পর্কে নানভাই। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলেও সত্য যে বাবা মায়ের বিচ্ছেদের পর বাবা কামরুজ্জামান তার চাকুরী সুবাদে কর্মস্থল চট্টগ্রামে অবস্থান করলেও মা লিপি বেগম দ্বিতীয় বিয়ে করে স্বামীর ঘরে অবস্থান করেন।

শিশু মাহাফুজের নানা আব্দুল জব্বার নাতি মাহাফুজকে স্কুলে ভর্তি করানের সময় পিতার অগোচরে নকল জন্ম সনদ তৈরী করে, শিশু মাহাফুজের নাম পরিবর্তন করে লাবিব হাসান, বাবার নামের জায়গায় নিজের নাম আব্দুল জব্বার ও মাতার নামের জায়গায় নিজের স্ত্রী, রেনু বেগমের নাম বসিয়ে ভুয়া জন্মসনদ তৈরি করে স্কুলে ভর্তি করান। বাবা মায়ের আসল পরিচয় ও নিজের নাম পরিবর্তন করে শিশু মাহাফুজের ভবিষ্যত কর্মজীবনের কথা চিন্তা না করে সম্পূর্ণ অসৎ উপায়ে এমন কাজ করেছেন আব্দুল জব্বার।

শিশু মাহাফুজ বর্তমানে অত্র উপজেলার শিলাইকুঠি বালাবাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২য় শ্রেণীর ছাত্র। শিশু মাহাফুজের খোজ নিতে গিয়ে ঐ স্কুলে একই জন্মসনদ নাম্বারে লাবিব হাসানের ভুয়া জন্মসনদের খোজ পাওয়া যায়। প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন গত ০১/০১/২০২২ খ্রিঃ স্কুলে ছাত্রছাত্রী ভর্তির সময় আমরা যে জন্মসনদ দিয়ে লাবিব কে ভর্তি নিয়েছি তা ছিল নকল। এখন আমরা সকল ছাত্রছাত্রীর ইউনিক আইডি তৈরী করছি। আমাদের স্কুলের ছাত্র লাবিব হাসানের জন্মসনদ দিয়ে সার্চ দিলে মাহাফুজ হাসান নামে অন্য ব্যাক্তির জন্মসনদ পাওয়া যায়। আমরা লাবিবের অভিভাবক আব্দুল জব্বারকে জানিয়েছি আপনারা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ইংরেজিতে জন্ম সনদ গ্রহন করে অত্র বিদ্যালয়ে জমা দিন। কারন যে জন্ম সনদ দিয়ে লাবিব নামে ছাত্রের ভর্তি করানো হয় , তা সঠিক নয়।

জাল জন্মসনদ দিয়ে ছাত্র ভর্তি করানোর বিষয়টি শিশুর বর্তমান অভিভাবক আব্দুল জব্বারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্কুলে ভর্তি করানোর সময় প্রধান শিক্ষক অভিভাবক ছাড়া ছাত্র ভর্তি করানো যাবেনা বলেছেন, তাই আমি কম্পিউটার দোকান থেকে নাম ও বাবা- মায়ের নাম পরিবর্তন করে স্কুলে জমা দিয়েছি, সেই থেকে লাবিব স্কুলে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে।

পিতার অগোচরে সন্তানের জন্ম নিবন্ধন সনদ জাল করে কেন শিশু মাহাফুজকে ভর্তি করানো হল জানতে চাইলে আব্দুল জব্বার বলেন, এই বিষয়ে আদালত পর্যন্ত অবগত আছে।

জাল জন্ম সনদের ব্যাপারে বুড়াবুড়ি ইউপি সচিব আলোপ্তগীন মুকুল এর সাথে কথা বলা হলে তিনি বলেন, জাল জন্ম সনদের উপযুক্ত প্রমাণ মিললে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে বুড়াবুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তারেক হোসেন বলেন, আমি অভিযোগ পেয়েছি। আগামী রবিবারে বিবাদীকে নোটিশ করা হয়েছে। বাদী বিবাদীর উপস্থিতিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর জাল সনদ তৈরির ব্যাপারে কারও উপস্থিতি প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

বার্তাবাজার/এম আই