ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার পাঁচুড়িয়া ইউনিয়নের যোগিবরাট গ্রামে প্রায় ৮ বছর ধরে চলমান দুই পক্ষের দ্বন্দের অবসান হয়েছে। আর নয় সংঘাত, শান্তি চাই বলে মিলেমিশে বসবাস করার প্রতিশ্রুতি ও শপথ নিয়েছে বিবাদমনা দুই পক্ষের শত শত মানুষ।

শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার পাঁচুড়িয়া ইউনিয়নের ভেন্নাতলা বাজারে উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদুল হাসান জাহিদ, থানা অফিসার ইনচার্জ মো. আবু তাহের ও পাঁচুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এস এম মিজানুর রহমানের উদ্যোগে ওই গ্রামের বিবাদমান দুই পক্ষের মধ্যে শান্তি ও সম্প্রীতির বন্ধন সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়।

জানা গেছে, উপজেলার যোগিবরাট গ্রামে দীর্ঘ আট বছর ধরে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ সংঘাত চলে আসছিল। মাঝে মাঝেই তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ জড়িয়ে পড়তো তারা। বাড়ি ঘর ভাঙ্গচুর, লুটপাট, ফসল লুন্ঠন ছিল নিত্য দিনের ঘটনা। হামলা সংঘাত ছাড়াও দুই পক্ষের মামলা মোকদ্দমায় গ্রাম ছাড়া প্রায় ৬০টি পরিবার। শরিফুল হত্যা মামলাসহ প্রায় ৪০টি মামলা বর্তমানে চলমান।

বর্তমানে এক পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছে পাঁচুড়িয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আমিনুর রহমান আর অন্য পক্ষের নেতৃত্বে সাবেক ইউপি সদস্য এস এম হাবিবুর রহমান হবি মেম্বার, হেমায়েত শেখ, শাহীন মোল্যা প্রমুখ। দ্বন্দ্ব, সংঘাত ও বসতভিটা ছাড়া গ্রামবাসীর মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ায় এলাকাটিতে ঈদের আনন্দ বিরাজ করছে।

শান্তি ও সম্প্রতি বন্ধনসভায় বক্তব্য রাখেন, আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদুল হাসান জাহিদ, আলফাডাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ মো. আবু তাহের, পাঁচুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান সরদার, বোয়ালমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো মোশাররফ হোসেন চৌধুরী, বুড়াইচ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল ওহাব পান্নু মিয়া, বোয়ালমারী জর্জ একাডেমীর ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ইকবাল হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিয়ার রহমান, আলফাডাঙ্গা উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আহসানুদ্দৌলা রানা প্রমুখ।

একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দানকারী ইউপি সদস্য মো আমিনুর রহমান বলেন, ‘গ্রামটিতে দীর্ঘদিন ধরে চলমান সংঘাত অবসান হওয়ায় আমরা আনন্দিত। আমরা সবাই মিলেমিশে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করতে অঙ্গিকারাবদ্ধ হয়েছি। আশা করি এই সম্প্রতির বন্ধন অটুট থাকবে।’

গ্রামের বাসিন্দা শাহীন মোল্যা জানান, ‘আমরা আর বিরোধ চাই না, ‘শান্তিতে সবাই মিলে বসবাস করতে চাই। আজকের পর থেকে যোগিবরাট গ্রাম হবে শান্তি প্রতিষ্ঠায় উপজেলার মধ্যে রোল মডেল।’

পাঁচুড়িয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এস এম মিজানুর রহমান বলেন, ‘সাত আট বছর ধরে চলা বিরোধ মিটাতে একাধিকবার সালিশ বৈঠক হয়েছে। এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় উপজেলা চেয়ারম্যান, ওসি সাহেবসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বসে আজ একটি সুষ্ঠু সমাধান করে দেওয়া হয়েছে। আশা রাখি ভবিষ্যতে তারা আর দ্বন্দ্ব সংঘাতে জড়াবে না।’

আলফাডাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ মো. আবু তাহের বলেন, ‘শান্তি শৃঙ্খলা ফেরাতে যুগিবরাট গ্রামের দুই পক্ষের মধ্যে একটি সম্প্রতির বন্ধন সৃষ্টির লক্ষ্যে স্থানীয়দের নিয়ে কাজ করেছি। তারা শপথ করেছে দ্বন্দ্ব সংঘাত অবসান ঘটিয়ে শান্তি পূর্ণ ভাবে বসবাস করবে। ফের যদি কোন পক্ষ দ্বন্দ্ব সংঘাতে জড়ায় তাহলে স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত ভাবে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদুল হাসান জাহিদ বলেন, ‘আমরা সবাই শান্তি চাই। বিবাদবান দুই পক্ষকে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে।আমি আশাবাদি তারা শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রেখে মিলেমিশে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করবে।’

বার্তাবাজার/এম আই