পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় গ্রাম-গঞ্জে নামে বেনামে গড়ে উঠেছে অসংখ্য স্কুল। এই স্কুল গুলোতে নেই কোন প্রশিক্ষিত শিক্ষক। এমন কি কিন্ডার গার্টেন গুলো চলছে তাদের মন মতো। সঠিক শিক্ষা পাচ্ছে না কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। অর্থ বাণিজ্যই যেন এ সব স্কুলের মূল উদ্দেশ্য। লোভনীয় বিজ্ঞাপন অভিভাবকদের নানান কথা বলে অভিভাবকদের আকৃষ্ট করে স্কুলে ভর্তি করান। বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ যেন হুমকির মুখে, দেখার যেন কেউ নেই। তেঁতুলিয়া উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে অসংখ্য কিন্ডারগার্টেন ও নামে বেনামে এনজিওর স্কুল। অধিকাংশ কিন্ডার গার্টেন ও গ্রাম-গঞ্জের ভুয়া স্কুল গুলোতে নেই কোন প্রশিক্ষিত শিক্ষক, যার কারণে এসব স্কুল গুলোর অধিকাংশের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন আছে অনেকের।

মূলত শিক্ষাকে পণ্য বানিয়ে নানা উপায়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করাই এই সব কিন্ডার গার্টেন ও এনজিওর নামে বেনামের ভূয়া স্কুল গুলোর মূল উদ্দেশ্য। শিক্ষাকে ব্যবসা হিসেবে বেছে নেয়া এসব স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও শিক্ষকদের অর্থ বাণিজ্যে দিশেহারা হয়ে পরেছে ছাত্রছাত্রী ও অভিবাবকরা। কোন সরকারি স্কুলের ২ কিলোমিটারের মধ্যে অন্য কোন স্কুল প্রতিষ্ঠার নিয়ম না থাকলেও, একাধিক কিন্ডারগার্টেন গ্রাম গঞ্জে নামে বেনামের গড়ে উঠেছে প্রায় শতাধিক স্কুল। এসব কিন্ডার গার্টেন ভুয়া এনজিওর নামে চলছে তাদের নিজস্ব মনগড়া নিয়ম অনুযায়ী। সরকারী অনুমোদন না থাকায় মানহীন এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে বিপাকে পড়েছে তেঁতুলিয়াবাসী। কোন প্রকার নিয়ম নীতি না থাকায়, বাসা বাড়িতে কয়েকটি অল্প পরিসরে রুম ভাড়া নিয়েই গড়ে উঠেছে এই সব স্কুল। অভিভাবকরা এসব স্কুলে শিক্ষার্থীদের পিছনে হাজার হাজার টাকা ব্যয় করলেও অনেক কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে না সঠিক শিক্ষা। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সচেতন মহল।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, এসব স্কুলের শিক্ষকরা অধিকাংশ এসএসসি পাশ। কিন্ডার গার্টেন মালিকরা শিক্ষকদের নামমাত্র সম্মানী দিচ্ছেন। ফলে এসব শিক্ষকরা বাধ্য হয়ে প্রাইভেট পড়ান। অনেক অভিভাবক অভিযোগ করেন, যে সকল ছাত্র ছাত্রীরা এদের কাছে প্রাইভেট পড়ে তারা প্রতিটা পরীক্ষায়ই ভালো নাম্বার পায়। যারা প্রাইভেট পড়ে না, তারা ভালো লেখা পড়া টাকায়। শুধু তাই নয় ব্র্যাকের নাম ভাঙিয়ে অসংখ্য স্কুল রয়েছে তেঁতুলিয়ায়। বেশ কয়েকটি স্কুলে পরিদর্শনে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে স্কুলের নাম জানতে চাইলে শিক্ষার্থীরা ব্র্যাকের নাম বলেন। কিন্তু ব্র্যাক আজ থেকে প্রায় ৩ থেকে ৪ বছর আগে ব্র্যাকের স্কুল প্রোগ্রাম বন্ধ হয়ে যায়।

নাম বলতে অনিচ্ছুক ব্র্যাকের বাহিরের জেলায় কর্মরত শিক্ষা প্রোগ্রামের এক কর্মী বেশ কিছু স্কুল পরিচালনা করেন। তার প্রমাণসহ মিলেছে। উপজেলার শালবাহান রোড, যুগীগছ, ফকির পাড়া, হুলাসুজোত, সন্যাসিপাড়া, ফুটকিবাড়ী, বাংলাবান্ধা, তিরনইহাট, মন্ডলপাড়া,কাশিমগঞ্জ, কালান্দীগছ,ঝাড়ুয়াপাড়া, বাংলাবান্ধাসহ প্রায় শতাধিক স্কুল রয়েছে এই উপজেলায়। এসব স্কুল থেকে প্রতি মাসে ২৫০ টাকা নিয়ে থাকে শিক্ষার্থীর কাছে। এই সব ভুয়া স্কুল বন্ধের জন্য সচেতন মহলরা দাবি তুলে ধরেন। ওই স্কুলের শিক্ষার্থীর বই কথায় থেকে
পান, এমন কথা জিজ্ঞেস করা হলে তারা বলেন। উপজেলা থেকে নিয়ে থাকি। কোন উপজেলা থেকে বই নিয়ে আসেন, এমন কথা জিজ্ঞাসা, তারা ওই স্থান ত্যাগ করে।

এ বিষয়ে সিপাইপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, আমার পাশেই ৩ থেকে ৪ টি স্কুল রয়েছে। কিন্তু কোন নামে স্কুল গুলো চলে, আমার অজানা। এই স্কুল বন্ধ করার জন্য বহু পদক্ষেপ নিলেও কোন কাজ হয়নি। আমার স্কুল থেকে প্রতি বছরই ভালো রেজাল্ট হয়ে থাকে। কোন দুঃখে টাকা দিয়ে তারা বাচ্চাকে পড়াই। ওই স্কুল গুলো পঞ্চম
শ্রেণির সমাপনির সার্টিফিকেট দিতে পারবে না। তার পরেও কেন এই স্কুল গুলোতে পড়াই অভিভাবকরা। ওই এলাকার এক শিক্ষার্থীর অভিভাবককে স্কুল বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা

তিনি বলেন, আমি জানি ওই স্কুলটি ব্র্যাক স্কুল। কিন্তু তেঁতুলিয়ায় যে, ব্র্যাক স্কুল বন্ধ রয়েছে, তা ওনার অজানা। নিজের ইচ্ছে মতো প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে, স্কুল পরিচালনা করে আসিতেছেন। একদিকে সরকার শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য নানান কর্মসূচি গ্রহণ করছে। অন্যদিকে নামে বেনামে অলিতে গলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা কিন্ডার গার্টেন স্কুল গ্রাম- গঞ্জের ভুয়া স্কুল গুলো কোমলমতি বাচ্চাদের শিক্ষার ভবিষ্যৎ শুরুতেই হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। দেখার যেন কেউ নেই।

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোঃ আসলাম বলেন, এই স্কুল বন্ধ করা ফরয হয়ে গেছে। আমরা শিক্ষকরা সবাই সম্মিলিতভাবে একজোট হলে স্কুল গুলো বন্ধ করা যাবে। তাই অতি শিঘ্রই এটার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, নিবন্ধিত কির্ন্ডার গার্টেন বাদে, যেসব স্কুল এই উপজেলার গ্রাম-গঞ্জে নামে-বেনামে রয়েছে ওই সব স্কুল শিক্ষিকা পিওদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোন এনজিও থেকে থাকলেও তারাও আমাদের কাছে কোন অনুমতি নেননি। তাই তাদেরও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বার্তাবাজার/এম আই