সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা সদরে অবস্থিত পাইলট গার্লস হাইস্কুলের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি সুকুমার দাশের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া প্রায় সময়ই স্কুলে অনুপস্থিত থাকাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের সহায়তায় ওই কর্মচারি এমন কার্যক্রম দিনের পর দিন চালিয়ে যাচ্ছেন বলে মনে করছেন অভিভাবক ও স্থানীয় সচেতন মহল।

সরেজমিন জানা গেছে, কালিগঞ্জ পাইলট গার্লস স্কুলের কারিগরি শাখার ল্যাবশপ ট্রেডের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি সুকুমার দাশ বাচ্চু প্রায় সময়ই স্কুলে অনুপস্থিত থাকেন। তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ চলছে বছরের পর বছর। সরকারি বিধি বিধান অনুযায়ী নিয়মিত দায়িত্ব পালন না করেই বেতন ভাতা উত্তোলন করেন তিনি। এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার (১০ জুলাই) গণমাধ্যম কর্মীরা স্কুলে যেয়ে সুকুমার দাশ বাচ্চুকে স্কুলে অনুপস্থিত দেখতে পান। ছুটি না নিয়েই সুকুমার দাশ বাচ্চু স্কুলে অনুপস্থিত রয়েছেন বলে জানান পাইলট গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ বাছাড়। গণমাধ্যম কর্মীদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি সুকুমার দাশ বাচ্চু ইচ্ছামাফিক স্কুলে আসেন, ইচ্ছামাফিক অনুপস্থিত থাকেন। আবার মাঝে মাঝে স্কুলে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যান। তার বিরুদ্ধে কেন প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না সে ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বিষয়টি এড়িয়ে যান।

এলাকাবাসী জানান, সুকুমার দাশ বাচ্চু কাগজে কলমে চাকুরি করেন, দায়িত্ব পালন করেন না। স্কুল চলাকালীন সময়ে তিনি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ান। তাছাড়া সুকুমার দাশ বাচ্চু ভোমার স্থলবন্দরে আমদানি রপ্তানী ব্যবসা করেন। ভোমরা বন্দরে আমদানি-রপ্তানিকারক এ্যাসোসিয়েশন যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে বহুল আলোচিত পেয়াজ সিন্ডিকেটের সাথে জড়িয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে সুকুমার দাশ বাচ্চুর বিরুদ্ধে দুদক তদন্ত করেছে জানিয়ে তারা আরও বলেন, সুকুমার দাশ বাচ্চু বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতেরও নাগরিক। তিনি চাকুরি ও ব্যবসার সুবাদে বাংলাদেশে বসবাস করলেও তার স্ত্রী ও দুই মেয়ে স্থায়ীভাবে ভারতে বসবাস করেন। তিনি বড় মেয়েকে ভারতে বিয়ে দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্তপূর্বক যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এলাকাসী ও সচেতন মহল প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুকুমার দাশ বাচ্চু বলেন, মামলা সংক্রান্ত কাজে আমি সাতক্ষীরা জজকোর্টে গিয়েছিলাম এজন্য স্কুলে আসতে পারিনি। তবে ছুটি না নিয়েই কোর্টে গিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেন তিনি। এক্সপোর্ট ইমপোর্টের ব্যবসা এবং ভারতের নাগরিকত্ব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দেন নি।

পাইলট গার্লস হাইস্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি গাজী জাহাঙ্গীর কবির বলেন, সবসময় স্কুলে যেয়ে খোঁজখবর নেয়া সম্ভব হয় না। তবে স্কুল চলাকালীন সময়ে সুকুমার দাশ বাচ্চুকে বাইরে ঘুরতে দেখেছি। কিন্তু এ ব্যাপারে স্কুলের স্টাফ বা অন্য কেউ আমার কাছে কখনও অভিযোগ দেয়নি। ভারতীয় নাগরিক কিনা সে ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার বড় মেয়ে ভারতে বিয়ে হয়েছে বলে শুনেছি, কিন্তু সুকুমার দাশ বাচ্চু ভারতের নাগরিক কিনা সে ব্যাপারে আমার জানা নেই।

এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবুল কালাম আজাদ বলেন, পাইলট গার্লস স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি সুকুমার দাশ বাচ্চুর অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ আগেও শুনেছি তবে কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। নিয়ম অনুযায়ী এসব বিষয় দেখার দায়িত্ব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির। তারপরও বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখছি।

বার্তাবাজার/রাহা