ঘনিয়ে এসেছে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। দেশের অন্যান্য এলাকার মতো কক্সবাজারের চারটি আসনে নির্বাচনী হাওয়া লেগেছে। ইতোমধ্যে দলীয় ও সাধারণ মানুষের মধ্যে চলছে নির্বাচনী মনোনয়ন নিয়ে জল্পনা-কল্পনা। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টির অন্তত দুই ডজনের বেশী সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা জেলার ৪টি পৌরসভা ও ৭১টি ইউনিয়নে ভোটারদের সাথে কৌশলে সম্পর্ক বাড়াচ্ছেন। এদের অনেকের পোস্টার ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

কক্সবাজারে মোট চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে সীমান্তবর্তী আসন কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ)। এই আসনের দুই উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় তিন লাখের বেশি। আলোচিত ও সমালোচিত এই আসনটি ঘিরে স্থানীয়দের মাঝে এক ধরনের বিশ্বাসের প্রচলন রয়েছে- ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম সংসদ নির্বাচন থেকে সর্বশেষ ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই আসনে যে দলের এমপি নির্বাচিত হয়েছে সে দলই সরকার গঠন করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, কক্সবাজার-৪ আসনে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে মনোনয়ন প্রত্যাশী সম্ভাব্য যেসব প্রার্থীদের নাম শুনা যাচ্ছে তারা হলেন- আওয়ামীলীগের দুই বারের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি, তার সহধর্মিনী বর্তমান সাংসদ শাহীন বদি, টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল বশর, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব শফিউল আলম ও অধ্যাপক হামিদুল হক চৌধুরী।

বিএনপি থেকে কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী, তার ছোট ভাই ও উখিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি সরওয়ার জাহান চৌধুরী ও জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক মো. আব্দুল্লাহ।

জাতীয় পার্টি থেকে কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক নুরুল আমিন সিকদার ভুট্টো। এছাড়াও জামায়াতের সাবেক আমির মুহাম্মদ শাহজাহান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজালাল চৌধুরী, হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও জেলা জামায়েতের আমীর নুর আহমদ আনোয়ারী।

অন্যান্য দলের নেতারা তাদের দলীয় কোন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম জানাতে পারেনি। তবে পরিস্থিতি সাপেক্ষে কেন্দ্রের নির্দেশ পেলে প্রার্থীতা করবেন বলে জানান।

সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানাগেছে, নির্বাচন সামনে এলে অনেক নেতার দেখা মেলে। দুঃসময়ে বদি ছাড়া কারো দেখা মেলেনা। কিন্তু গত ১৬ মে ঘূর্ণিঝড় মোখার আগে এবং পরে এমপি বদি যেভাবে সাধারণ মানুষের কাছে সাহায্য সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন অন্য কোন নেতারা খোঁজ খবর নিতেও যায়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের বেশ ক’জন প্রভাবশালী নেতা-কর্মীরা জানান, বিগত ২০০৯ সাল পরবর্তী বদি টানা দুই বার এমপি থাকাকালীন তিনি প্রান্তিক সাধারণ মানুষের মাঝে নিরাপদ আস্থা তৈরী করতে সক্ষম হয়েছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে মামলা সংক্রান্ত জঠিলতার কারনে নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে না পারলেও মনোনয়ন পেয়েছিলেন তার সহধর্মিণী শাহীন বদি। ওই সময় দলীয় ভোটের পাশাপাশি সেই ভোট ব্যাংক কাজে লাগিয়ে ২০১৮ সালে তার সহধর্মীনী শাহীন বদি এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।

তারা আরো বলেন, এবারে মূলত আওয়ামীলীগে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে একটি গ্রুপ মনোনয়ন প্রত্যাশার নাম করে বদিকে ঠেকানোর জন্য মাঠে নেমেছেন। যদিও দলীয় লোকজন ছাড়া সাধারন মানুষের সাথে কাছে তাদের পরিচিতি তেমন একটা নেই। এভাবে দলের ভেতর টানাপোড়নে যদি মনোনয়ন থেকে বদি বা তার সহধর্মিণী শাহীন বদি ছিটকে পড়ে গেলে এই আসনে নৌকা নিয়ে শংকা থেকে যায়।

অপরদিকে বিএনপির নেতা কর্মীদের মতে, যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশ গ্রহন করলে তারা চাইছে শাহ জাহান চৌধুরীকে মনোনয়ন নিশ্চিত করে এবারে হারানো আসন পুনরুদ্ধার করতে।