জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) কর্মকর্তা পদে যুব মহিলা লীগের এক নেত্রীকে নিয়োগ দিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ‘চাপ’ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন মন্ত্রী ও উপমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে কয়েকদফা ফোন দিয়ে ‘চাপ’ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এর প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের খোদ আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যপন্থি শিক্ষকেরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান যুব মহিলা লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক আকলিমা আক্তার এশাকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য পানিসম্পদ উপমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীমকে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে একাধিকবার ফোন করেছেন। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীও ফোন দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন উপাচার্যপন্থি শিক্ষকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তা পদে আকলিমা আক্তার এশাকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য অনেক আগে থেকেই মন্ত্রীরা চাপ দিচ্ছেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে এশাকে নিয়োগ দিতে চাপ প্রয়োগ করেন। তবে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের একজন শিক্ষকের ছেলেকে নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকায় এশার বিষয়টি চাপা পড়ে। তবে আবারো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের (প্রশাসন) একান্ত সচিব হিসেবে এশাকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা শুরু করেছেন মন্ত্রীরা। ইতিমধ্যে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ প্রশাসনপন্থি কয়েকজন শিক্ষককে একাধিকবার ফোন দিয়ে এশাকে নিয়োগ দিতে বলেছেন।

এদিকে আকলিমা আক্তার এশার বিরুদ্ধে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন ও ছাত্র রাজনীতিকে বিতর্কিত করাসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এশার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নের দায়ে অভিযুক্ত পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনির সঙ্গেও অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগ রয়েছে। সে সংক্রান্ত কিছু স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হয়।

এছাড়া এশার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে ইপিজেডসহ কয়েকটি আবাসিক প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। তাই এশাকে নিয়োগ দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুন্ন হবে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।

রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপ-উপাচার্যের (প্রশাসন) একান্ত সচিব পদে নিয়োগের জন্য ১২৯ জন প্রার্থী আবেদন করেছেন।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে উপাচার্যপন্থি একাধিক শিক্ষক বলেন, ‘আকলিমা আক্তার এশাকে নিয়োগ দিতে উপাচার্যকে বিভিন্নভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে। তবে এশার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুন্ন হয়- এমন কাজে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তাই আমরা চাচ্ছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে একজন যোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে। যদিও মন্ত্রীদের চাপের কারণে উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে।’

অভিযোগ অস্বীকার অভিযুক্ত আকলিমা আক্তার এশা বলেন, আমি যেহেতু এখানে রাজনীতি করেছি তাই প্রথম যখন বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে তখন নিজের থেকে চেষ্টা করেছি কিন্তু কোনো মন্ত্রী-উপমন্ত্রীকে দিয়ে ফোন দেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমকে একাধিকবার কল করেও মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি।

 

সংবাদটির পরিপ্রেক্ষিতে প্রকাশিত প্রতিবাদ

 

বার্তাবাজার/এম আই